পুণ্যময় রাতের আমল by শাহীন হাসনাত

হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রজব মাসের শুরুতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া করতেন_ 'আল্লাহুমা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বালি্লগনা রামাজান।' অর্থাৎ হে আল্লাহ, রজব ও শাবানকে আমাদের জন্য বরকতময় করো এবং আমাদের রমজানে পেঁৗছে দাও।


আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন দিন, রাত, মাস ও সময়কে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন। মানুষের ক্ষমার জন্য বিশেষ কিছু মুহূর্তও রেখেছেন। এর মধ্যে অর্ধশাবানের রাত তথা শবেবরাত একটি। এ ছাড়া পূর্ণ মাসই অফুরন্ত সওয়াব হাসিলের মোক্ষম সুযোগ রয়েছে। এ মাসে আল্লাহতায়ালা বান্দাদের আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মাসে সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো কাজ করতে থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্লান্ত হন না। বরং তোমরা ক্লান্ত হয়ে যাও। বুজুর্গরা শবেবরাতে রাত জাগরণের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তারা এ রাতে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন, সুরমা-সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং গোটা রাত মসজিদে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তবে নফল ইবাদতের জন্য নিজের ঘর এবং নিরিবিলি পরিবেশই উত্তম। হাদিসবেত্তারা এ মত পোষণ করেন।
হাদিসে বলা হয়েছে, শবেবরাতে ক্ষমা চাইলে গোনাহগারদের ক্ষমা করা হয়। কিন্তু খাঁটি তওবা ছাড়া কিছুসংখ্যক লোককে শবেবরাতেও ক্ষমা করা হয় না। তারা হচ্ছে_ এক. আল্লাহর সঙ্গে যারা শরিক করে; দুই. হিংসুক; তিন. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান; ৪. আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদকারী; পাঁচ. মদপানকারী; ছয়. পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ; সাত. জাদুকর ও আট. গণক। কোনো কোনো হাদিসে জুলুম করে যারা ট্যাক্স আদায় করে, হাতের রেখা দেখে যারা ভাগ্যের খবর বলে, অত্যাচারী সৈন্য এবং যারা ঢোল বাজায় ও তাস খেলে_ এসব লোককে ক্ষমা না করার কথাও এসেছে।
রহমত, বরকত ও কল্যাণের আঁধার মুক্তির এ রাতকে আড্ডা, অযথা গল্প, হাসি-তামাশায় পার না করে, বিনয়াবনতচিত্তে জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ও নফল নামাজ ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত এবং পরের দিন রোজা রাখা উচিত। মাওলানা আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতেই দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তবে সে অবতীর্ণ হয় শেষ রাতে। কিন্তু রাতে সন্ধ্যা থেকেই আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। শবেবরাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ বা আমল নেই। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যাবে। কোরআন তেলাওয়াতসহ জিকির করা যাবে। দরুদ শরিফ পাঠ ও ইসতেগফার পড়া এবং দোয়া করা যাবে। শাবানে আল্লাহর দরবারে বান্দার বার্ষিক আমল পেশ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.