এলএইচসির সদর-অন্দর
বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি)। এটি জেনেভা শহরের কাছে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭৫ মিটার গভীরে অবস্থিত একটি কংক্রিটে ঘেরা সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গকে বেষ্টন করে রেখেছে চারটি বিশাল আকৃতির ল্যাব। সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার।
এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি সবচেয়ে জটিল ও শ্রেষ্ঠ গবেষণার ফসল হিসেবে বিবেচিত এলএইচসি। ২০০৮ সালে এটির নির্মাণ শেষ হতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৬৩০ কোটি ডলার। এলএইচসি উদ্ভাবন করেছে ইউরোপের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সংস্থা সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)।
এলএইচসির কর্মপদ্ধতি হলো, ২৭ কিলোমিটার সুড়ঙ্গে প্রোটনের দুটি বিপরীতমুখী তরঙ্গস্রোত প্রবাহিত হবে। সঙ্গে কণাগুলোর গতি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এর গতি আলোর গতির ৯৯ দশমিক ৯৯৯৯ শতাংশের কাছাকাছি পেঁৗছায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে লাখো কোটি প্রোটন সেকেন্ডে ১১ হাজার ২৪৫ বার পাক খায় ওই সুড়ঙ্গে।
বৃত্তাকার পথে প্রোটনগুলোকে ঘোরায় বিশেষ শক্তিশালী সুপরিবাহী চুম্বক। ফলে তার তাপমাত্রা মহাশূন্যের চেয়েও কমে যায়। এরপর এই প্রোটনস্রোতকে 'বাঁক খাইয়ে' সুড়ঙ্গের চারটি বিশাল চেম্বারে ঢোকানো হয়, সেখানে পরস্পর ধাক্কা খায় কণাগুলো। এই সংঘর্ষ খুবই অল্প সময়ের জন্য সূর্যের চেয়েও এক লাখ গুণ বেশি তাপমাত্রা তৈরি করে, যা 'বিগ ব্যাং'-এর (মহাবিস্ফোরণ) অব্যবহিত পরের অবস্থা। প্রসঙ্গত, এক হাজার ৩৭০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাংগের মাধ্যমে এই মহাজগতের সৃষ্টি হয়েছে।
এলএইচসির প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার পর অতি পারমাণবিক হিগ্স-বোসন কণা তৈরি হয়। এই কণাকে 'ঈশ্বর কণা'ও বলা হয়। এটাই একমাত্র মৌলিক কণা, যাকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। চূড়ান্ত পর্যায়ে এলএইচসির ভেতর প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ কোটি বার সংঘর্ষ হয় প্রোটনগুলোর। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা ১৪ টেরাইলেকট্রন ভোল্ট বা টিইভির সমান। তবে এর পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম কম। একটি উড়ন্ত মশার গতির (মোশন) সমপরিমাণ এক টিইভি। এই অস্থায়ী অতি পারমাণবিক হিগস-বোসন কণাকে ত্রিমাত্রিক রূপ দেয় এলএইচসির চেম্বারগুলো। আর ভূপৃষ্ঠের ওপর তিন হাজার কম্পিউটারে হিগস-বোসন কণার অস্তিত্ব ধরার এই মহাযজ্ঞের ওপর নজর রাখেন কয়েক হাজার বিজ্ঞানী। সূত্র : এএফপি, জিনিউজ।
No comments