যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টও জাল by কামরুল হাসান
যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টও (এমআরপি) জাল হচ্ছে। সুরক্ষিত নিরাপত্তাব্যবস্থা সত্ত্বেও এসব পাসপোর্ট জাল করছে একটি চক্র। বিশেষ শাখার অভিবাসন পুলিশ এ ধরনের চারটি জাল পাসপোর্ট জব্দ করেছে। এ নিয়ে দুটি মামলা হয়েছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ এমআরপি জাল করার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করা হয়েছে।
‘ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে এমআরপির ছাপানো অনেক বই চুরি হয়ে গেছে। সেই চুরি করা বই নিয়ে পাসপোর্ট জাল করা হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অভিবাসন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৮ জুন মমতাজ বেগম, সৈয়দ উল্লাহ ও গোলবাহার নামের তিনজন বিজি ০৩৫ বিমানে করে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা পাসপোর্টগুলো পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে তাঁদের যাত্রা স্থগিত করেন। এর কয়েক দিন পর ৩০ জুন মেহেরুননেছা নামের আরেক নারী ইকে-৫৮৩ বিমানযোগে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। তাঁর পাসপোর্ট নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এরপর সেটি জব্দ করে অভিবাসন পুলিশ।
অভিবাসন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম তিনটি পাসপোর্ট জব্দ করার পর মানিক হোসেন নামের এক ব্যক্তি এসে পাসপোর্টগুলো সঠিক এবং যাত্রীরা তাঁর আত্মীয় বলে দাবি করেন। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মানিক নিজেই পাসপোর্ট তৈরির ব্যাপারে দালালি করেন। তাঁর মাধ্যমেই এসব পাসপোর্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া পাসপোর্টধারীদের সবার ঠিকানা ভুয়া। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা)। তবে ওই ঘটনার পর থেকে মানিক গা ঢাকা দিয়েছেন। দ্বিতীয় পাসপোর্টের ব্যাপারে পুলিশ জানতে পারে, শিমুল নামের এক দালাল ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্টটি করে দেন। শিমুলকেও পুলিশ ধরতে পারেনি।
পুলিশের বিশেষ শাখার পরীক্ষাগারে (ডকুমেন্ট অ্যানালাইসিস সেন্টার—ডিএসি) চারটি পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা যায়, এমআরপি পাসপোর্টের ৩৮টি নিরাপত্তা চিহ্নের মধ্যে তিনটি দৃশ্যমান হচ্ছে না। অন্য চিহ্নগুলো সঠিক ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। কর্মকর্তারা এসব পাসপোর্ট দেখে বিস্মিত হন। এরপর ডাকা হয় পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশ-জেভি ও এমআরপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের। তাঁরা জব্দ করা চারটি পাসপোর্ট পরীক্ষা করে বলেন, সব পাসপোর্টই আইরিশ-জেভির মেশিনে তৈরি করা আসল পাসপোর্ট। জাল চক্রটি শুধু জীবনবৃত্তান্তের পাতাটি বদল করেছে। অন্য তথ্য সঠিক। এরপর এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় দুটি মামলা করা হয়।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন সালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় মেহেরুননেছা নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, দালালদের মাধ্যমে তিনি এ পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। অন্য মামলার সব আসামি পলাতক।
বিদেশে ছাপানো পাসপোর্ট কী করে দালাল চক্রের হাতে গেল, জানতে চাইলে পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ এ হাবিব বলেন, তাঁদের ধারণা, আসল পাসপোর্ট কেউ চুরি করেছে। চুরি করা আসল বইয়ের ভেতরের পাতা, যেখানে বাহকের ছবি ও তথ্য থাকে, সেটা বদল করা হচ্ছে। সেই পাতাটি আসল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ছাপা হয়েছে।
তবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ প্রথম আলোর কাছে পাসপোর্ট বই চুরির কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাসপোর্টগুলো অধিদপ্তর থেকে চুরি হয়েছে, নাকি অন্য কোথা থেকে এসেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তাঁর দাবি, অধিদপ্তর থেকে কোনো পাসপোর্ট বই চুরি হয়নি।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ১৯০টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে সব দেশকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসার প্রচলন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই চুক্তির শর্তানুসারে বাংলাদেশ এ প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ৬৬ লাখ পাসপোর্ট ও ১৫ লাখ ভিসা স্টিকার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরের জন্য এ খাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৫২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ ব্যবস্থায় এ পর্যন্ত ২৫ লাখ পাসপোর্ট বই ছাপানোর পর বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের শুরুতে বলা হয়েছিল, এমআরপি পাসপোর্টে ব্যক্তির সব তথ্য বিশেষ সংকেতের মতো করে থাকবে। এতে ব্যক্তির হাতের ছাপও সংযুক্ত থাকবে। এ ব্যবস্থায় কেউ পাসপোর্ট নকল করতে ও একাধিক পাসপোর্ট নিতে পারবে না। কিন্তু প্রকল্প শুরুর দুই বছরের মাথায় সেই ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ল।
‘ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে এমআরপির ছাপানো অনেক বই চুরি হয়ে গেছে। সেই চুরি করা বই নিয়ে পাসপোর্ট জাল করা হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অভিবাসন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৮ জুন মমতাজ বেগম, সৈয়দ উল্লাহ ও গোলবাহার নামের তিনজন বিজি ০৩৫ বিমানে করে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা পাসপোর্টগুলো পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে তাঁদের যাত্রা স্থগিত করেন। এর কয়েক দিন পর ৩০ জুন মেহেরুননেছা নামের আরেক নারী ইকে-৫৮৩ বিমানযোগে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। তাঁর পাসপোর্ট নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এরপর সেটি জব্দ করে অভিবাসন পুলিশ।
অভিবাসন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম তিনটি পাসপোর্ট জব্দ করার পর মানিক হোসেন নামের এক ব্যক্তি এসে পাসপোর্টগুলো সঠিক এবং যাত্রীরা তাঁর আত্মীয় বলে দাবি করেন। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মানিক নিজেই পাসপোর্ট তৈরির ব্যাপারে দালালি করেন। তাঁর মাধ্যমেই এসব পাসপোর্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া পাসপোর্টধারীদের সবার ঠিকানা ভুয়া। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা)। তবে ওই ঘটনার পর থেকে মানিক গা ঢাকা দিয়েছেন। দ্বিতীয় পাসপোর্টের ব্যাপারে পুলিশ জানতে পারে, শিমুল নামের এক দালাল ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্টটি করে দেন। শিমুলকেও পুলিশ ধরতে পারেনি।
পুলিশের বিশেষ শাখার পরীক্ষাগারে (ডকুমেন্ট অ্যানালাইসিস সেন্টার—ডিএসি) চারটি পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা যায়, এমআরপি পাসপোর্টের ৩৮টি নিরাপত্তা চিহ্নের মধ্যে তিনটি দৃশ্যমান হচ্ছে না। অন্য চিহ্নগুলো সঠিক ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। কর্মকর্তারা এসব পাসপোর্ট দেখে বিস্মিত হন। এরপর ডাকা হয় পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশ-জেভি ও এমআরপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের। তাঁরা জব্দ করা চারটি পাসপোর্ট পরীক্ষা করে বলেন, সব পাসপোর্টই আইরিশ-জেভির মেশিনে তৈরি করা আসল পাসপোর্ট। জাল চক্রটি শুধু জীবনবৃত্তান্তের পাতাটি বদল করেছে। অন্য তথ্য সঠিক। এরপর এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় দুটি মামলা করা হয়।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন সালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় মেহেরুননেছা নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, দালালদের মাধ্যমে তিনি এ পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। অন্য মামলার সব আসামি পলাতক।
বিদেশে ছাপানো পাসপোর্ট কী করে দালাল চক্রের হাতে গেল, জানতে চাইলে পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ এ হাবিব বলেন, তাঁদের ধারণা, আসল পাসপোর্ট কেউ চুরি করেছে। চুরি করা আসল বইয়ের ভেতরের পাতা, যেখানে বাহকের ছবি ও তথ্য থাকে, সেটা বদল করা হচ্ছে। সেই পাতাটি আসল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ছাপা হয়েছে।
তবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ প্রথম আলোর কাছে পাসপোর্ট বই চুরির কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাসপোর্টগুলো অধিদপ্তর থেকে চুরি হয়েছে, নাকি অন্য কোথা থেকে এসেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তাঁর দাবি, অধিদপ্তর থেকে কোনো পাসপোর্ট বই চুরি হয়নি।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ১৯০টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে সব দেশকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসার প্রচলন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই চুক্তির শর্তানুসারে বাংলাদেশ এ প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ৬৬ লাখ পাসপোর্ট ও ১৫ লাখ ভিসা স্টিকার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরের জন্য এ খাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৫২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ ব্যবস্থায় এ পর্যন্ত ২৫ লাখ পাসপোর্ট বই ছাপানোর পর বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের শুরুতে বলা হয়েছিল, এমআরপি পাসপোর্টে ব্যক্তির সব তথ্য বিশেষ সংকেতের মতো করে থাকবে। এতে ব্যক্তির হাতের ছাপও সংযুক্ত থাকবে। এ ব্যবস্থায় কেউ পাসপোর্ট নকল করতে ও একাধিক পাসপোর্ট নিতে পারবে না। কিন্তু প্রকল্প শুরুর দুই বছরের মাথায় সেই ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ল।
No comments