কায়রো সম্মেলনে আসাদবিরোধীদের মধ্যে বিভক্তি, হাতাহাতি-আসাদকে রাশিয়ায় নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা!

সিরিয়ায় চলমান সংকট নিরসনে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে গত সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে আরব লিগ। বিরোধী নেতারা আসাদবিহীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিদ্রোহী সেনাদের সংগঠন 'ফ্রি সিরিয়ান আর্মি'কে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।


তবে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তর্ক-বিতর্ক এবং নেতাদের মধ্যে হাতাহাতির মধ্য দিয়ে এ বৈঠক শেষ হয়।
কায়রোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিরিয়ার বিভিন্ন দল, ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রায় ২৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। মোটা দাগে দুটি বিষয়ে বিরোধী নেতারা একমতে পৌঁছান। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ঐক্যবদ্ধ জোট গঠনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আলোচনা থেকে অনেকে বেরিয়ে গেছেন এবং আলোচনার একপর্যায়ে নেতারা মারামারি পর্যন্ত করেছেন।
সিরিয়ার মানবাধিকারকর্মী ওয়ালিদ আল-বুনি্ন বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সম্মেলনে অনেক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনেকগোষ্ঠী সম্মেলনস্থল থেকে বেরিয়ে যায়।'
আরব লিগের কর্মকর্তারা জানান, গত মঙ্গলবার সম্মেলনের শেষ দিনে হট্টগোল শুরু করে সিরিয়ার কুর্দিস ন্যাশনাল কাউন্সিল। চুক্তিতে কুর্দিদের ভূমিকা স্পষ্ট করা হয়নি_এ অভিযোগ তারা সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী অন্যদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার প্রক্রিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ করে। তবে তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনামলের অবসান এবং আসাদবিহীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সমর্থনের ব্যাপারেও ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৩০ জুন) সরকারি ও বিরোধী নেতাদের সমন্বয়ে সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে কফি আনানের প্রস্তাবে সম্মতি দেন বিশ্ব নেতারা। এর পরই সিরিয়ার বিরোধীদের জোটবদ্ধ করতে আরব লিগ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আসাদকে রাশিয়ায় নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা!
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বাশার আল-আসাদকে রাশিয়ায় নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। আসাদকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাও করছে। গতকাল বুধবার রাশিয়ার পত্রিকা কোমারসান্ত-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন এ দাবি করা হয়।
তবে রাশিয়া এমন কথা নাকচ করেছে। তারা বলেছে, আসাদকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা চলছে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই রায়কভ বলেন, 'সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে আসাদকে সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করে পশ্চিমারা। তবে রাশিয়া এটাও জানে, রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার মাত্র ১০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে আসাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাশিয়ার কূটনীতিক সূত্রের বরাত দিয়ে কোমারসান্ত জানায়, আসাদকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পশ্চিমা দেশগুলো 'সক্রিয় ভূমিকা' পালন করছে। তবে আসাদকে আশ্রয় দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। সূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.