উপকূলীয় বাঁধ-শক্ত ও সবুজ হয়ে উঠুক
প্লাবন থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে গড়ে তোলা বাঁধ নেটওয়ার্কটি কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে বুধবার সমকালে প্রকাশিত আলোকচিত্রেই তা স্পষ্ট। একই দিনে সমকালের বিশেষ আয়োজনে বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল এলাকার যেসব বাঁধ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাট বেড়িবাঁধ থেকে ভিন্ন নয়।
অমাবস্যার জোয়ার এবং ঝড়ো বৃষ্টিতেই এভাবে ছিন্নভিন্ন হলে এগুলো জলোচ্ছ্বাসের সময় জানমাল রক্ষায় কতটা সক্ষম হবে বলাবাহুল্য। জলোচ্ছ্বাসপ্রধান ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় এর নজির আমরা দেখেছি। ঘূর্ণিঝড় সিডরের তুলনায় আইলার বিরূপ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে বাঁধগুলোর অকার্যকারিতাও একটি কারণ। বস্তুত উপকূল বিস্তৃত বাঁধ ব্যবস্থাকে যদি আমরা সুরক্ষিত করতে না পারি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংখ্যা ও উচ্চতায় ক্রমবর্ধমান জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার জীবন ও জীবিকা নিরাপদ রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা আশা করি, সমকালের প্রতিবেদনগুচ্ছে যেসব দীর্ঘসূত্রতার কথা বলা হয়েছে, তা দূর করতে সরকার আরও উদ্যোগী হবে। অস্বীকার করা যাবে না যে, এই কাজ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক ও কারিগরি অর্থে কঠিনই বটে। গত মার্চেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে স্বীকার করে বলেছেন যে বাঁধ সংস্কার দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ জয় করতে হবে আমাদের। বাঁধ সংস্কার, পুনর্নির্মাণ ও নতুন নির্মাণ এবং উচ্চতা বৃদ্ধির কাজে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তার সংস্থানে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করতে বলব আমরা। ইতিমধ্যে দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে বরাদ্দ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। বাঁধ সংস্কারে অদক্ষতা ও অবহেলার কিছু অভিযোগ কিন্তু সমকালের প্রতিবেদনগুলোতেই রয়েছে। কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে নিশ্চয়ই। বেশি জোর দিতে হবে বিদ্যমান বাঁধের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে। চিংড়ি ঘেরে পানি টেনে আনাসহ নানা অপতৎপরতায় ইতিমধ্যে যে ক্ষতিসাধন হয়েছে, তা আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। বাঁধ সংরক্ষণে সবুজ বেষ্টনীর প্রয়োজনীয়তাও কোথাও কোথাও যেভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে, তা আত্মঘাতী ছাড়া কিছু নয়। মহেশখালী ও হরিণখোলা_ দুই এলাকার বাঁধেই সবুজের চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না! আমরা চাই বিলম্বে হলেও উপকূলীয় বেষ্টনী শক্ত ও সবুজ হয়ে উঠুক। নিরাপদ হোক উপকূলীয় অঞ্চল।
No comments