সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয়, চাঁদাবাজি by সেলিম জাহিদ
নিজেদের সরকার-সমর্থক দাবি করে কিছু যুবক রাজধানীর মতিঝিলে জীবন বীমা ভবনের পাশে পাকা স্থাপনায় ‘যুব শ্রমিক লীগ’-এর কার্যালয় বানিয়েছে। বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের দপ্তরগুলো বন্ধ হয়ে গেলে দিনের শেষে কার্যালয়টি খোলা হয়।
এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আশপাশে বসা ফুটপাতের দোকানপাট থেকে শেষবেলায় চাঁদা তোলে তারা। আশপাশের লোকজন জানান, যুব শ্রমিক লীগের এই কার্যালয় থেকে রাজনৈতিক বা সরকারের সমর্থনে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হতে তাঁরা দেখেননি। তবে এখানে সন্ধ্যা থেকে নিয়মিত আড্ডা চলে।
গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক দলের অফিসের নামে ফুটপাত, সরকারি জায়গা দখল করে এ ধরনের স্থাপনা তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। এমন অন্তত ২৫টি কার্যালয়ের আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এই ২৫ কার্যালয়ই ফুটপাত, রাস্তার পাশ, সরকারি জায়গা ও খাল-নালা দখল করে গড়ে উঠেছে।
মতিঝিলের যুব শ্রমিক লীগের নামে চালানো স্থাপনায় গিয়ে কথা হয় এর সভাপতি মুন্না খানের সঙ্গে। তিনি স্বীকার করেন, জায়গাটি সরকারি। চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ফটকাবাজ না। আমাদের কেউ চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে না।’ তাঁদের পেশা কী জানতে চাইলে মুন্না বলেন, ‘মনে করেন, সরকারি অফিসের সিবিএর নেতাদের মাধ্যমে পুরান গাড়ির টুকটাক কাজ আসে, সেগুলো করি। আর গার্মেন্ট শ্রমিকদের সমস্যা হলে ফেস (মোকাবিলা) করি।’
মুন্না খান জানান, যুব শ্রমিক লীগ জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তিনি বলেন, ‘ওরা সিনিয়র, আমরা জুনিয়র।’
জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘সংগঠনে নতুন সদস্য রিক্রুট করতে যুব ও মহিলাদের একটি শাখা করা হয়েছে। কিন্তু আলাদা অফিস করার কোনো অনুমতি নেই তাদের।’
অবৈধ দখল: একাধিক এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, সরকারের পতিত কোনো জায়গায় প্রথমে রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। কয়েক দিন পর সেখানে অস্থায়ী ঘর তুলে আড্ডা বসে। এর ফাঁকে স্থাপনা শক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে একটি-দুটি করে আশপাশে দোকান তুলে তা ভাড়া দেওয়া হয়। আর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিভিন্ন সময়ে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলা হয়।
দেখা যায়, অবৈধ স্থাপনার বেশির ভাগ জায়গাই রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এ ছাড়া ওয়াসা, গণপূর্ত বিভাগ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের জায়গাতেও অনেক দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
বেশির ভাগ কার্যালয় শ্রমিক লীগের: সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয় বানানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে জাতীয় শ্রমিক লীগ। এরপর আছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।
মতিঝিল মেথরপট্টির পাশে রেলের জায়গায় কার্যালয় বানিয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পূর্ব পাশে কার্যালয় বানিয়েছে শেরেবাংলা নগর থানা শ্রমিক লীগ। তালতলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে গণপূর্তের জায়গায় কার্যালয় স্থাপন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগ। তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে রেলের একটি ঘর দখল করে রাখা হয়েছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাইনবোর্ড দিয়ে। কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিংয়ে রেলের জায়গায় কার্যালয় বানিয়েছে শ্রমিক লীগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর পাশে আছে জাতীয় শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয়। এই কার্যালয় ঘিরে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ ও সামনে বাসস্ট্যান্ড আছে। স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা গ্যারেজ ও স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলেন বলে অভিযোগ আছে।
জানতে চাইলে রায় রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘সরকারি জায়গা দখল করে শ্রমিক লীগ কোথাও কার্যালয় বানিয়েছে, এমন অভিযোগ সাড়ে তিন বছরে আমরা পাইনি।’ কিছু এলাকায় শ্রমিক লীগের কার্যালয় স্থাপনের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক লীগের নাম দিয়ে কেউ হয়তো করেছে, কিন্তু এর কোনো স্বীকৃতি নেই। আমরা এটা সমর্থন করি না।’
মহাখালী ও বনানী: মহাখালীর রেলগেট-সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে রেলের জায়গায় পাকা স্থাপনা তৈরি করে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী যুবলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ। যুবলীগের নেতারা আশপাশের দোকান ও খাবারের ঘর থেকে মাসোহারা আদায় করেন বলে অভিযোগ আছে। আর শ্রমিক লীগের নেতারা পরিবহন থেকে চাঁদা তোলেন।
গত রোববার দুপুরে যুবলীগের এই কার্যালয়ে ঢুকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা যুবলীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ তিনজনকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সভাপতি আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি জায়গায় আমাদের কোনো অবৈধ স্থাপনা বা অফিস নেই।’ মহাখালীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়টির কথা জানালে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওটা রেলের জায়গায়। শুনেছি, জায়গাটির জন্য রেলওয়ের কাছে দরখাস্ত দেওয়া আছে।’
চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল বাসার বলেন, ‘আমরা যাদের কমিটিতে রেখেছি, অনেকে চাকরি, ব্যবসা করে; বেকার যুবক খুব কম। এ বিষয়ে আমার কড়া নির্দেশ আছে। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করে দেব।’
বনানীতে রেলের মহানগর টিকিট কাউন্টারের পাশে রেলের জায়গা দখল করে অবৈধ কার্যালয় বানানো হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও শহীদ শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নামে। পাশাপাশি থাকা এই দুই কার্যালয়ের বিরুদ্ধেও আশপাশের দোকান ও নগর পরিবহন কাউন্টার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। তবে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজি করি না। এর প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।’
মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি উন্মুক্ত জায়গায় ত্রিপল টানিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। ডিসিসি ওই জায়গার চারপাশে পথচারীদের বসার জন্য মোজাইকের পাথর দিয়ে চেয়ারের আদলে পাকা স্থাপনা তৈরি করে। সম্প্রতি জায়গাটির মাঝ বরাবর বাঁশের খুঁটি আর ত্রিপল টানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা। এখনো বেড়া দেওয়া হয়নি।
বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে: বুড়িগঙ্গার দুটি সেতুর নিচে ও পাশে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর পাঁচটি কার্যালয় গড়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচে একটি স্তম্ভের গোড়ায় কার্যালয় বানিয়েছে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ। এই জায়গায় এক ব্যবসায়ী চাল রাখতেন। স্থানীয় চায়ের দোকানদার বলেন, ‘দুই দিন হলো টিনের বেড়া দেওয়া শেষ হয়েছে।’
এর পাশের ঘরটি কোতোয়ালি থানা (বিট-৪) পুলিশের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। ঘরের দরজায় লাগানো সাইনবোর্ডে উপপরিদর্শক জহির রায়হানের নাম ও মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে।
সেতুর পশ্চিম পাশে আরেকটি কার্যালয় করেছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ বংশাল থানার নামে।
বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর গোড়ায় পাকা ঘর বানিয়েছে ‘৯০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন’। আর সেতুর নিচে পাকা স্থাপনা দিয়ে শ্যামপুর-কদমতলী থানার প্রধান কার্যালয় বানিয়েছে আওয়ামী ওলামা লীগ।
কার্যালয়ের বাইরে তিনটি সাইনবোর্ডের একটিতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি, একটিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আরেকটিতে স্থানীয় সাংসদ সানজিদা খাতুনের ছবি। মায়া ও সানজিদার সঙ্গে শ্যামপুর থানা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনেরও ছবি আছে।
গত রোববার বিকেলে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কয়েকজন টেলিভিশনে ছায়াছবি দেখছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোথায় আছেন, তাঁরা জানাতে পারেননি।
কার্যালয়ের পাশের এক দোকানদার জানান, প্রতিদিন তাঁদের ২০০ টাকা করে ‘ক্লাবকে’ দিতে হয়। আরেক দোকানদার বলেন, ‘গোশতের দোকানের সামনে দ্যাখেন না, কিছু কুত্তা একপলকে তাকায়ে থাকে। মালিক হাড্ডি-টাড্ডি দিলে খায়, আর সুযোগ পাইলে থাবা দিয়া ধরে। ফুটপাতেও তা। কেউ থাবা দিয়া নেয়, কেউ যা দিই, তা নেয়।’
আগারগাঁও এলাকা: শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন জায়গা দখল করে ছয়টি কার্যালয় বানিয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ইউনিট কার্যালয় বানানো হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সামনে, আর মহিলা লীগের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ইউনিট কার্যালয় বানানো হয় পিকেএসএফের সামনে।
আগারগাঁও-শিশুমেলা সড়কে বানানো হয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর ইউনিটের অফিস। এই সড়কে পাসপোর্ট অফিসের সামনে শেরেবাংলা নগর থানা জাতীয় শ্রমিক লীগ ও পাশেই তৈরি করা হয় ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
ভুঁইফোড় সংগঠনের কার্যালয়: তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে বড় একটি জায়গা দখল করা হয় শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নামে।
গতকাল সকালে ও আগের দিন রোববার বিকেলে গিয়ে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকতে দেখা যায়। পাশের এক দোকানমালিক জানান, হুমায়ুন নামের একজন ‘ক্লাবটি’ চালান। স্টেশনের পাশে মুরগির আড়তে গেলে তাঁকে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তেজগাঁও মধ্য বেগুনবাড়িতে রাস্তার পাশে কার্যালয় বানিয়েছে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় বানানো হয় তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের পাশে।
এ ছাড়া মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে বৃহত্তর মিরপুর থানা ছাত্রলীগ, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের ফটকের পাশে ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, শাহবাগে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৫ নম্বর পাবলিক লাইব্রেরি ইউনিট শাখা, শিশুপার্কের জায়গায় ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ পার্ক এভিনিউ ইউনিট কার্যালয় করেছে।
বারিধারা নতুন বাজার: নতুন বাজারে সড়ক ও জনপথের রাস্তায় ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। কার্যালয়ের আশপাশের দোকান ও ফুটপাত থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে।
তরকারির দোকানদার মো. ফয়েজ জানান, প্রতিদিন দোকানভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। ফুটপাতের জুতার দোকানি সোহেল হোসেন ভূঁঞা জানান, তাঁদের দিতে হয় দৈনিক ৩০ টাকা।
উত্তর বারিধারার কালাচাঁদপুর ও নদ্দায় রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নামে দুটি কার্যালয় বানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা। নদ্দার কার্যালয়টি দেখাশোনা করেন নাজির হোসেন।
নিজেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে নাজির হোসেন বলেন, আগে এ জায়গায় মুরগির দোকান ছিল। ওয়াসা পাম্প বসানোর পর বাকি জায়গা তাঁরা নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ: সেগুনবাগিচা ও খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের নামে দুটি থানা কার্যালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর একটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবনের পূর্ব পাশে ফুটপাত দখল করে বানানো, আরেকটি খিলগাঁও তিলপাপাড়া জোড়পুকুর মাঠের সামনে।
দুই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া ও চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে। সেগুনবাগিচার একজন দোকানদার মাসে ৮০০ টাকা ও তিলপাপাড়ার এক দোকানি মাসে ‘ক্লাবের নেতাদের’ এক হাজার ২০০ টাকা ভাড়া দেন বলে জানান।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের সভাপতি চঞ্চল পাটোয়ারী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির বেইল নাই, মহানগর কমিটিই ইস্ট্রং। আমরা হেগো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।’
খিলগাঁও কার্যালয়ের সভাপতি মফিজুর রহমান ওরফে পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাধুলার বাইরে এখানে খারাপ কিছু হয় না। এটি আসলে খেলোয়াড়দের ড্রেস পাল্টানোর জায়গা। পারলে লেইখেন, এখানে স্থায়ী একটি স্পোর্টস ক্লাব দরকার।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সভাপতি-সম্পাদকের নাম বলতে পারেননি পিন্টু।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমাদের কোনো অবৈধ অফিস নেই। যদি থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেঙে দেবে। আর কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’
গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক দলের অফিসের নামে ফুটপাত, সরকারি জায়গা দখল করে এ ধরনের স্থাপনা তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। এমন অন্তত ২৫টি কার্যালয়ের আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এই ২৫ কার্যালয়ই ফুটপাত, রাস্তার পাশ, সরকারি জায়গা ও খাল-নালা দখল করে গড়ে উঠেছে।
মতিঝিলের যুব শ্রমিক লীগের নামে চালানো স্থাপনায় গিয়ে কথা হয় এর সভাপতি মুন্না খানের সঙ্গে। তিনি স্বীকার করেন, জায়গাটি সরকারি। চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ফটকাবাজ না। আমাদের কেউ চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে না।’ তাঁদের পেশা কী জানতে চাইলে মুন্না বলেন, ‘মনে করেন, সরকারি অফিসের সিবিএর নেতাদের মাধ্যমে পুরান গাড়ির টুকটাক কাজ আসে, সেগুলো করি। আর গার্মেন্ট শ্রমিকদের সমস্যা হলে ফেস (মোকাবিলা) করি।’
মুন্না খান জানান, যুব শ্রমিক লীগ জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তিনি বলেন, ‘ওরা সিনিয়র, আমরা জুনিয়র।’
জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘সংগঠনে নতুন সদস্য রিক্রুট করতে যুব ও মহিলাদের একটি শাখা করা হয়েছে। কিন্তু আলাদা অফিস করার কোনো অনুমতি নেই তাদের।’
অবৈধ দখল: একাধিক এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, সরকারের পতিত কোনো জায়গায় প্রথমে রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। কয়েক দিন পর সেখানে অস্থায়ী ঘর তুলে আড্ডা বসে। এর ফাঁকে স্থাপনা শক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে একটি-দুটি করে আশপাশে দোকান তুলে তা ভাড়া দেওয়া হয়। আর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিভিন্ন সময়ে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলা হয়।
দেখা যায়, অবৈধ স্থাপনার বেশির ভাগ জায়গাই রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এ ছাড়া ওয়াসা, গণপূর্ত বিভাগ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের জায়গাতেও অনেক দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
বেশির ভাগ কার্যালয় শ্রমিক লীগের: সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয় বানানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে জাতীয় শ্রমিক লীগ। এরপর আছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।
মতিঝিল মেথরপট্টির পাশে রেলের জায়গায় কার্যালয় বানিয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পূর্ব পাশে কার্যালয় বানিয়েছে শেরেবাংলা নগর থানা শ্রমিক লীগ। তালতলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে গণপূর্তের জায়গায় কার্যালয় স্থাপন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগ। তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে রেলের একটি ঘর দখল করে রাখা হয়েছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাইনবোর্ড দিয়ে। কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিংয়ে রেলের জায়গায় কার্যালয় বানিয়েছে শ্রমিক লীগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর পাশে আছে জাতীয় শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয়। এই কার্যালয় ঘিরে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ ও সামনে বাসস্ট্যান্ড আছে। স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা গ্যারেজ ও স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলেন বলে অভিযোগ আছে।
জানতে চাইলে রায় রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘সরকারি জায়গা দখল করে শ্রমিক লীগ কোথাও কার্যালয় বানিয়েছে, এমন অভিযোগ সাড়ে তিন বছরে আমরা পাইনি।’ কিছু এলাকায় শ্রমিক লীগের কার্যালয় স্থাপনের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক লীগের নাম দিয়ে কেউ হয়তো করেছে, কিন্তু এর কোনো স্বীকৃতি নেই। আমরা এটা সমর্থন করি না।’
মহাখালী ও বনানী: মহাখালীর রেলগেট-সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে রেলের জায়গায় পাকা স্থাপনা তৈরি করে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী যুবলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ। যুবলীগের নেতারা আশপাশের দোকান ও খাবারের ঘর থেকে মাসোহারা আদায় করেন বলে অভিযোগ আছে। আর শ্রমিক লীগের নেতারা পরিবহন থেকে চাঁদা তোলেন।
গত রোববার দুপুরে যুবলীগের এই কার্যালয়ে ঢুকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা যুবলীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ তিনজনকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সভাপতি আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি জায়গায় আমাদের কোনো অবৈধ স্থাপনা বা অফিস নেই।’ মহাখালীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়টির কথা জানালে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওটা রেলের জায়গায়। শুনেছি, জায়গাটির জন্য রেলওয়ের কাছে দরখাস্ত দেওয়া আছে।’
চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল বাসার বলেন, ‘আমরা যাদের কমিটিতে রেখেছি, অনেকে চাকরি, ব্যবসা করে; বেকার যুবক খুব কম। এ বিষয়ে আমার কড়া নির্দেশ আছে। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করে দেব।’
বনানীতে রেলের মহানগর টিকিট কাউন্টারের পাশে রেলের জায়গা দখল করে অবৈধ কার্যালয় বানানো হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও শহীদ শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নামে। পাশাপাশি থাকা এই দুই কার্যালয়ের বিরুদ্ধেও আশপাশের দোকান ও নগর পরিবহন কাউন্টার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। তবে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজি করি না। এর প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।’
মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি উন্মুক্ত জায়গায় ত্রিপল টানিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। ডিসিসি ওই জায়গার চারপাশে পথচারীদের বসার জন্য মোজাইকের পাথর দিয়ে চেয়ারের আদলে পাকা স্থাপনা তৈরি করে। সম্প্রতি জায়গাটির মাঝ বরাবর বাঁশের খুঁটি আর ত্রিপল টানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা। এখনো বেড়া দেওয়া হয়নি।
বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে: বুড়িগঙ্গার দুটি সেতুর নিচে ও পাশে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর পাঁচটি কার্যালয় গড়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচে একটি স্তম্ভের গোড়ায় কার্যালয় বানিয়েছে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ। এই জায়গায় এক ব্যবসায়ী চাল রাখতেন। স্থানীয় চায়ের দোকানদার বলেন, ‘দুই দিন হলো টিনের বেড়া দেওয়া শেষ হয়েছে।’
এর পাশের ঘরটি কোতোয়ালি থানা (বিট-৪) পুলিশের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। ঘরের দরজায় লাগানো সাইনবোর্ডে উপপরিদর্শক জহির রায়হানের নাম ও মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে।
সেতুর পশ্চিম পাশে আরেকটি কার্যালয় করেছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ বংশাল থানার নামে।
বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর গোড়ায় পাকা ঘর বানিয়েছে ‘৯০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন’। আর সেতুর নিচে পাকা স্থাপনা দিয়ে শ্যামপুর-কদমতলী থানার প্রধান কার্যালয় বানিয়েছে আওয়ামী ওলামা লীগ।
কার্যালয়ের বাইরে তিনটি সাইনবোর্ডের একটিতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি, একটিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আরেকটিতে স্থানীয় সাংসদ সানজিদা খাতুনের ছবি। মায়া ও সানজিদার সঙ্গে শ্যামপুর থানা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনেরও ছবি আছে।
গত রোববার বিকেলে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কয়েকজন টেলিভিশনে ছায়াছবি দেখছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোথায় আছেন, তাঁরা জানাতে পারেননি।
কার্যালয়ের পাশের এক দোকানদার জানান, প্রতিদিন তাঁদের ২০০ টাকা করে ‘ক্লাবকে’ দিতে হয়। আরেক দোকানদার বলেন, ‘গোশতের দোকানের সামনে দ্যাখেন না, কিছু কুত্তা একপলকে তাকায়ে থাকে। মালিক হাড্ডি-টাড্ডি দিলে খায়, আর সুযোগ পাইলে থাবা দিয়া ধরে। ফুটপাতেও তা। কেউ থাবা দিয়া নেয়, কেউ যা দিই, তা নেয়।’
আগারগাঁও এলাকা: শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন জায়গা দখল করে ছয়টি কার্যালয় বানিয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ইউনিট কার্যালয় বানানো হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সামনে, আর মহিলা লীগের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ইউনিট কার্যালয় বানানো হয় পিকেএসএফের সামনে।
আগারগাঁও-শিশুমেলা সড়কে বানানো হয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর ইউনিটের অফিস। এই সড়কে পাসপোর্ট অফিসের সামনে শেরেবাংলা নগর থানা জাতীয় শ্রমিক লীগ ও পাশেই তৈরি করা হয় ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
ভুঁইফোড় সংগঠনের কার্যালয়: তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে বড় একটি জায়গা দখল করা হয় শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নামে।
গতকাল সকালে ও আগের দিন রোববার বিকেলে গিয়ে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকতে দেখা যায়। পাশের এক দোকানমালিক জানান, হুমায়ুন নামের একজন ‘ক্লাবটি’ চালান। স্টেশনের পাশে মুরগির আড়তে গেলে তাঁকে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তেজগাঁও মধ্য বেগুনবাড়িতে রাস্তার পাশে কার্যালয় বানিয়েছে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় বানানো হয় তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের পাশে।
এ ছাড়া মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে বৃহত্তর মিরপুর থানা ছাত্রলীগ, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের ফটকের পাশে ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, শাহবাগে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৫ নম্বর পাবলিক লাইব্রেরি ইউনিট শাখা, শিশুপার্কের জায়গায় ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ পার্ক এভিনিউ ইউনিট কার্যালয় করেছে।
বারিধারা নতুন বাজার: নতুন বাজারে সড়ক ও জনপথের রাস্তায় ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। কার্যালয়ের আশপাশের দোকান ও ফুটপাত থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে।
তরকারির দোকানদার মো. ফয়েজ জানান, প্রতিদিন দোকানভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। ফুটপাতের জুতার দোকানি সোহেল হোসেন ভূঁঞা জানান, তাঁদের দিতে হয় দৈনিক ৩০ টাকা।
উত্তর বারিধারার কালাচাঁদপুর ও নদ্দায় রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নামে দুটি কার্যালয় বানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা। নদ্দার কার্যালয়টি দেখাশোনা করেন নাজির হোসেন।
নিজেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে নাজির হোসেন বলেন, আগে এ জায়গায় মুরগির দোকান ছিল। ওয়াসা পাম্প বসানোর পর বাকি জায়গা তাঁরা নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ: সেগুনবাগিচা ও খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের নামে দুটি থানা কার্যালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর একটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবনের পূর্ব পাশে ফুটপাত দখল করে বানানো, আরেকটি খিলগাঁও তিলপাপাড়া জোড়পুকুর মাঠের সামনে।
দুই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া ও চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে। সেগুনবাগিচার একজন দোকানদার মাসে ৮০০ টাকা ও তিলপাপাড়ার এক দোকানি মাসে ‘ক্লাবের নেতাদের’ এক হাজার ২০০ টাকা ভাড়া দেন বলে জানান।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের সভাপতি চঞ্চল পাটোয়ারী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির বেইল নাই, মহানগর কমিটিই ইস্ট্রং। আমরা হেগো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।’
খিলগাঁও কার্যালয়ের সভাপতি মফিজুর রহমান ওরফে পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাধুলার বাইরে এখানে খারাপ কিছু হয় না। এটি আসলে খেলোয়াড়দের ড্রেস পাল্টানোর জায়গা। পারলে লেইখেন, এখানে স্থায়ী একটি স্পোর্টস ক্লাব দরকার।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সভাপতি-সম্পাদকের নাম বলতে পারেননি পিন্টু।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমাদের কোনো অবৈধ অফিস নেই। যদি থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেঙে দেবে। আর কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’
No comments