রম্য-আমার ভাষায় আমার অধিকার by রণজিৎ বিশ্বাস
অন্য ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজিতে ভুল করলে আমরা যত লজ্জা পাই, বাংলার বেলায় ততটা পাই না। এটি আমাদের উদারতা ভাষা নিয়ে আজ সামান্য কথা বলব। এই দু'চারটে। আপত্তি নেই তো আপনার? : কী যে বলেন না বলেন। আপত্তি থাকবে কেন আমার। কথাই তো আমার জীবিকা।
: বাংলা ভাষার প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি কী দেখাই?
:বাংলা ভাষার প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি যা দেখাই, তাতে কোনো খরচপাতি নেই। অবহেলা।
: এর কারণ কী হতে পারে?
:এর কারণ, এটি আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার ওপর আমাদের প্রচণ্ড অধিকার আছে। আমরা এর প্রতি অবহেলা দেখাব না তো দেখাব আর কিসের প্রতি। ভাষাটিকে আমরা ভালোবাসি। এর জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। যাকে ভালোবাসা যায়, যার জন্য প্রাণ দেওয়া যায়, তাকে অবহেলাও করা যায়। শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে।
আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, অন্য ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজিতে ভুল করলে আমরা যত লজ্জা পাই, বাংলার বেলায় ততটা পাই না। এটি আমাদের উদারতা। পৃথিবীতে খুব বেশি লোকের এ উদারতা নেই। অথচ আমাদের এই উদারতার কোনো মূল্যায়ন হয় না।
: আপনি নিজে আপনার লেখায় বলায় উচ্চারণে প্রক্ষেপণে বর্ণনে এবং উপস্থাপনে ও বানানে পর্যাপ্ত ভুল তো নিতিনিত্য করেই চলেছেন।
: চলেছি! সন্দেহাতীতভাবে চলেছি। ভুলের যে চারটি প্রকার আছে_ ধারণাগত ভ্রান্তি, ব্যাকরণগত ভ্রান্তি, ধ্বনিগত ভ্রান্তি ও বানানগত ভ্রান্তি_ সব ধরনের ভুল আমাকে বড় আদরে সোহাগে জড়িয়ে রাখে।
: তা রাখুক, মাত্র একটি দিনের দেখা শোনা ও পড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আপনাকে ত্রুটি নির্দেশ করতে হবে। করবো
কী নমুনা পেলেন?
:'নিরবচ্ছিন্ন'র জায়গায় পেলাম 'নিরবিচ্ছিন্ন', 'ধরিত্রী'র জায়গায় 'ধারিত্রী', নদীর 'নাব্যতা'র জায়গায় নদীর 'নব্যতা', 'স্রোতস্বিনী'র জায়গায় 'স্রুতস্বিনী', 'দরিদ্রতা'র জায়গায় 'দারিদ্রতা', 'আপামর'-এর জায়গায় 'অপামর', 'সংস্কৃতি'র জায়গায় 'সাইংস্কৃতি', 'আনুষঙ্গিক'-এর জায়গায় 'আনুষাঙ্গিক', 'হেনস্থা'র জায়গায় 'হেনস্থ', 'জীপ'-এর জায়গায় 'জীপগাড়ি' (জীপ নিজেই একটি গাড়ি হওয়ার পরও) এবং 'ডেইলি লাইফ'-এর জায়গায় 'দৈনিক ডেইলি লাইফ'।
ধ্বনিগত কিংবা উচ্চারণগত ত্রুটির মধ্যে পেয়েছি _'ছত্রিশ'-এর জায়গায় 'ছয়ত্রিশ', 'সাঁইত্রিশ'-এর জায়গায় 'সাতত্রিশ', 'সাতষট্টি'র জায়গায় 'সাষট্টি', 'সাংবাদিক'-এর জায়গায় 'সাম্বাদিক' (হাম্বা হাম্বা রবের ধাঁচে), 'ঊনত্রিশ'-এর জায়গায় 'উণ্তিরিশ', 'দুর্গত'র জায়গায় 'দুর্গত্', 'প্রগাঢ়'-এর জায়গায় 'প্রগাঢ়্'-ও 'মঞ্চ'র জায়গায় 'মঞ্চ্', 'উদ্যোগ'-এর জায়গায় 'উদ্দেগ', 'ত্রুটি'র জায়গায় 'ক্রটি', 'সত্তুর'-এর জায়গায় 'সউত্তুর', 'জনৈক'-এর জায়গায় 'জৈনক', 'আহত'র জায়গায় 'আহত্', 'নিহত'র জায়গায় 'নিহত্' ও 'জ্যেষ্ঠ'র জায়গায় 'জৈষ্ঠ'।
থার্ড টাইপের গণ্ডগোল পেয়েছে কলোকেশান (ঈড়ষষড়পধঃরড়হ)-এ, শব্দের সঙ্গে শব্দের সাযুজ্য বিধানে। যেমন 'প্রধান অতিথি'র জায়গায় 'প্রধান মেহমান', 'সুপ্রভাত'-এর জায়গায় 'শুভ সকাল', 'সৌজন্য সাক্ষাৎ'-এর জায়ঘায় 'সৌজন্য দেখা' এবং 'নজরুলগীতি'র জায়গায় 'নজরুলসঙ্গীত'।
: আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন, 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' হয়ে যাবে 'রবীন্দ্রগীতি'।
: হতেই পারে। এর পেছনে অন্য ধরনের একটি প্রবণতা কাজ করে। আমি বরং আরেকটা উপদ্রবের কথা বলি। বুঝতে পারি না, রেডিও-টেলিভিশনের টক শোতে এবং বড় বড় লোকের মুখে এখনও শুনতে হয়_ 'অসুবিধা হইছে', 'চাপায়া রাখছে', 'তদন্তে ঘাপলা আছে', 'আত্মাহুতি দিছে', 'হাইরা গেলে আমাদের কী করার আছে', 'আমরা রঙমারামারিতে নাই' ইত্যাদি।
প্রমিত বাংলার এমন দশা দেখতে দেখতে আমাদের শুনতে হয়_ ইনারা/ইনিরা, তিনারা/তিনিরা ও যিনারা/যিনিরা ইত্যাদিও।; কেমন লাগে শুনতে?
: মন্দ নয়।
রণজিৎ বিশ্বাস : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
:বাংলা ভাষার প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি যা দেখাই, তাতে কোনো খরচপাতি নেই। অবহেলা।
: এর কারণ কী হতে পারে?
:এর কারণ, এটি আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার ওপর আমাদের প্রচণ্ড অধিকার আছে। আমরা এর প্রতি অবহেলা দেখাব না তো দেখাব আর কিসের প্রতি। ভাষাটিকে আমরা ভালোবাসি। এর জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। যাকে ভালোবাসা যায়, যার জন্য প্রাণ দেওয়া যায়, তাকে অবহেলাও করা যায়। শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে।
আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, অন্য ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজিতে ভুল করলে আমরা যত লজ্জা পাই, বাংলার বেলায় ততটা পাই না। এটি আমাদের উদারতা। পৃথিবীতে খুব বেশি লোকের এ উদারতা নেই। অথচ আমাদের এই উদারতার কোনো মূল্যায়ন হয় না।
: আপনি নিজে আপনার লেখায় বলায় উচ্চারণে প্রক্ষেপণে বর্ণনে এবং উপস্থাপনে ও বানানে পর্যাপ্ত ভুল তো নিতিনিত্য করেই চলেছেন।
: চলেছি! সন্দেহাতীতভাবে চলেছি। ভুলের যে চারটি প্রকার আছে_ ধারণাগত ভ্রান্তি, ব্যাকরণগত ভ্রান্তি, ধ্বনিগত ভ্রান্তি ও বানানগত ভ্রান্তি_ সব ধরনের ভুল আমাকে বড় আদরে সোহাগে জড়িয়ে রাখে।
: তা রাখুক, মাত্র একটি দিনের দেখা শোনা ও পড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আপনাকে ত্রুটি নির্দেশ করতে হবে। করবো
কী নমুনা পেলেন?
:'নিরবচ্ছিন্ন'র জায়গায় পেলাম 'নিরবিচ্ছিন্ন', 'ধরিত্রী'র জায়গায় 'ধারিত্রী', নদীর 'নাব্যতা'র জায়গায় নদীর 'নব্যতা', 'স্রোতস্বিনী'র জায়গায় 'স্রুতস্বিনী', 'দরিদ্রতা'র জায়গায় 'দারিদ্রতা', 'আপামর'-এর জায়গায় 'অপামর', 'সংস্কৃতি'র জায়গায় 'সাইংস্কৃতি', 'আনুষঙ্গিক'-এর জায়গায় 'আনুষাঙ্গিক', 'হেনস্থা'র জায়গায় 'হেনস্থ', 'জীপ'-এর জায়গায় 'জীপগাড়ি' (জীপ নিজেই একটি গাড়ি হওয়ার পরও) এবং 'ডেইলি লাইফ'-এর জায়গায় 'দৈনিক ডেইলি লাইফ'।
ধ্বনিগত কিংবা উচ্চারণগত ত্রুটির মধ্যে পেয়েছি _'ছত্রিশ'-এর জায়গায় 'ছয়ত্রিশ', 'সাঁইত্রিশ'-এর জায়গায় 'সাতত্রিশ', 'সাতষট্টি'র জায়গায় 'সাষট্টি', 'সাংবাদিক'-এর জায়গায় 'সাম্বাদিক' (হাম্বা হাম্বা রবের ধাঁচে), 'ঊনত্রিশ'-এর জায়গায় 'উণ্তিরিশ', 'দুর্গত'র জায়গায় 'দুর্গত্', 'প্রগাঢ়'-এর জায়গায় 'প্রগাঢ়্'-ও 'মঞ্চ'র জায়গায় 'মঞ্চ্', 'উদ্যোগ'-এর জায়গায় 'উদ্দেগ', 'ত্রুটি'র জায়গায় 'ক্রটি', 'সত্তুর'-এর জায়গায় 'সউত্তুর', 'জনৈক'-এর জায়গায় 'জৈনক', 'আহত'র জায়গায় 'আহত্', 'নিহত'র জায়গায় 'নিহত্' ও 'জ্যেষ্ঠ'র জায়গায় 'জৈষ্ঠ'।
থার্ড টাইপের গণ্ডগোল পেয়েছে কলোকেশান (ঈড়ষষড়পধঃরড়হ)-এ, শব্দের সঙ্গে শব্দের সাযুজ্য বিধানে। যেমন 'প্রধান অতিথি'র জায়গায় 'প্রধান মেহমান', 'সুপ্রভাত'-এর জায়গায় 'শুভ সকাল', 'সৌজন্য সাক্ষাৎ'-এর জায়ঘায় 'সৌজন্য দেখা' এবং 'নজরুলগীতি'র জায়গায় 'নজরুলসঙ্গীত'।
: আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন, 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' হয়ে যাবে 'রবীন্দ্রগীতি'।
: হতেই পারে। এর পেছনে অন্য ধরনের একটি প্রবণতা কাজ করে। আমি বরং আরেকটা উপদ্রবের কথা বলি। বুঝতে পারি না, রেডিও-টেলিভিশনের টক শোতে এবং বড় বড় লোকের মুখে এখনও শুনতে হয়_ 'অসুবিধা হইছে', 'চাপায়া রাখছে', 'তদন্তে ঘাপলা আছে', 'আত্মাহুতি দিছে', 'হাইরা গেলে আমাদের কী করার আছে', 'আমরা রঙমারামারিতে নাই' ইত্যাদি।
প্রমিত বাংলার এমন দশা দেখতে দেখতে আমাদের শুনতে হয়_ ইনারা/ইনিরা, তিনারা/তিনিরা ও যিনারা/যিনিরা ইত্যাদিও।; কেমন লাগে শুনতে?
: মন্দ নয়।
রণজিৎ বিশ্বাস : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
No comments