ব্যক্তির দায়দায়িত্ব প্রজাতন্ত্র নেবে কেন? by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ প্রদানের নিমিত্তে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছিল, তা বিশ্বব্যাংক বাতিল করেছে। বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। বাতিল করার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে এই সেতু প্রকল্পকে কেন্দ্র করে যেসব ব্যক্তি দুর্নীতি করছে তাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের আহ্বান সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এখানে উল্লেখ্য, আরো কয়েকটি দাতা সংস্থা ঋণ প্রদানে চুক্তি সই করছিল। যেহেতু এটি একটি সমর্থিত প্রকল্প, তাই অন্যরাও আর চুক্তির শর্ত পালন করবে না; অর্র্থাৎ ঋণ দেবে না প্রযুক্তি তথা ডিজিটালাইজড প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা টিভিতে দেখলাম, দোতলা সেতু, তীব্র বেগে রেলগাড়ি ও মোটরযান ছুটে যাচ্ছে। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এ দৃশ্য দেখতে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষ আরো আনন্দ পেয়েছে নিশ্চয়ই। যেমন আমরা আপ্লুত হই যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু দেখে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল এই পদ্মা সেতু। তাই সরকারকে নতুনভাবে অর্থের সংস্থান করতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে মনে হয় না। কতটা রাজনৈতিক ক্ষতি যে সরকারের হয়েছে, তা বুঝতে কারো বাকি নেই। দেশের ইমেজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্নিহিত কোনো কারণ থাক না থাক, বহির্বিশ্ব তা দেখবে না।
তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছবে যে কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে এত বড় একটা প্রকল্পের সাহায্য বাতিল করা হয়েছে।
একটা পুরনো রোগ সরকারের ঘাড়ে চেপে রয়েছে। যেটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। ইংরেজ থেকে পাকিস্তানি, সেখান থেকে বাংলাদেশিদের শাসন এলো; কিন্তু রোগমুক্তি ঘটেনি। ইংরেজরা ছিল ভিনদেশি, ভারত তাদের কলোনি। ইংরেজরা প্রভু হিসেবে শাসন করতে এসেছিল। তাদের কর্মকর্তারা কোনো ভুল করতে পারে না, অন্যায় করতে পারে না। নেটিভদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করলে দোষের কী? পাকিস্তানিরা অনেকটা সেই মানসিকতা নিয়ে শাসন তথা শোষণ চালিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ? এটি তো ৩০ লাখ শহীদের জীবন আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তাই তো শহীদের রক্তস্নাত সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। এ অবস্থায় কিছু ব্যক্তির অপকর্ম বা দুর্নীতি এমনকি দুর্নীতির অভিযোগের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব কেন প্রজাতন্ত্র নেবে? আমরা সব সময় লক্ষ করে এসেছি, কিছু সরকারি কর্মকর্তার অপকর্মের দায়িত্ব সরকার নিয়ে এক নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
প্রায় দেড় যুগ আগে দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ল। কয়েকজন নরপিশাচ পুলিশের লালসার শিকার হয়ে কিশোরী ইয়াসমিন প্রাণ হারাল। সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলে ঘটনার পরিসমাপ্তি হতো। তা হলো না। সরকার প্রথম এটি গোটা পুলিশ বিভাগের ওপর অভিযোগ মনে করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করল। পরে গণ-আন্দোলনের চাপে সরকার সোজা রাস্তায় এলো। এ রকম ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে- এ অভিযোগ বহু আগেই বিশ্বব্যাংক করেছে। এদিকে কানাডীয় একটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে জড়িত, এ রকম একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডীয় পুলিশ তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল। ইতিমধ্যে কানাডীয় পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এখন বিষয়টি আন্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি সমধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হতো। যেসব আমলার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাদের তৎক্ষণাৎ অপসারণ করা প্রয়োজন ছিল। জনগণের তথা প্রজাতন্ত্রের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হতো ব্যক্তির ওপর। তৎকালীন মন্ত্রীর উচিত ছিল সরে যাওয়া। যাঁরা জননেতা হতে চান, তাঁদের একটু লজ্জা-শরমও থাকা উচিত, সেই সঙ্গে আত্মসম্মানবোধ। ভারতের বিজেপি নেতা এল কে আদভানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্ভবত হাওয়ালা কেসের। আদভানি স্বেচ্ছা-নির্বাসনে গেলেন। তিনি বললেন, তদন্তে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত না হন, তাহলে রাজনীতিতে ফিরবেন না। তদন্তকালে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছিলেন। বলা বাহুল্য, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন। এর পরও অবশ্য ভারতে মন্ত্রীপর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তদন্ত হচ্ছে, মন্ত্রিত্ব চলে যাচ্ছে বা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের এখানে সরকার পরিবর্তন না হলে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয় না। তখন আবার আরেকটা স্লোগান তোলা হয়, তা হলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা।
একজন রাজনীতিক ব্যক্তিগতভাবে কী করলেন-না করলেন, তাতে কিছু আসে-যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আরো কঠোর এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে এবং সরকারের অবদান- সব কিছু সংসদের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। এত বড় একটা জনস্বার্থের প্রকল্প; সর্বোপরি রাষ্ট্রের ইমেজের প্রশ্নও জড়িত। বাংলাদেশের জনপ্রশাসন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বলা হয় যে বাজেটে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, আসলে কিন্তু শিক্ষার অবস্থান তৃতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে জনপ্রশাসন, দ্বিতীয় অবস্থান ঋণের সুদ পরিশোধ। সেই জনপ্রশাসনের দক্ষতা কী, তা তো অহরহ দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যখন আমলাদের সম্মেলন হয়, সেখানে জনকল্যাণের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কমই আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু কত বেশি দামের গাড়ি দেওয়া দরকার বা অন্যান্য কত রকমের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যায় ইত্যাদি। এর ফলে আজ বাজেটে জনপ্রশাসনের ব্যয়ভার এক নম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পরও যদি তাদের কাছ থেকে নূ্যনতম সততা ও দক্ষতা না পাওয়া যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে যেকোনো গাফিলতি এবং অসততার জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে কি? এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে যেসব আমলার নাম বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এসেছিল, তা সংসদে জানিয়ে দেওয়া এবং একই সঙ্গে কমপক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তা না করে সেখান থেকে সরিয়ে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা মোটেও ঠিক নয়।
আর একটি প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ বিষয়টিকে অবনতি থেকে বাঁচাতে পারত, তা হলো দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয় পদক্ষেপ। দুদক মাঝেমধ্যে মিডিয়ার সামনে কেতাবি ঢঙে বড় বড় কথা বলে। আসলে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সমস্যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বোধ হয় আরেকটা উপলব্ধি এনে দিয়েছে, তা হলো শেয়ারবাজার থেকে টাকা আসে না কোনো প্রকল্পের জন্য। এ কথা এ জন্য আজ বলতে হচ্ছে যে বর্তমান সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্টক এক্সচেঞ্জের এই এত দহরম এবং আমাদের এ রকম একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হলো যে শেয়ারবাজার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা আসছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য। এখন বোধ হয় স্পষ্ট হয়েছে, পুঁজিবাজার তথা শেয়ারবাজারের কী ভূমিকা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তহবিল সরবরাহ প্রসঙ্গে।
এত কিছু ঘটার পরও আমরা মনে করি যে দৃঢ় পদক্ষেপ ও উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে সক্ষম হবে এবং প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার অর্থ সাহায্য পেতে কোনো সমস্যা হবে না। কেননা পদ্মা সেতুর মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ কোনো অবস্থায়ই বিদেশি কম্পানির হাতে দেওয়া যায় না।
লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল এই পদ্মা সেতু। তাই সরকারকে নতুনভাবে অর্থের সংস্থান করতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে মনে হয় না। কতটা রাজনৈতিক ক্ষতি যে সরকারের হয়েছে, তা বুঝতে কারো বাকি নেই। দেশের ইমেজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্নিহিত কোনো কারণ থাক না থাক, বহির্বিশ্ব তা দেখবে না।
তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছবে যে কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে এত বড় একটা প্রকল্পের সাহায্য বাতিল করা হয়েছে।
একটা পুরনো রোগ সরকারের ঘাড়ে চেপে রয়েছে। যেটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। ইংরেজ থেকে পাকিস্তানি, সেখান থেকে বাংলাদেশিদের শাসন এলো; কিন্তু রোগমুক্তি ঘটেনি। ইংরেজরা ছিল ভিনদেশি, ভারত তাদের কলোনি। ইংরেজরা প্রভু হিসেবে শাসন করতে এসেছিল। তাদের কর্মকর্তারা কোনো ভুল করতে পারে না, অন্যায় করতে পারে না। নেটিভদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করলে দোষের কী? পাকিস্তানিরা অনেকটা সেই মানসিকতা নিয়ে শাসন তথা শোষণ চালিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ? এটি তো ৩০ লাখ শহীদের জীবন আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তাই তো শহীদের রক্তস্নাত সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। এ অবস্থায় কিছু ব্যক্তির অপকর্ম বা দুর্নীতি এমনকি দুর্নীতির অভিযোগের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব কেন প্রজাতন্ত্র নেবে? আমরা সব সময় লক্ষ করে এসেছি, কিছু সরকারি কর্মকর্তার অপকর্মের দায়িত্ব সরকার নিয়ে এক নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
প্রায় দেড় যুগ আগে দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ল। কয়েকজন নরপিশাচ পুলিশের লালসার শিকার হয়ে কিশোরী ইয়াসমিন প্রাণ হারাল। সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলে ঘটনার পরিসমাপ্তি হতো। তা হলো না। সরকার প্রথম এটি গোটা পুলিশ বিভাগের ওপর অভিযোগ মনে করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করল। পরে গণ-আন্দোলনের চাপে সরকার সোজা রাস্তায় এলো। এ রকম ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে- এ অভিযোগ বহু আগেই বিশ্বব্যাংক করেছে। এদিকে কানাডীয় একটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে জড়িত, এ রকম একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডীয় পুলিশ তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল। ইতিমধ্যে কানাডীয় পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এখন বিষয়টি আন্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি সমধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হতো। যেসব আমলার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাদের তৎক্ষণাৎ অপসারণ করা প্রয়োজন ছিল। জনগণের তথা প্রজাতন্ত্রের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হতো ব্যক্তির ওপর। তৎকালীন মন্ত্রীর উচিত ছিল সরে যাওয়া। যাঁরা জননেতা হতে চান, তাঁদের একটু লজ্জা-শরমও থাকা উচিত, সেই সঙ্গে আত্মসম্মানবোধ। ভারতের বিজেপি নেতা এল কে আদভানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্ভবত হাওয়ালা কেসের। আদভানি স্বেচ্ছা-নির্বাসনে গেলেন। তিনি বললেন, তদন্তে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত না হন, তাহলে রাজনীতিতে ফিরবেন না। তদন্তকালে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছিলেন। বলা বাহুল্য, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন। এর পরও অবশ্য ভারতে মন্ত্রীপর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তদন্ত হচ্ছে, মন্ত্রিত্ব চলে যাচ্ছে বা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের এখানে সরকার পরিবর্তন না হলে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয় না। তখন আবার আরেকটা স্লোগান তোলা হয়, তা হলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা।
একজন রাজনীতিক ব্যক্তিগতভাবে কী করলেন-না করলেন, তাতে কিছু আসে-যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আরো কঠোর এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে এবং সরকারের অবদান- সব কিছু সংসদের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। এত বড় একটা জনস্বার্থের প্রকল্প; সর্বোপরি রাষ্ট্রের ইমেজের প্রশ্নও জড়িত। বাংলাদেশের জনপ্রশাসন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বলা হয় যে বাজেটে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, আসলে কিন্তু শিক্ষার অবস্থান তৃতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে জনপ্রশাসন, দ্বিতীয় অবস্থান ঋণের সুদ পরিশোধ। সেই জনপ্রশাসনের দক্ষতা কী, তা তো অহরহ দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যখন আমলাদের সম্মেলন হয়, সেখানে জনকল্যাণের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কমই আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু কত বেশি দামের গাড়ি দেওয়া দরকার বা অন্যান্য কত রকমের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যায় ইত্যাদি। এর ফলে আজ বাজেটে জনপ্রশাসনের ব্যয়ভার এক নম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পরও যদি তাদের কাছ থেকে নূ্যনতম সততা ও দক্ষতা না পাওয়া যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে যেকোনো গাফিলতি এবং অসততার জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে কি? এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে যেসব আমলার নাম বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এসেছিল, তা সংসদে জানিয়ে দেওয়া এবং একই সঙ্গে কমপক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তা না করে সেখান থেকে সরিয়ে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা মোটেও ঠিক নয়।
আর একটি প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ বিষয়টিকে অবনতি থেকে বাঁচাতে পারত, তা হলো দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয় পদক্ষেপ। দুদক মাঝেমধ্যে মিডিয়ার সামনে কেতাবি ঢঙে বড় বড় কথা বলে। আসলে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সমস্যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বোধ হয় আরেকটা উপলব্ধি এনে দিয়েছে, তা হলো শেয়ারবাজার থেকে টাকা আসে না কোনো প্রকল্পের জন্য। এ কথা এ জন্য আজ বলতে হচ্ছে যে বর্তমান সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্টক এক্সচেঞ্জের এই এত দহরম এবং আমাদের এ রকম একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হলো যে শেয়ারবাজার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা আসছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য। এখন বোধ হয় স্পষ্ট হয়েছে, পুঁজিবাজার তথা শেয়ারবাজারের কী ভূমিকা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তহবিল সরবরাহ প্রসঙ্গে।
এত কিছু ঘটার পরও আমরা মনে করি যে দৃঢ় পদক্ষেপ ও উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে সক্ষম হবে এবং প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার অর্থ সাহায্য পেতে কোনো সমস্যা হবে না। কেননা পদ্মা সেতুর মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ কোনো অবস্থায়ই বিদেশি কম্পানির হাতে দেওয়া যায় না।
লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
No comments