চিলমারীতে বন্যা-দুই শতাধিক পরিবার সড়কে

বন্যার পানি বসতঘরে ঢুকে পড়ায় এবং নদীভাঙনের কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে।পরিবারগুলো পলিথিন, কাঁথা, চাদর, চাটাই, ছেঁড়া বস্তা দিয়ে ঝুপরি বানিয়ে কোনো রকম বসবাস করছে।


কিন্তু বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা না থাকায় এসব পরিবারের সদস্যরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ওই সড়কের পাশে (রমনাঘাট) কাঁথা দিয়ে ঝুপরি বানিয়ে বসবাস করছে ববিতা বেগম (৩২)। তাঁর বাড়ি চিলমারী উপজেলার ব্যাপারীরচরে। এক সপ্তাহ আগে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে এ সড়কে ঠাঁই নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কী করুম, কনে জামু। জায়গাজমি সব নদী খাইছে। তাই সড়কে উঠছি। এই খানে খাওনের পানি নাই, নাই ল্যাট্রিন। খুব সমস্যায় আছি গো ভাই। ম্যাইয়া মানুষ হুট কইরা সব জায়গায় যাইতে পারি না।’
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ওপর দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যরা গাদাগাদি করে বসবাস করছে। সড়কের উত্তরে ব্যাপারীপাড়া ও দক্ষিণে মাঝিপাড়া পানিতে তলিয়ে আছে। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই। রয়েছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। কাজ না থাকায় আয়- রোজগারের পথও বন্ধ। তাই অনেককে উপোস থাকতে হচ্ছে।
ফুলমালা (৩৫) বলেন, ‘স্বামী নূর ইসলাম জন্ম থাকি অন্ধ। মাটির কাম করি সংসার চালাই। এল্যা পানির মধ্যে কাম নাই। খুব কষ্টে আছি।’ মোক্তা (২০) নামে অপর এক গৃহবধূ বলেন, ‘পলিথিন ঘেড়া দিয়া কোনোমতে আছি। বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। বইসা থাকি। রাইতে মশার জন্য ঘুমাইতে পারি না। পোকামাকরের ভয় নাগে।’
স্থানীয় রমনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাহফুজার রহমান বলেন, ‘সড়কে ২৫৮টি পরিবার উঠেছে। এদের জন্য চার দিন আগে আট টন চাল দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ৫০টি পরিবারকে চাল দিয়েছি। গতকাল সোমবার দুই টন দিয়েছি। এরপর আরও অনেক পরিবার বাকি থাকবে।
কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের রমনাঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়কে তীব্র ভাঙন চলছে। অসংখ্য লোকজন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ভাঙন দেখছে। এদের মধ্যে নুরুল আমিন বলেন, ‘এমন ভাঙন আগে দেখিনি। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
চিলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান শওকত আলী বীর বিক্রম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে পানির চাপে পাকা সড়কটির ২০০ মিটার ভেঙে গেছে। চলতি বন্যা ও নদীভাঙনে উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নয়টি মসজিদ ভেঙে গেছে। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেবে। আমরা সর্তক আছি।’
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন উল হাসান জানান, গত এক সপ্তাহে ৮৫০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৪০০ পরিবার। ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় বরাদ্দ কম হলেও দুই-এক দিনের মধ্যেই সব ত্রাণসামগ্রী এসে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, চিলমারী বন্দর রক্ষায় একটি প্রকল্প করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.