জীবন নিয়ে এই হেলাফেলার দায় কে নেবে?-ছানি কাটতে চোখ নষ্ট

ঘটনাটাকে কেবল হরিষে বিষাদ কিংবা মধুতে বিষ বললে কম বলা হয়, এটা সরাসরি জীবন নিয়ে হেলাফেলা। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে চোখের ছানি কাটার খেসারত হিসেবে চোখের সংক্রমণে খোদ দৃষ্টিশক্তিই হারাতে বসেছেন ১৮ জন। কারণ নিয়ে বিতর্ক চললেও পরিবেশটা যে অবহেলার ছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।


যাঁরা স্বেচ্ছাসেবী বলে গর্ব করেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের মারাত্মক অবহেলা প্রত্যাশিত নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর ভিশন বাংলাদেশ প্রকল্প কীভাবে ভিশন কিলার হয়ে উঠল, তা খতিয়ে দেখা চাই।
বিনা মূল্যে চোখের ছানি কাটা একটি জনপ্রিয় এনজিও ও সরকারি কর্মসূচি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও সাইটসেভার্সের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে সহায়তা দিচ্ছে সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার কর্মসূচি। কিন্তু চিকিৎসাসেবার অপরিহার্য উপাদান হলো সতর্কতা ও সেবার মানসিকতা। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে যে চিকিৎসক ছানি কাটার অপারেশন করেছেন, তাঁর মধ্যে এসবের বালাই ছিল না। তারই খেসারত দিতে হলো ১৮ জন দরিদ্র গ্রামবাসীকে। তাঁরা এখন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসারত এবং বেশির ভাগেরই দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সিলেট অঞ্চলে এক লাখ লোকের ছানি কাটার কর্মসূচির ইতিমধ্যে ৫৬ হাজার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দাবি, এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। কিন্তু তাঁরা পরিষ্কার করেননি, কতজন চিকিৎসককে দিয়ে, কতটি অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার করে ছানি কাটার অপারেশন চালানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাইকে প্রচার করে মাইক্রোবাসে করে রোগীদের নেওয়া হলেও স্বজনদের সঙ্গে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি অপারেশনের আগে ডায়াবেটিসের মাত্রাসহ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়নি। জাসপাস নামের যে হাসপাতালে এই অপারেশন করা হয়েছে, সেখানকার পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত ছিল না। তা ছাড়া এক রাতে একনাগাড়ে ৫২ জনের ছোখের ছানি মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে করানোর কী ব্যাখ্যা দেবেন উদ্যোক্তারা? এসব দেখার দায়িত্ব সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার কর্মসূচির কর্মকর্তারাও অস্বীকার করতে পারেন না।
আমরা আশা করব, অবহেলার শিকার প্রত্যেক ব্যক্তি উপযুক্ত চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ পাবেন এবং ব্র্যাকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ভবিষ্যতে আর জীবন নিয়ে হেলাফেলা করবে না।

No comments

Powered by Blogger.