অধীনতা নয়, চাই সহমর্মিতা by মেহেরুন নেছা রুমা
ঘরে-বাইরে নারী কোথাও নিরাপদে নেই। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো নারী স্বামীর হাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খুন হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে এসেও যেন আমরা এক বর্বর সমাজে বসবাস করছি। বর্বর সমাজের সবকিছুই রয়েছে; নেই শুধু গোষ্ঠীবদ্ধভাবে জীবিকা অর্জনের পন্থাটি।
ঘরের মানুষের কাছেই নারী অনিরাপদ! তাহলে আর বাইরের বখাটেদের এত দোষ দিয়ে কী লাভ? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়াকে যেভাবে তার স্বামী রেজাউল খুন করে তারপর সেই মৃতদেহ গাড়িতে বসিয়ে রেখে নিয়ে যাচ্ছিল, এ দৃশ্যটি পত্রিকার পাতায় দেখে যে কারও মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রতিদিনই কোনো না কোনো মেয়ে স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু কেন? বিয়ে নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মেয়ে একজন পুরুষের স্ত্রীরূপে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি ওই পরিবারে নিজেকে ঢেলে দেয়। নিজের বাবা-মা, ঘরবাড়ি ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন জীবন শুরু করে। আর এসব কিছু তার কাছে সহজ হয় যদি সেখানে সবার ভালোবাসা আর আন্তরিকতার ছোঁয়া থাকে। বিশেষ করে পুরুষ মানুষটি যদি সেই মেয়েটিকে নিজের একটি বিশেষ সত্তা হিসেবে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়। নিরেট ভালোবাসার কাছে বেশিরভাগ মেয়েরাই আত্মসমর্পণ করে এবং নিজেকে সমর্পিত করে। তাহলে সেখানে মারধর, খুনাখুনি কেন? কেন স্বামীরা স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলে, গলাটিপে হত্যা করে? এটা তো কাপুরুষতার শামিল। কোনোকিছু দিয়ে যখন স্বামীরা স্ত্রীদের থেকে যোগ্যতায় ওপরে উঠতে পারে না, যখন নিজের সব অন্যায় আবদার জোর করে চাপিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়, তখনি তারা তাদের এই দেহবল খাটিয়ে নারীকে পরাভূত করার চেষ্টা করে।
মনোমালিন্য সব পরিবারেই থাকবে। স্ত্রীকে যদি তার অসহ্যই লাগে তবে তার জীবননাশ না করে মুক্ত করে দেওয়াই উচিত বলে মনে করি। আর স্ত্রীদেরও উচিত এমন স্বামীদের ছত্রছায়ায় না থেকে আত্মসম্মান নিয়ে নিজের মতো করে বেঁচে থাকা। নারীরা তা পারে না বলেই ওরা আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যায়। দুর্বল ভাবে এবং সুযোগ পেলেই দুর্বলদের ওপর শক্তির উন্মত্ততা জাহির করে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় একবার চোখ বুলালেই দেশের অসংখ্য নারীদের নিঃশব্দ আত্মচিৎকার শোনা যায়। যৌতুকের কারণে গৃহবধূকে নৃশংসভাবে খুন, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পিটিয়ে রক্তাক্ত করা, ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে নিজের স্ত্রীকে জবাই করা আর আত্মহত্যায় প্ররোচনা করার সংখ্যা যে কত তার সঠিক হিসাব কোনো পরিসংখ্যানে নেই। শুধু পুরুষদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যে পরিমাণ নারী এ দেশে আত্মহত্যা করে আর যে পরিমাণ নারী আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যায় এবং পরবর্তী সময়ে এক বিষণ্ন কষ্টময় জীবনের গ্গ্নানি বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে, তার সঠিক সংখ্যা মনে হয় জানা সম্ভব হবে না। আর এ থেকে কোনোদিন এই সমাজ-সংসার পরিত্রাণ পাবে কি-না তাও কারও জানা নেই। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে, আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আমরাও সেই স্বপ্ন, সেই আশা, সেই সম্ভাবনা নিয়ে তাকিয়ে আছি এমন একটি সময়ের দিকে, যে সময়ে এ দেশে আর কোনো মেয়ে স্বামীর হাতে খুন হবে না, নারীরা স্ত্রীর অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে সহাবস্থান করবে পুরুষদের পাশাপাশি। কেউ কারও অধীন নয়; একজন আরেকজনের সহায়, আর ছোট-বড় ত্যাগ স্বীকারমূলক মনোভাব নিয়ে, পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধ বহাল রেখে একেকটি পরিবার একেকটি জাতি গঠনে সহায়ক হবে।
হ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
মনোমালিন্য সব পরিবারেই থাকবে। স্ত্রীকে যদি তার অসহ্যই লাগে তবে তার জীবননাশ না করে মুক্ত করে দেওয়াই উচিত বলে মনে করি। আর স্ত্রীদেরও উচিত এমন স্বামীদের ছত্রছায়ায় না থেকে আত্মসম্মান নিয়ে নিজের মতো করে বেঁচে থাকা। নারীরা তা পারে না বলেই ওরা আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যায়। দুর্বল ভাবে এবং সুযোগ পেলেই দুর্বলদের ওপর শক্তির উন্মত্ততা জাহির করে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় একবার চোখ বুলালেই দেশের অসংখ্য নারীদের নিঃশব্দ আত্মচিৎকার শোনা যায়। যৌতুকের কারণে গৃহবধূকে নৃশংসভাবে খুন, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পিটিয়ে রক্তাক্ত করা, ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে নিজের স্ত্রীকে জবাই করা আর আত্মহত্যায় প্ররোচনা করার সংখ্যা যে কত তার সঠিক হিসাব কোনো পরিসংখ্যানে নেই। শুধু পুরুষদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যে পরিমাণ নারী এ দেশে আত্মহত্যা করে আর যে পরিমাণ নারী আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যায় এবং পরবর্তী সময়ে এক বিষণ্ন কষ্টময় জীবনের গ্গ্নানি বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে, তার সঠিক সংখ্যা মনে হয় জানা সম্ভব হবে না। আর এ থেকে কোনোদিন এই সমাজ-সংসার পরিত্রাণ পাবে কি-না তাও কারও জানা নেই। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে, আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আমরাও সেই স্বপ্ন, সেই আশা, সেই সম্ভাবনা নিয়ে তাকিয়ে আছি এমন একটি সময়ের দিকে, যে সময়ে এ দেশে আর কোনো মেয়ে স্বামীর হাতে খুন হবে না, নারীরা স্ত্রীর অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে সহাবস্থান করবে পুরুষদের পাশাপাশি। কেউ কারও অধীন নয়; একজন আরেকজনের সহায়, আর ছোট-বড় ত্যাগ স্বীকারমূলক মনোভাব নিয়ে, পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধ বহাল রেখে একেকটি পরিবার একেকটি জাতি গঠনে সহায়ক হবে।
হ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
No comments