হাতিয়া দ্বীপ-সন্ত্রাসের জনপদের অপবাদ ঘুচুক
হা তিয়া দ্বীপটি নোয়াখালী জেলায়। দ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্বে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আর একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে মেঘনা। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলা করেই টিকে রয়েছে এ এলাকার সাহসী মানুষগুলো। এ দ্বীপের একটি অংশ নিঝুম দ্বীপ নামে পরিচিত।
তার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর তট থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মতোই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চল এবং সেখানকার হরিণ ও বানরের মুক্ত বিচরণ ক্ষেত্র পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ ক্ষেত্রের কারণে নয়, মধ্য মে'র উত্তপ্ত দিনগুলোতে হাতিয়া সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে। আর এর দায় পুরোপুরিই বর্তায় ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ওপর। হাতিয়া সংসদীয় আসনে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল আজিম। তিনি নবম জাতীয় সংসদের একমাত্র নির্দলীয় সংসদ সদস্য। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোটের সদস্যরা কারণে-অকারণে সংসদ অধিবেশন বর্জন করে চললেও তিনি নিয়মিত সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশের সঙ্গে বিরোধ মাঝে মধ্যেই প্রকট হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী উভয়েরই কমবেশি দায় রয়েছে। সংঘর্ষের মূল কারণ কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব। এ এলাকা মৎস্যসম্পদের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু নদীতে দাপট-দৌরাত্ম্য রয়েছে সন্ত্রাসীদের। তাদের নজরানা না দিয়ে মাছ ধরা ও মাছের ব্যবসা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সমুদ্র ও নদীতে নিয়মিত জেগে ওঠা চরের কর্তৃত্বের জন্যও বিবাদ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের এই ধারায় যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কোনো দলই এর বাইরে থাকছে না। তবে সর্বশেষ বিবাদের পরিণতিতে সংসদ সদস্যের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার সম্পূর্ণ দায় হাতিয়া আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শাসক দলেরই বেশি থাকে। হাতিয়ার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় এবং তা চারদিন বহাল থাকে। বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রত্যাহার করা হলেও পরিস্থিতি রয়েছে উত্তপ্ত। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। মামলা হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সক্রিয় রয়েছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। বাস মালিকরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা তৎপর থাকায় রাজপথে যানবাহন নামানো সম্ভব নয়। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে শাসক দলকেই এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যও তার দায় এড়াতে পারেন না। দ্বীপ ও চর নিয়ে গঠিত হাতিয়ায় স্বস্তির পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য চাই 'চর দখলের' মনোভাবের পরিবর্তনসাধন। এ কাজে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে মুখ্য ভূমিকা। হাতিয়া মূল ভূখণ্ড থেকে কিছুটা দূরে হলেও তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এখন দেশের বাদবাকি এলাকা থেকে মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। সেখানে 'রাজায় রাজায় যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ' চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। আধিপত্য স্থাপন ও হানাহানির অপসংস্কৃতি থেকে তাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। হাতিয়ার রয়েছে প্রকৃতির দান অঢেল সম্পদ ও সৌন্দর্য। আমরা চাই এ সুন্দর দ্বীপটি সন্ত্রাসের জন্য নয়, বরং এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই আলোচনায় থাকুক সর্বদা।
No comments