অবশেষে ধরা দিল 'ঈশ্বর কণা by চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম
মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্বটা শেষ পর্যন্ত টিকে গেল। একই সঙ্গে প্রমাণিত হলো আইনস্টাইনই ঠিক। কারণ মহাবিশ্ব সৃষ্টি বিষয়ে প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের 'স্ট্যান্ডার্ড মডেল'টি গড়েই উঠেছে এই মহাবিজ্ঞানীর দেওয়া তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু সামান্য একটু কারণে প্রায় বাতিলের খাতায় চলে যাচ্ছিল এই মডেল।
যদি তা-ই হতো, তাহলে মহাবিশ্ব তথা সমগ্র সৃষ্টিকর্মের রহস্য সন্ধানে ফের নতুন করে নেমে পড়তে হতো বিজ্ঞানীকুলকে। কারণ এ তো রীতিমতো অস্তিত্বের প্রশ্ন। সৃষ্টি জগতের সবটাই চোখের সামনে, কিন্তু তার ব্যাখ্যাতে রয়ে গিয়েছিল গলদ। বাস্তব জগৎ মানলে তার সৃষ্টি রহস্যটাও তো জানা প্রয়োজন। ঠিক এই জায়গাতে এসেই আটকে গিয়েছিল মানুষ। মাত্র একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার অনুপস্থিতিতে পুরো স্ট্যান্ডার্ড মডেল কেঁচে যাচ্ছিল। অবশেষে স্বস্তি। স্রেফ অনুমাননির্ভর সেই কণাটি আজ বাস্তব- যার নাম হিগস বোসন।
বিজ্ঞানীরা বুধবার ঘোষণা করলেন- হ্যাঁ, ওই মিসিং পার্টিক্যালসটি তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। 'ঈশ্বর কণা' নামে পরিচিত এই দুর্লভ কণাটির সন্ধান পেয়েছেন ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্নের বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে মাটির বেশ গভীরে তৈরি লার্জ হ্যাড্রন কলাইভারের মধ্যে মিনি বিগ ব্যাং ঘটিয়ে এই ঈশ্বর কণাকে শেষ পর্যন্ত সৃষ্টি করা গেল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা ৯৯.৯৯৯ ভাগ নিশ্চিত এটা সেই রহস্য কণাই।
সৃষ্টির জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ হিগস বোসন?
১৯৭০-এর দশকে সৃষ্টিতত্ত্ববিষয়ক স্ট্যান্ডার্ড মডেলটি তৈরি হয়। সেখানে বলা হয়, গোটা মহাবিশ্ব সমেত আমরা, মানে সবার সৃষ্টির মূলে আছে ১২টি মৌলিক কণা। এদের থেকেই সব বস্তুর সৃষ্টি। এই ১২টি কণার আবার দুটি গ্রুপ আছে- ছয়টা কণা মিলে লেপটনস, বাকি ছয়টা মিলে কোয়ার্কস গ্রুপ। এসব কণার নামগুলোও বাহারি- স্ট্রেঞ্জ, আপ, ডাউন, টাউ, বটম, চার্ম।
বিগ ব্যাং মহাবিস্ফোরণের সময় এসব কণার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বড় ধাঁধা হলো এসব কণার নিজস্ব কোনো ভর বা মাস নেই। আর ভর না থাকা মানে এরা কখনো স্থির হবে না। আলোর কণার মতো এরা অবিরত ছুটতে থাকবে। তারা কখনো জমাট বাঁধবে না। মানে ম্যাটার বা পদার্থ সৃষ্টি হবে না। তাহলে রহস্যটা কী? শুরু হয় খোঁজ। বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি জগতে থাকা সব মৌলিক কণা খুঁজতে থাকেন। একে একে ১১টি মৌলিক কণার সন্ধান মিলল। খোঁজ পাওয়া গেল বিভিন্ন বলেরও। কিন্তু ভর সৃষ্টি হওয়ার রহস্য উন্মোচন হলো না। ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগসের মাথায় একটি ধারণা জন্মাল। তিনি জানালেন, সৃষ্টি জগতে আরেক ধরনের কণা না থেকেই পারে না- যারা মহাবিশ্বে ভর সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে শুরু হয় জোরদার গবেষণা। পিটার হিগসের সঙ্গে যোগ দেন বেলজিয়ামের পদার্থবিদ রবার্ট ব্রাউট (২০১১ সালে মারা গেছেন) এবং ফ্রাঁসোয়া এডলার্ট। তাঁরা এই গবেষণায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ফেনোমেনন তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন। বোস নামটা এসেছে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের নামানুসারে। ১৯২৪ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে একটা গবেষণাপত্র পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার সত্যেন্দ্রনাথ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট তত্ত্ব তৈরি হয়। এ কারণেই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ১২তম কণার নামকরণ হয় হিগস বোসন। এই মডেলে বলা হয়েছে, বিগ-ব্যাংয়ের পর সদ্য সৃষ্টি হওয়া মহাবিশ্ব যখন একটু শীতল হয়, তখন সেখানে সৃষ্টি হয় অদৃশ্য এক ধরনের বল, যাকে বলা হয় হিগস ফিল্ড। এই ফিল্ডে তৈরি হয় অজস্র খুদে কণা বা হিগস বোসন। এই হিগস ফিল্ড দিয়ে ছুটে যাওয়া সব কণা হিগস বোসনের সংস্পর্শে এসে ভরপ্রাপ্ত হয়। এরপর শুরু হয় পদার্থ সৃষ্টির পালা। প্রশ্ন হলো- তাহলে এত দিন এই ভুতুড়ে কণার দেখা মেলেনি কেন? কারণ এরা অতি ক্ষণস্থায়ী। জন্ম মাত্রই অন্যকে ভর জুগিয়ে এরা নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্যই এদের আরেক নাম ঈশ্বর কণা।
এলএইচআর গবেষণা
মূলত স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে বাঁচাতেই ইউরোপিয়ান পরমাণু গবেষণা সংস্থা সার্নের বিজ্ঞানীরা মাটির গভীরে লার্জ হ্যাড্রন কলাইভার বা এলএইচআর গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করেন। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের এই গবেষণাগারে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে অতি পারমাণবিক কণাদের স্রোত প্রায় আলোর গতিতে ছুটিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানোর মধ্য দিয়ে একটা বিগ ব্যাং অবস্থা সৃষ্টি করেন বিজ্ঞানীরা। বহু দিনের এই চেষ্টার ফল মিলল এবার। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সেই নিখোঁজ কণা হিগস বোসনের সন্ধান অবশেষে পাওয়া গেল। বুধবার লন্ডনে সার্ন মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাসিলিটি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী প্রফেসর জন উমার্সলি বলেন, 'হিগস বোসনের মতো একটি কণার সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। আমরা ৯৯.৯৯৯ ভাগ নিশ্চিত এ ব্যাপারে। বিজ্ঞান গবেষণায় এ এক মহা আবিষ্কার।' তাঁর এই বক্তব্যের পর পুরো মিলনায়তন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিটার হিগস। এখন তাঁর বয়স ৮৩ বছর। প্রচণ্ড আবেগে কেঁদে ফেলেন এই বিজ্ঞানী। বলেন, 'আমার জীবদ্দশায় এমন কিছু ঘটা এক বিশাল ব্যাপার।'
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, যে কণাটির সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, তার ওজন ১২৫ থেকে ১২৬ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট। প্রতিটি অণুর কেন্দ্রে থাকে যে প্রোটোন, তার ওজনের চেয়ে এটা ১৩০ গুণ বেশি ভারী।
সার্নের মুখপাত্র জো ইনকানডালা বলেছেন, যদিও এটা প্রাথমিক ফলাফল। তার পরও এতে যে প্রমাণ মিলেছে কণাটি হিগস বোসনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিজ্ঞানীরা বুধবার ঘোষণা করলেন- হ্যাঁ, ওই মিসিং পার্টিক্যালসটি তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। 'ঈশ্বর কণা' নামে পরিচিত এই দুর্লভ কণাটির সন্ধান পেয়েছেন ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্নের বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে মাটির বেশ গভীরে তৈরি লার্জ হ্যাড্রন কলাইভারের মধ্যে মিনি বিগ ব্যাং ঘটিয়ে এই ঈশ্বর কণাকে শেষ পর্যন্ত সৃষ্টি করা গেল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা ৯৯.৯৯৯ ভাগ নিশ্চিত এটা সেই রহস্য কণাই।
সৃষ্টির জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ হিগস বোসন?
১৯৭০-এর দশকে সৃষ্টিতত্ত্ববিষয়ক স্ট্যান্ডার্ড মডেলটি তৈরি হয়। সেখানে বলা হয়, গোটা মহাবিশ্ব সমেত আমরা, মানে সবার সৃষ্টির মূলে আছে ১২টি মৌলিক কণা। এদের থেকেই সব বস্তুর সৃষ্টি। এই ১২টি কণার আবার দুটি গ্রুপ আছে- ছয়টা কণা মিলে লেপটনস, বাকি ছয়টা মিলে কোয়ার্কস গ্রুপ। এসব কণার নামগুলোও বাহারি- স্ট্রেঞ্জ, আপ, ডাউন, টাউ, বটম, চার্ম।
বিগ ব্যাং মহাবিস্ফোরণের সময় এসব কণার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বড় ধাঁধা হলো এসব কণার নিজস্ব কোনো ভর বা মাস নেই। আর ভর না থাকা মানে এরা কখনো স্থির হবে না। আলোর কণার মতো এরা অবিরত ছুটতে থাকবে। তারা কখনো জমাট বাঁধবে না। মানে ম্যাটার বা পদার্থ সৃষ্টি হবে না। তাহলে রহস্যটা কী? শুরু হয় খোঁজ। বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি জগতে থাকা সব মৌলিক কণা খুঁজতে থাকেন। একে একে ১১টি মৌলিক কণার সন্ধান মিলল। খোঁজ পাওয়া গেল বিভিন্ন বলেরও। কিন্তু ভর সৃষ্টি হওয়ার রহস্য উন্মোচন হলো না। ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগসের মাথায় একটি ধারণা জন্মাল। তিনি জানালেন, সৃষ্টি জগতে আরেক ধরনের কণা না থেকেই পারে না- যারা মহাবিশ্বে ভর সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে শুরু হয় জোরদার গবেষণা। পিটার হিগসের সঙ্গে যোগ দেন বেলজিয়ামের পদার্থবিদ রবার্ট ব্রাউট (২০১১ সালে মারা গেছেন) এবং ফ্রাঁসোয়া এডলার্ট। তাঁরা এই গবেষণায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ফেনোমেনন তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন। বোস নামটা এসেছে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের নামানুসারে। ১৯২৪ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে একটা গবেষণাপত্র পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার সত্যেন্দ্রনাথ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট তত্ত্ব তৈরি হয়। এ কারণেই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ১২তম কণার নামকরণ হয় হিগস বোসন। এই মডেলে বলা হয়েছে, বিগ-ব্যাংয়ের পর সদ্য সৃষ্টি হওয়া মহাবিশ্ব যখন একটু শীতল হয়, তখন সেখানে সৃষ্টি হয় অদৃশ্য এক ধরনের বল, যাকে বলা হয় হিগস ফিল্ড। এই ফিল্ডে তৈরি হয় অজস্র খুদে কণা বা হিগস বোসন। এই হিগস ফিল্ড দিয়ে ছুটে যাওয়া সব কণা হিগস বোসনের সংস্পর্শে এসে ভরপ্রাপ্ত হয়। এরপর শুরু হয় পদার্থ সৃষ্টির পালা। প্রশ্ন হলো- তাহলে এত দিন এই ভুতুড়ে কণার দেখা মেলেনি কেন? কারণ এরা অতি ক্ষণস্থায়ী। জন্ম মাত্রই অন্যকে ভর জুগিয়ে এরা নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্যই এদের আরেক নাম ঈশ্বর কণা।
এলএইচআর গবেষণা
মূলত স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে বাঁচাতেই ইউরোপিয়ান পরমাণু গবেষণা সংস্থা সার্নের বিজ্ঞানীরা মাটির গভীরে লার্জ হ্যাড্রন কলাইভার বা এলএইচআর গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করেন। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের এই গবেষণাগারে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে অতি পারমাণবিক কণাদের স্রোত প্রায় আলোর গতিতে ছুটিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানোর মধ্য দিয়ে একটা বিগ ব্যাং অবস্থা সৃষ্টি করেন বিজ্ঞানীরা। বহু দিনের এই চেষ্টার ফল মিলল এবার। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সেই নিখোঁজ কণা হিগস বোসনের সন্ধান অবশেষে পাওয়া গেল। বুধবার লন্ডনে সার্ন মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাসিলিটি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী প্রফেসর জন উমার্সলি বলেন, 'হিগস বোসনের মতো একটি কণার সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। আমরা ৯৯.৯৯৯ ভাগ নিশ্চিত এ ব্যাপারে। বিজ্ঞান গবেষণায় এ এক মহা আবিষ্কার।' তাঁর এই বক্তব্যের পর পুরো মিলনায়তন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিটার হিগস। এখন তাঁর বয়স ৮৩ বছর। প্রচণ্ড আবেগে কেঁদে ফেলেন এই বিজ্ঞানী। বলেন, 'আমার জীবদ্দশায় এমন কিছু ঘটা এক বিশাল ব্যাপার।'
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, যে কণাটির সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, তার ওজন ১২৫ থেকে ১২৬ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট। প্রতিটি অণুর কেন্দ্রে থাকে যে প্রোটোন, তার ওজনের চেয়ে এটা ১৩০ গুণ বেশি ভারী।
সার্নের মুখপাত্র জো ইনকানডালা বলেছেন, যদিও এটা প্রাথমিক ফলাফল। তার পরও এতে যে প্রমাণ মিলেছে কণাটি হিগস বোসনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
No comments