সংসদে প্রধানমন্ত্রী-বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির খবর নেবে কে?
প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বব্যাংক যেখানে একটি পয়সাও দেয়নি, সেখানে দুর্নীতি হলো কিভাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, যারা দুর্নীতির কথা বলছে, সেই বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির খবর কে নেবে?
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বরং এই ঋণচুক্তি বাতিলের পেছনে কে বা কারা আছে, সেই রহস্য খুঁজে বের করা উচিত। দুর্নীতি তদন্তের সুবিধার্থে আমরা মন্ত্রী, সচিব, প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। এর চেয়ে আর বেশি কোন সরকার করেছে?'
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ফোর্বসের প্রতিবেদন পড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বিশ্বমন্দার মধ্যেও যদি আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারি, তবে নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব; ইনশাল্লাহ আমরা করব।' শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বব্যাংকসহ আরো যারা আছে, তারা ঋণ দেওয়া বন্ধ করলে করতে পারে, করুক। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি জনগণ এবং বিদেশে ৮০ লাখ প্রবাসী বাঙালি আছে। আমাদের অর্থনীতির অবস্থাও এত খারাপ নয়। আমি পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ইআরডি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের কাছ থেকে জেনেছি, আমাদের যেটুকু রিজার্ভ আছে, বছরে এক বা দুই বিলিয়ন ডলার খরচ করার ক্ষমতা আছে।' তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
এই প্রকল্পে কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'কোনো মন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। যে মুহূর্তে দুর্নীতির প্রমাণ হবে, সেই মুহূর্তে মন্ত্রিত্ব চলে যাবে। আওয়ামী লীগেরই ২৩৩ জন এমপি রয়েছেন। তাই মন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য নেতার আমাদের অভাব নেই।' তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়া সরকার এগিয়ে এসেছে। আর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও হতে পারে। কোনোভাবেই জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়, যে-ই প্রস্তাব দিক, তা আমার দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে, দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।'
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবার সম্পর্কে দুর্নীতি ও কমিশন আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি বা আমার পরিবারের কেউই কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমি, শেখ রেহানা এবং আমাদের পাঁচ সন্তান ছাড়া আমার পরিবারের আর কেউ নেই। অন্য কোনো পরিবার নেই।' দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের বা আমার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। আমার ই-মেইল- sheikhhasina@hotmail.com। আমার ফোন নম্বর হচ্ছে- ০১৭১১৫২০০০০, ০১৮১৯২৬০৩৭১।'
গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব অধিবেশনে সভাপতির আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের সাতটি প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর রূপসা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জাপান সরকারের সঙ্গে কথা বলি এবং অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতার পাঁচ বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়।' তিনি বলেন, 'এবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিলে বিশ্বব্যাংক স্বপ্রণোদিতভাবেই এগিয়ে আসে। আমরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করি। কিন্তু হঠাৎ করেই কথা নেই বার্তা নেই, বলা হলো এখানে দুর্নীতি হয়েছে!' তিনি বলেন, 'যেখানে অর্থই ছাড় দেওয়া হয়নি, একটি পাই-পয়সাও বিশ্বব্যাংক দেয়নি, সেখানে দুর্নীতিটা কোথায় হলো?' তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে, তাদের লোক এসেও খোঁজ-খবর নিয়েছে। তারা নিজেরাই বলেছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পৃথিবীর সব জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়, কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল ঢাকায় এলে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে দুটি কাগজ ধরিয়ে দেন। ওই দুই কাগজ পড়ে দেখা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগটি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আমাদের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। এটা তাঁকে আমি দেখিয়েছি। তখন ইসাবেল বললেন, আরো তথ্য আছে। আমি বলেছি, যে তথ্য আছে, দিন।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ আমলে নিয়ে কথিত দুর্নীতির তদন্ত করতে সুবিধার জন্য আমি যোগাযোগমন্ত্রী, সেতু বিভাগের সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। আমি চেয়েছি, স্বচ্ছভাবে তদন্ত হোক। এর থেকে আর বেশি কে কী করেছে?' তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন কি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া বা কাউকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল? যোগাযোগ খাতের সাতটি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে অর্থায়ন বন্ধ করা হলো যাদের কারণে, তাদের বিরুদ্ধেও কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল? বিএনপি সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আমরা নিয়েছি। কারণ আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, তাদের জন্য কাজ করি। ক্ষমতায় আমরা দু-পয়সা কামাই করতে আসিনি। আমরা কমিশনও খাই না। বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। কিছু কি পেয়েছে? কেউই কিছু পায়নি।'
বিশিষ্ট তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কমিটিতে বিশ্বব্যাংকেরও পরামর্শক ছিল। তিনি বলেন, 'একটি বিশেষ কম্পানিকে কাজ দিতে বিশ্বব্যাংক তিনবার চিঠি দিয়ে আমাদের চাপ দিয়েছে। কিন্তু ওই কমিটি তদন্ত করে দেখেছে, ওই কম্পানিটিই ভুয়া। ভুয়া কম্পানিকে কাজ দিতে তিন-তিনবার চিঠি দিয়ে চাপ দেওয়া হলো, তবু ভুয়া কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়নি, তবে দুর্নীতিটা হলো কিভাবে?'
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যখন কৃষি খাতে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে চেয়েছি, তখনো বিশ্বব্যাংক আপত্তি জানিয়েছে। তবু আমরা দিয়েছি। পদ্মা সেতুও ইনশাল্লাহ আমরা নির্মাণ করব।' তিনি বলেন, 'বিশ্বমন্দার মধ্যেও যখন আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, পদ্মা সেতুও আমরা করতে পারব। দরকার হলে নিজেদের অর্থায়নে করব।' তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অপবাদ দিয়েছে, তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বরং এই ঋণচুক্তি বাতিলের পেছনে কে বা কারা আছে, সেই রহস্য খুঁজে বের করা উচিত। দুর্নীতি তদন্তের সুবিধার্থে আমরা মন্ত্রী, সচিব, প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। এর চেয়ে আর বেশি কোন সরকার করেছে?'
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ফোর্বসের প্রতিবেদন পড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বিশ্বমন্দার মধ্যেও যদি আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারি, তবে নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব; ইনশাল্লাহ আমরা করব।' শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বব্যাংকসহ আরো যারা আছে, তারা ঋণ দেওয়া বন্ধ করলে করতে পারে, করুক। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি জনগণ এবং বিদেশে ৮০ লাখ প্রবাসী বাঙালি আছে। আমাদের অর্থনীতির অবস্থাও এত খারাপ নয়। আমি পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ইআরডি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের কাছ থেকে জেনেছি, আমাদের যেটুকু রিজার্ভ আছে, বছরে এক বা দুই বিলিয়ন ডলার খরচ করার ক্ষমতা আছে।' তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
এই প্রকল্পে কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'কোনো মন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। যে মুহূর্তে দুর্নীতির প্রমাণ হবে, সেই মুহূর্তে মন্ত্রিত্ব চলে যাবে। আওয়ামী লীগেরই ২৩৩ জন এমপি রয়েছেন। তাই মন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য নেতার আমাদের অভাব নেই।' তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়া সরকার এগিয়ে এসেছে। আর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও হতে পারে। কোনোভাবেই জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়, যে-ই প্রস্তাব দিক, তা আমার দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে, দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।'
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবার সম্পর্কে দুর্নীতি ও কমিশন আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি বা আমার পরিবারের কেউই কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমি, শেখ রেহানা এবং আমাদের পাঁচ সন্তান ছাড়া আমার পরিবারের আর কেউ নেই। অন্য কোনো পরিবার নেই।' দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের বা আমার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। আমার ই-মেইল- sheikhhasina@hotmail.com। আমার ফোন নম্বর হচ্ছে- ০১৭১১৫২০০০০, ০১৮১৯২৬০৩৭১।'
গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব অধিবেশনে সভাপতির আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের সাতটি প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর রূপসা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জাপান সরকারের সঙ্গে কথা বলি এবং অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতার পাঁচ বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়।' তিনি বলেন, 'এবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিলে বিশ্বব্যাংক স্বপ্রণোদিতভাবেই এগিয়ে আসে। আমরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করি। কিন্তু হঠাৎ করেই কথা নেই বার্তা নেই, বলা হলো এখানে দুর্নীতি হয়েছে!' তিনি বলেন, 'যেখানে অর্থই ছাড় দেওয়া হয়নি, একটি পাই-পয়সাও বিশ্বব্যাংক দেয়নি, সেখানে দুর্নীতিটা কোথায় হলো?' তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে, তাদের লোক এসেও খোঁজ-খবর নিয়েছে। তারা নিজেরাই বলেছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পৃথিবীর সব জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়, কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল ঢাকায় এলে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে দুটি কাগজ ধরিয়ে দেন। ওই দুই কাগজ পড়ে দেখা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগটি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আমাদের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। এটা তাঁকে আমি দেখিয়েছি। তখন ইসাবেল বললেন, আরো তথ্য আছে। আমি বলেছি, যে তথ্য আছে, দিন।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ আমলে নিয়ে কথিত দুর্নীতির তদন্ত করতে সুবিধার জন্য আমি যোগাযোগমন্ত্রী, সেতু বিভাগের সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। আমি চেয়েছি, স্বচ্ছভাবে তদন্ত হোক। এর থেকে আর বেশি কে কী করেছে?' তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন কি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া বা কাউকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল? যোগাযোগ খাতের সাতটি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে অর্থায়ন বন্ধ করা হলো যাদের কারণে, তাদের বিরুদ্ধেও কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল? বিএনপি সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আমরা নিয়েছি। কারণ আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, তাদের জন্য কাজ করি। ক্ষমতায় আমরা দু-পয়সা কামাই করতে আসিনি। আমরা কমিশনও খাই না। বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। কিছু কি পেয়েছে? কেউই কিছু পায়নি।'
বিশিষ্ট তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কমিটিতে বিশ্বব্যাংকেরও পরামর্শক ছিল। তিনি বলেন, 'একটি বিশেষ কম্পানিকে কাজ দিতে বিশ্বব্যাংক তিনবার চিঠি দিয়ে আমাদের চাপ দিয়েছে। কিন্তু ওই কমিটি তদন্ত করে দেখেছে, ওই কম্পানিটিই ভুয়া। ভুয়া কম্পানিকে কাজ দিতে তিন-তিনবার চিঠি দিয়ে চাপ দেওয়া হলো, তবু ভুয়া কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়নি, তবে দুর্নীতিটা হলো কিভাবে?'
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যখন কৃষি খাতে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে চেয়েছি, তখনো বিশ্বব্যাংক আপত্তি জানিয়েছে। তবু আমরা দিয়েছি। পদ্মা সেতুও ইনশাল্লাহ আমরা নির্মাণ করব।' তিনি বলেন, 'বিশ্বমন্দার মধ্যেও যখন আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, পদ্মা সেতুও আমরা করতে পারব। দরকার হলে নিজেদের অর্থায়নে করব।' তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অপবাদ দিয়েছে, তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
No comments