বিয়ার দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় পাকিস্তান!

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে পাকিস্তানে ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিয়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মুরি ব্রুয়ারি। সে সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটি রমরমা ব্যবসা করে এলেও ১৯৭৭ সালে মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান নিষিদ্ধ করে সরকার। তার পর থেকেই কম্পানিটির দুরবস্থা শুরু হয়।


তারা অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী ও দেশটিতে আগত অমুসলিম বিদেশি নাগরিকদের জন্য সীমিত আকারে বিয়ার উৎপাদন করতে থাকে। কিন্তু সেই দুরবস্থার অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন কম্পানিটির কর্তাব্যক্তিরা। কারণ কম্পানিটিকে উৎপাদিত বিয়ার অমুসলিম দেশগুলোতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। মূলত রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের মতো একটি মুসলিম প্রধান দেশে যেখানে মুসলমানদের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করা নিষিদ্ধ, সেখানে সরকার অন্য দেশে রপ্তানির জন্য অ্যালকোহল তৈরি করছে_এই বিষয়টিতে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্ক চলে আসছে। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বহুবার বহু চেষ্টা হয়েছে, কোনোটায় কাজ হয়েছে, আবার কোনোটা ব্যর্থও হয়েছে। কিন্তু সম্পর্কের উন্নতি তেমনটা ঘটেনি। অমুসলিম দেশ হওয়ায় ভারতও রয়েছে পাকিস্তানের বিয়ার রপ্তানির তালিকায়। মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে বিয়ার রপ্তানির অনুমোদনের ঘটনা এমনই সময়ে হয়েছে, যখন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত দেখা গেছে। দুই দেশই সম্প্রতি পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আমদানি কর কমানো ও পরস্পরের কাছ থেকে আমদানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ভারত সফরের পরই পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলে। মুরির বিয়ারের একটা বড় অংশ ভারতে রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরো জোরদার হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মুরি কম্পানির যেকোনো অমুসলিম দেশে বিয়ার রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে, তাদের এই পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হবে ভারত। কারণ, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পাঞ্জাবে মুরির বিয়ারের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এটি বহুদিন ধরেই নিয়মিত চোরাই পথে ভারতে বিক্রি হয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তে ২০১৬ সাল নাগাদ কম্পানিটি প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের বিয়ার বিক্রি করবে। মুরি ব্রুয়ারির প্রধান নির্বাহী ইসফানিয়ার বান্দারা বলেন, 'ব্যবসা বাড়াতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে।'
বান্দারা আরো বলেন, 'সরকার বুঝতে পেরেছে যে দেশে বিয়ার নিষিদ্ধ থাকলেও বিদেশে রপ্তানি নিষিদ্ধ করার কোনো মানে হয় না। অর্থনীতির কথা বিবেচনা করলে এটা ঠিক নয়।' তবে তিনি এ কথাও বলেন যে পাঞ্জাবের বৃহৎ বাজারটির দিকে তাদের লক্ষ্য থাকলেও সেই বাজার ধরা অতটা সহজ হবে না। কারণ ভারত নিজেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় তৈরি করছে। তার পরও তাদের চেষ্টা থাকবে বাজারটি ধরার।
তবে বান্দারা পাকিস্তানে সক্রিয় ইসলামী জঙ্গিদের বিষয়ে শঙ্কিত। এ যাবৎ তাঁদের কম্পানির ভাটিখানায় (ফ্যাক্টরি) কোনো জঙ্গি হামলা না হলেও ভবিষ্যতে যে হবে না, এমনটা মনে করছেন না তিনি। কম্পানিটিতে হামলা না হওয়ার আরেকটি কারণ অবশ্য এটি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দপ্তরের কাছেই অবস্থিত। তার পরও বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সূত্র : লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.