লাইলাতুল বরাতের তাৎপর্য by মাওলানা এম এ করিম ইবনে মছব্বির
বছর পরিক্রমায় আবারও আমাদের মুসলিম উম্মাহর মাঝে উপনীত হয়েছে বরকতময় মাস শাবান। প্রিয়নবী (সা.) মুমিন বান্দাদের পবিত্র রমজানুল মোবারককে স্বাগত জানানো এবং চিত্তাকর্ষক মানসিকতা সৃষ্টি ও আসন্ন রমজান মাসে অবারিত নিয়ামতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, যা নবী করিম (সা.)
রজব মাসের শুরুতেই পাঠ করতেন- 'হে আল্লাহ, তুমি আমাদের বরকত দাও রজব ও শাবান মাসে এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দাও। হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাক ১৫ শাবান রাতে তাঁর বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মুশরিক ও পরস্পর বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।'
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 'আল্লাহপাক শাবানের মধ্যবর্তী রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। মুশরিক এবং হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।' শাবান শব্দটি আরবি 'শা'বুন' শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ বর্ষণ করা, ছড়ানো, শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট হওয়া, বিস্তৃতি লাভ করা।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম (সা.) ঘোষণা করেন, রমজান শরিফ আল্লাহপাকের মাস (অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা আল্লাহপাক ফরজ করেছেন) আর শাবান হলো আমার মাস (অর্থাৎ এ মাসে প্রিয়নবী (সা.) রোজা ও নফল ইবাদত বেশি বেশি করেছেন), তাই শাবান মাসের ইবাদত গুনাহ থেকে পরিত্রাণকারী আর রমজান গুনাহ মোচনকারী। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, 'শাবান আমার মাস, আর রজব আল্লাহপাকের মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। শাবান মাস মানুষের গুনাহ দূর করে। আর রমজান গুনাহ থেকে পবিত্র করে।' হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকদাছ (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরামরা (রা.) শাবান মাসের চাঁদ দেখার পরই কোরআন পাঠে মশগুল হয়ে যেতেন। ধনীরা জাকাত দান করতেন, যাতে দুস্থ, অসহায় ও গরিব লোকজন রমজানের রোজা রাখতে প্রস্তুত হতে পারে। শাসনকর্তারা বন্দিদের এনে শাস্তির উপযুক্তদের শাস্তি প্রদান করতেন এবং অন্যদের ছেড়ে দিতেন। এরপর রমজানের চাঁদ দেখলেই গোসল করে এতেকাফে বসে যেতেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে রমজান ও শাবান মাস ছাড়া ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তিনি শাবান মাসে অধিকাংশ দিন রোজা অবস্থায় অতিবাহিত করতেন।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হুজুরেপাক (সা.)-কে আরজ করা হয়েছিল ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.), রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা কোনটি? নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে রোজা রাখা (তিরমিজি)।
সুতরাং রজব মাস পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আত্মরক্ষার মাস এবং শাবান মাস ইবাদত করা এবং রমজানের মাহাত্ম্য অবলোকনের মাস। যে ব্যক্তি রজব মাসে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করল না এবং শাবান মাসে ইবাদত ও রমজানের মাহাত্ম্য অবলোকন করল না, সে অনর্থক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রইল। রজব মাস শস্যক্ষেত্রে বীজ রোপণের মাস, শাবান মাস সেই শস্যক্ষেত্রে পানি ঢালার মাস এবং রমজান মাসে সেই শস্যক্ষেতের ফসল বা মেহনতের লাভ উঠানোর মাস। অর্থাৎ রহমত, মাগফিরাত এবং দোজখ থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাওয়ার মাস। ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণের মাস।
লাইলাতুল বরাত বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান অর্থাৎ মুক্তির রজনী বা শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতকে ফার্সি ভাষায় শবেবরাত বলা হয়। 'শব' অর্থ রাত, আর বারাত অর্থ মুক্তি, পরিত্রাণ, ভাগ্য ইত্যাদি।
এ বরকতময় রজনীতে আল্লাহপাক অসংখ্য অগণিত পাপী গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন এবং দোজখীদের শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এ জন্য এ রাতকে শবেবরাত বা মুক্তির রজনী নামে অভিহিত করা হয়।
যেসব রাতের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে শবেমেরাজ, শবেবরাত, শবেকদর ও দুই ঈদের রাত। কোরআন শরিফে শবেবরাতকে লাইলাতুম মুবারাকা বলা হয়েছে। আর হাদিসে 'লাইলাতুল বারাত' বা ভাগ্যরজনী বলা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীয়ে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একদা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে আগমন করে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.), আপনি নিজের মাথা আসমানের দিকে উত্তোলন করুন। আমি মাথা উঠিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, বেহেশতের সব দরজা খোলা অবস্থায় রয়েছে। প্রথম দরজায় একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে রুকু করছে তার জন্য সুসংবাদ। দ্বিতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে সিজদা করছে তার জন্য সুসংবাদ, তৃতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে দোয়া করছে তার জন্য সুসংবাদ। চতুর্থ দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে জিকির করছে তার জন্য সুসংবাদ। পঞ্চম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করছে তার জন্য সুসংবাদ। ষষ্ঠ দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, এ রাতে সব মুসলমানের জন্য সুসংবাদ। সপ্তম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যদি কারো কিছু প্রার্থনা করার থাকে, তাহলে সে করুক, তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ করা হবে এবং অষ্টম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনকারী কি কেউ আছে? যার আবেদন মঞ্জুর করা হবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তখন হজরত জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম- এসব দরজা কতক্ষণ পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি বললেন, রাতের প্রথম থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। অতঃপর আরো বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.), এ রাত অর্থাৎ ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহপাক এমন অধিকসংখ্যক বান্দাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি প্রদান করেন, যতসংখ্যক লোম বনু কলবের বকরীর পশমের রয়েছে।
অপর একটি হাদিসে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) একদিন (শাবানের ১৫ তারিখ রাতে) আমার ঘরে রাতযাপনের নির্ধারিত তারিখ ছিল। তাই প্রিয়নবী (সা.) আমার কক্ষে এসে কাপড় খুলতে লাগলেন, তখনো তিনি কাপড় পুরোপুরি খুলতে পারেননি; কিন্তু আবার পরিধান করে ফেললেন, যা আমার ওপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে (যা নারীদের হয়ে থাকে)। আমি ধারণা করলাম, তিনি অবশ্যই আমার কোনো সতিনের কাছে যাবেন। তাই আমিও তাঁর পেছনে বের হয়ে তালাশ করতে গিয়ে 'বাকীয়ে গারকাদ' (মুসলমানদের কবরস্থানে তাঁকে দেখতে পেলাম)। তিনি মুমিন নর-নারী এবং শহীদদের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন।
অতএব এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, শবেবরাতে কবরস্থানে গমন করা, সেখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মাগফিরাত কামনা করা এবং আলমে বরজখের বাসিন্দাদের জন্য সুন্নত তরিকায় মা-বাবা, দাদা-দাদি ও আত্মীয়স্বজনসহ বিশ্বের মুসলিম মিল্লাতের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের ১৫ তারিখ রাত হবে তখন এ রাতে তোমরা ইবাদত করবে এবং তৎপরবর্তী দিনে রোজা রাখবে। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সময় থেকেই আল্লাহপাক পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং তিনি বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমি তার বিপদ মুক্ত করে দেব; এরূপ সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহপাক মুমিন নর-নারীদের আহ্বান করতে থাকেন।
অতএব আজকের এ বরকতময় রাতে আল্লাহপাকের কাছে বেশি বেশি করে ইবাদত করি- সগিরা, কবিরা সব ধরনের গুনাহ মাফের জন্য মোনাজাত করি। আল্লাহপাক আমাদের সবার সহায় হোন।
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 'আল্লাহপাক শাবানের মধ্যবর্তী রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। মুশরিক এবং হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।' শাবান শব্দটি আরবি 'শা'বুন' শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ বর্ষণ করা, ছড়ানো, শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট হওয়া, বিস্তৃতি লাভ করা।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম (সা.) ঘোষণা করেন, রমজান শরিফ আল্লাহপাকের মাস (অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা আল্লাহপাক ফরজ করেছেন) আর শাবান হলো আমার মাস (অর্থাৎ এ মাসে প্রিয়নবী (সা.) রোজা ও নফল ইবাদত বেশি বেশি করেছেন), তাই শাবান মাসের ইবাদত গুনাহ থেকে পরিত্রাণকারী আর রমজান গুনাহ মোচনকারী। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, 'শাবান আমার মাস, আর রজব আল্লাহপাকের মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। শাবান মাস মানুষের গুনাহ দূর করে। আর রমজান গুনাহ থেকে পবিত্র করে।' হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকদাছ (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরামরা (রা.) শাবান মাসের চাঁদ দেখার পরই কোরআন পাঠে মশগুল হয়ে যেতেন। ধনীরা জাকাত দান করতেন, যাতে দুস্থ, অসহায় ও গরিব লোকজন রমজানের রোজা রাখতে প্রস্তুত হতে পারে। শাসনকর্তারা বন্দিদের এনে শাস্তির উপযুক্তদের শাস্তি প্রদান করতেন এবং অন্যদের ছেড়ে দিতেন। এরপর রমজানের চাঁদ দেখলেই গোসল করে এতেকাফে বসে যেতেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে রমজান ও শাবান মাস ছাড়া ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তিনি শাবান মাসে অধিকাংশ দিন রোজা অবস্থায় অতিবাহিত করতেন।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হুজুরেপাক (সা.)-কে আরজ করা হয়েছিল ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.), রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা কোনটি? নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে রোজা রাখা (তিরমিজি)।
সুতরাং রজব মাস পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আত্মরক্ষার মাস এবং শাবান মাস ইবাদত করা এবং রমজানের মাহাত্ম্য অবলোকনের মাস। যে ব্যক্তি রজব মাসে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করল না এবং শাবান মাসে ইবাদত ও রমজানের মাহাত্ম্য অবলোকন করল না, সে অনর্থক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রইল। রজব মাস শস্যক্ষেত্রে বীজ রোপণের মাস, শাবান মাস সেই শস্যক্ষেত্রে পানি ঢালার মাস এবং রমজান মাসে সেই শস্যক্ষেতের ফসল বা মেহনতের লাভ উঠানোর মাস। অর্থাৎ রহমত, মাগফিরাত এবং দোজখ থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাওয়ার মাস। ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণের মাস।
লাইলাতুল বরাত বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান অর্থাৎ মুক্তির রজনী বা শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতকে ফার্সি ভাষায় শবেবরাত বলা হয়। 'শব' অর্থ রাত, আর বারাত অর্থ মুক্তি, পরিত্রাণ, ভাগ্য ইত্যাদি।
এ বরকতময় রজনীতে আল্লাহপাক অসংখ্য অগণিত পাপী গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন এবং দোজখীদের শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এ জন্য এ রাতকে শবেবরাত বা মুক্তির রজনী নামে অভিহিত করা হয়।
যেসব রাতের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে শবেমেরাজ, শবেবরাত, শবেকদর ও দুই ঈদের রাত। কোরআন শরিফে শবেবরাতকে লাইলাতুম মুবারাকা বলা হয়েছে। আর হাদিসে 'লাইলাতুল বারাত' বা ভাগ্যরজনী বলা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীয়ে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একদা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে আগমন করে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.), আপনি নিজের মাথা আসমানের দিকে উত্তোলন করুন। আমি মাথা উঠিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, বেহেশতের সব দরজা খোলা অবস্থায় রয়েছে। প্রথম দরজায় একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে রুকু করছে তার জন্য সুসংবাদ। দ্বিতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে সিজদা করছে তার জন্য সুসংবাদ, তৃতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে দোয়া করছে তার জন্য সুসংবাদ। চতুর্থ দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে জিকির করছে তার জন্য সুসংবাদ। পঞ্চম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করছে তার জন্য সুসংবাদ। ষষ্ঠ দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, এ রাতে সব মুসলমানের জন্য সুসংবাদ। সপ্তম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, যদি কারো কিছু প্রার্থনা করার থাকে, তাহলে সে করুক, তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ করা হবে এবং অষ্টম দরজায় একজন ফেরেশতা ঘোষণা দিচ্ছেন, ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনকারী কি কেউ আছে? যার আবেদন মঞ্জুর করা হবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তখন হজরত জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম- এসব দরজা কতক্ষণ পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি বললেন, রাতের প্রথম থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। অতঃপর আরো বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.), এ রাত অর্থাৎ ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহপাক এমন অধিকসংখ্যক বান্দাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি প্রদান করেন, যতসংখ্যক লোম বনু কলবের বকরীর পশমের রয়েছে।
অপর একটি হাদিসে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) একদিন (শাবানের ১৫ তারিখ রাতে) আমার ঘরে রাতযাপনের নির্ধারিত তারিখ ছিল। তাই প্রিয়নবী (সা.) আমার কক্ষে এসে কাপড় খুলতে লাগলেন, তখনো তিনি কাপড় পুরোপুরি খুলতে পারেননি; কিন্তু আবার পরিধান করে ফেললেন, যা আমার ওপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে (যা নারীদের হয়ে থাকে)। আমি ধারণা করলাম, তিনি অবশ্যই আমার কোনো সতিনের কাছে যাবেন। তাই আমিও তাঁর পেছনে বের হয়ে তালাশ করতে গিয়ে 'বাকীয়ে গারকাদ' (মুসলমানদের কবরস্থানে তাঁকে দেখতে পেলাম)। তিনি মুমিন নর-নারী এবং শহীদদের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন।
অতএব এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, শবেবরাতে কবরস্থানে গমন করা, সেখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মাগফিরাত কামনা করা এবং আলমে বরজখের বাসিন্দাদের জন্য সুন্নত তরিকায় মা-বাবা, দাদা-দাদি ও আত্মীয়স্বজনসহ বিশ্বের মুসলিম মিল্লাতের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের ১৫ তারিখ রাত হবে তখন এ রাতে তোমরা ইবাদত করবে এবং তৎপরবর্তী দিনে রোজা রাখবে। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সময় থেকেই আল্লাহপাক পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং তিনি বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমি তার বিপদ মুক্ত করে দেব; এরূপ সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহপাক মুমিন নর-নারীদের আহ্বান করতে থাকেন।
অতএব আজকের এ বরকতময় রাতে আল্লাহপাকের কাছে বেশি বেশি করে ইবাদত করি- সগিরা, কবিরা সব ধরনের গুনাহ মাফের জন্য মোনাজাত করি। আল্লাহপাক আমাদের সবার সহায় হোন।
No comments