শবেবরাত ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থা by ফয়সল আহমদ জালালী
শবেবরাতের বিষয়টি একেবারে দলিলবহির্ভূত নয়। শবেবরাতের পক্ষে কিছু হাদিস রয়েছে। দিনেরবেলা রোজা ও রাতেরবেলা জাগ্রত থেকে ইবাদত করার কথা বর্ণিত হয়েছে। শবেবরাত সম্পর্কে যেসব হাদিস বর্ণিত রয়েছে এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সঙ্গত কারণে এক দল আলিম শবেবরাতের প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা অস্বীকার
করেন। তাদের যুক্তি হলো, এসব হাদিস যেহেতু সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, ফলে বিশাল মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে একে সাব্যস্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পক্ষান্তরে একদল ওলামায়ে কেরাম মনে করে, যেহেতু কিছু হাদিসে এ রাতের মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে, ফলে একে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করার অবকাশ নেই। শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ের নিক্তিতে সকল হাদিস অস্বীকারযোগ্য নয়। সমালোচকরাও কিছু হাদিসের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করেছেন।
শবেবরাতের প্রমাণ মেনে নেওয়ার পর প্রশ্ন আসে মহাজাঁকজমকভাবে তা পালনের ব্যাপারে এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকতা অবলম্বনে। আমাদের সমাজে কিছুসংখ্যক মানুষ মনে করে, ইবাদত-বন্দেগি মানেই আনুষ্ঠানিকতা। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। ইবাদত-বন্দেগি হবে সম্পূর্ণ একান্তে। বিশেষ করে নফল ইবাদত-বন্দেগি এমনভাবে করা চাই, যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতেও পারে না। বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত আছে_ সাত শ্রেণীর মানুষ কে বিভীষিকাময় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন। এদের একদল হলো, যারা একাগ্রে আল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। এ ছাড়া লোক দেখানো ও লোক শোনানো ইবাদতকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন, ইবাদতে সামান্যতম লোক দেখানোর মনোভাবও শিরক হিসেবে গণ্য। আল্লাহতায়ালা কপট লোকদের সমালোচনায় ইরশাদ করেন_ বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় একান্ত। শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। সূরা : নিসা, আয়াত ১৪৩।
ওয়াজের আনুষ্ঠানিকতা, কবর জিয়ারত ও হালুয়া-রুটি বিতরণ : শবেবরাত উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদে ওয়াজ মাহফিল ও জিকিরের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। এটি শবেবরাতের গাম্ভীর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। লোক সমাগমের ফলে হৈহুল্লোড় ও কথাবার্তার মাধ্যমে ইবাদতে নীরবতা অবলম্বনের পরিবেশ নষ্ট হয়। নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে একাকিত্ব ও নির্জনতা সবার একান্ত কাম্য হওয়া উচিত।
শবেবরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের সমাজে এ প্রথাটি কীভাবে চালু হলো, অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেও রহস্যটি উদ্ঘাটন করা গেল না। অনেকে মনে করেন, শবেবরাত ও হালুয়া-রুটি একে অপরের পরিপূরক। কেউ গরিব মিসকিনকে বিলিয়ে দেয়, আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে পরিবেশন করে। হালুয়া-রুটি খাওয়া, বিতরণ করা ও উপহার দেওয়া কোনো দূষণীয় কাজ নয়। কিন্তু শবেবরাতের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা মনে করলে এর পেছনে দলিল লাগবে। এ ব্যাপারে দলিল কোথায়?
আমাদের সমাজে মনে করা হয়, শবেবরাত হলেই মাজার জিয়ারতে যেতে হবে। মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে হবে। অনেকে এ ভ্রান্ত চিন্তাও পোষণ করেন যে, শবেবরাতে মৃত ব্যক্তির রুহানি আপনজনদের সঙ্গে এসে মিলিত হয়। প্রকৃত অর্থে এগুলো অলীক-ভিত্তিহীন। কবর জিয়ারত করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কবর জিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করে দেয়। মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব পেঁৗছানোর জন্য কবরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কোনো স্থান থেকে সওয়াব পেঁৗছানো যায়। এ ছাড়া আমাদের সমাজে মাজার নামে যে কারখানা গড়ে উঠেছে তা কস্মিনকালেও সমর্থনযোগ্য নয়। মাজারে আলোকসজ্জা করা, বাতি জ্বালানো ও মেলা বসানো সম্পূর্ণ অনৈসলামিক কাজ।
শবেবরাত পালনে ঘরের বাইরে রাত কাটানো :আমাদের চোখের সামনেই তো ঘটে গেল গাবতলী-আমিন বাজারের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি। গত বছর শবেবরাত পালনের লক্ষ্যে ছয় যুবক বাড়ির বাইরে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে লোকজন তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। ফলে গণধোলাইতে ছয়টি তাজা প্রাণ চিরদিনের জন্য নিষ্প্রভ হয়। বাইরে রাত কাটানো শবেবরাতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সংঘাতপূর্ণ। নীরবে-নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে হয়। হাদিসে এসেছে চার ক্যাটাগরির মানুষ নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এদের একদল হলো যারা জনমানবের ঘুমের কালে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে।
শবেবরাতে কী ধরনের ইবাদত করতে হয় :শবেবরাত, শবেকদর ইত্যাদিতে কোনো ধরনের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি নেই। বিশেষ ধরনের কোনো নামাজ নেই। অদ্বিতীয় আল্লাহর দরবারে বিনয়াবনত হওয়াই ইবাদত। তা নামাজ, আল কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিল যে কোনো পন্থায় হতে পারে।
শাবান মাস ও অর্ধমাসের ফজিলতের কারণ :শাবান মাস হলো রমজান মাসের আগের মাস। রমজান মাসের অসীম ফজিলতের কথা বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য উৎস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাস থেকেই বরকতের দোয়া শুরু করে দিতেন বলে বর্ণিত। রমজান মাসের ফজিলতেই শাবান মাস বরকতময়। শাবান মাস এলেই আমাদের প্রিয় নবী রমজান মাসের দিনক্ষণগুলো গণনা শুরু করে দিতেন। আসুন, আমরা পুরো শাবান মাসকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। হাদিসে বর্ণিত, শাবান মাস এলেই রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রস্তুতির জন্য কোমর মজবুত করতেন। শুধু ১৫ শাবান নয়, এর পরবর্তী ঘনীভূত দিনগুলোকেও আমরা যেন গুরুত্ব দিই এবং রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
শবেবরাতের প্রমাণ মেনে নেওয়ার পর প্রশ্ন আসে মহাজাঁকজমকভাবে তা পালনের ব্যাপারে এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকতা অবলম্বনে। আমাদের সমাজে কিছুসংখ্যক মানুষ মনে করে, ইবাদত-বন্দেগি মানেই আনুষ্ঠানিকতা। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। ইবাদত-বন্দেগি হবে সম্পূর্ণ একান্তে। বিশেষ করে নফল ইবাদত-বন্দেগি এমনভাবে করা চাই, যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতেও পারে না। বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত আছে_ সাত শ্রেণীর মানুষ কে বিভীষিকাময় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন। এদের একদল হলো, যারা একাগ্রে আল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। এ ছাড়া লোক দেখানো ও লোক শোনানো ইবাদতকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন, ইবাদতে সামান্যতম লোক দেখানোর মনোভাবও শিরক হিসেবে গণ্য। আল্লাহতায়ালা কপট লোকদের সমালোচনায় ইরশাদ করেন_ বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় একান্ত। শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। সূরা : নিসা, আয়াত ১৪৩।
ওয়াজের আনুষ্ঠানিকতা, কবর জিয়ারত ও হালুয়া-রুটি বিতরণ : শবেবরাত উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদে ওয়াজ মাহফিল ও জিকিরের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। এটি শবেবরাতের গাম্ভীর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। লোক সমাগমের ফলে হৈহুল্লোড় ও কথাবার্তার মাধ্যমে ইবাদতে নীরবতা অবলম্বনের পরিবেশ নষ্ট হয়। নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে একাকিত্ব ও নির্জনতা সবার একান্ত কাম্য হওয়া উচিত।
শবেবরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের সমাজে এ প্রথাটি কীভাবে চালু হলো, অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেও রহস্যটি উদ্ঘাটন করা গেল না। অনেকে মনে করেন, শবেবরাত ও হালুয়া-রুটি একে অপরের পরিপূরক। কেউ গরিব মিসকিনকে বিলিয়ে দেয়, আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে পরিবেশন করে। হালুয়া-রুটি খাওয়া, বিতরণ করা ও উপহার দেওয়া কোনো দূষণীয় কাজ নয়। কিন্তু শবেবরাতের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা মনে করলে এর পেছনে দলিল লাগবে। এ ব্যাপারে দলিল কোথায়?
আমাদের সমাজে মনে করা হয়, শবেবরাত হলেই মাজার জিয়ারতে যেতে হবে। মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে হবে। অনেকে এ ভ্রান্ত চিন্তাও পোষণ করেন যে, শবেবরাতে মৃত ব্যক্তির রুহানি আপনজনদের সঙ্গে এসে মিলিত হয়। প্রকৃত অর্থে এগুলো অলীক-ভিত্তিহীন। কবর জিয়ারত করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কবর জিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করে দেয়। মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব পেঁৗছানোর জন্য কবরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কোনো স্থান থেকে সওয়াব পেঁৗছানো যায়। এ ছাড়া আমাদের সমাজে মাজার নামে যে কারখানা গড়ে উঠেছে তা কস্মিনকালেও সমর্থনযোগ্য নয়। মাজারে আলোকসজ্জা করা, বাতি জ্বালানো ও মেলা বসানো সম্পূর্ণ অনৈসলামিক কাজ।
শবেবরাত পালনে ঘরের বাইরে রাত কাটানো :আমাদের চোখের সামনেই তো ঘটে গেল গাবতলী-আমিন বাজারের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি। গত বছর শবেবরাত পালনের লক্ষ্যে ছয় যুবক বাড়ির বাইরে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে লোকজন তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। ফলে গণধোলাইতে ছয়টি তাজা প্রাণ চিরদিনের জন্য নিষ্প্রভ হয়। বাইরে রাত কাটানো শবেবরাতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সংঘাতপূর্ণ। নীরবে-নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে হয়। হাদিসে এসেছে চার ক্যাটাগরির মানুষ নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এদের একদল হলো যারা জনমানবের ঘুমের কালে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে।
শবেবরাতে কী ধরনের ইবাদত করতে হয় :শবেবরাত, শবেকদর ইত্যাদিতে কোনো ধরনের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি নেই। বিশেষ ধরনের কোনো নামাজ নেই। অদ্বিতীয় আল্লাহর দরবারে বিনয়াবনত হওয়াই ইবাদত। তা নামাজ, আল কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিল যে কোনো পন্থায় হতে পারে।
শাবান মাস ও অর্ধমাসের ফজিলতের কারণ :শাবান মাস হলো রমজান মাসের আগের মাস। রমজান মাসের অসীম ফজিলতের কথা বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য উৎস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাস থেকেই বরকতের দোয়া শুরু করে দিতেন বলে বর্ণিত। রমজান মাসের ফজিলতেই শাবান মাস বরকতময়। শাবান মাস এলেই আমাদের প্রিয় নবী রমজান মাসের দিনক্ষণগুলো গণনা শুরু করে দিতেন। আসুন, আমরা পুরো শাবান মাসকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। হাদিসে বর্ণিত, শাবান মাস এলেই রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রস্তুতির জন্য কোমর মজবুত করতেন। শুধু ১৫ শাবান নয়, এর পরবর্তী ঘনীভূত দিনগুলোকেও আমরা যেন গুরুত্ব দিই এবং রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
No comments