পবিত্র কোরআনের আলো-ইসলাম মানে একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা
২০. ফাইন হা-জ্জু-কা ফাক্বুল আছলামতু ওয়াজহিয়া লিল্লাহি ওয়ামানিত্তাবাআ'নি; ওয়াক্বুল লিল্লাযীনা ঊতুল কিতাবা ওয়ালউম্মিয়্যীনা আআছলামতুম; ফাইন আছলামূ ফাক্বাদিহ্তাদাও; ওয়া ইন তাওয়াল্লাও ফাইন্নামা-আ'লাইকাল বালা-গ্; ওয়াল্লা-হু বাছীরুম্ বিলই'বা-দ।
২১. ইন্নাল্লাযীনা ইয়াকফুরূনা বিআ-ইয়াতিল্লাহি ওয়া ইয়াক্বতুলূনান নাবিয়্যীনা বিগাইরি হাকি্বন ওয়া ইয়াক্বতুলূনাল্লাযীনা ইয়া'মুরূনা বিলকি্বছতি্ব মিনান্না-ছি ফাবাশ্শিরহুম বিআ'যা-বিন আলীম।
২২. উলা-ইকাল্লাযীনা হাবিত্বাত আ'মা-লুহুম ফিদ্দুনিয়া-ওয়াল আখিরাতি; ওয়ামা-লাহুম মিন্ না-সিরীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০-২২]
অনুবাদ : ২০. যদি এরা আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনোরূপ বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাহলে আপনি বলুন, আমি এবং আমার অনুসারীরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। অতঃপর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে আর যারা অশিক্ষিত অর্থাৎ কিতাবের অনুসারী নয়, তাদের সবাইকে আপনি জিজ্ঞেস করুন, তোমরা কি সবাই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছ? (হ্যাঁ) যদি তারা আল্লাহর আনুগত্য মেনে নিয়ে থাকে তবে তো তারা সঠিক পথ পেয়েই গেল। কিন্তু যদি তারা সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে মনে রাখুন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে কেবল বার্তা পেঁৗছে দেওয়া। আল্লাহতায়ালা বান্দাদের কর্মকাণ্ড নিজেই পর্যবেক্ষণ করেন।
২১. যারা আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করে, যারা অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে; আর হত্যা করে এমন ব্যক্তিদের যারা মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায় মেনে চলার নির্দেশ দেয়, এদের আপনি এক কঠোর শাস্তির সুসংবাদ দিন।
২২. দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই এদের কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে, এদের কোথাও কোনো সাহায্যকারী নেই।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতে ইসলাম প্রত্যাখ্যানকারী আহলে কিতাব এবং আরব মুশরিকদের শত্রুতাপ্রণোদিত অস্বীকৃতি ও তর্ক-বিতর্কের উত্তর দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর ধর্ম ইসলামের সত্যতা যখন প্রতিষ্ঠিত হলো তখনো যেহেতু তারা ইসলাম অস্বীকার করছে এবং তর্ক করছে তাই আপনি বলুন, আমি ও আমার অনুসারীরা একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। (ইসলাম মানে অনুরূপভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা) আপনি আপনার এই দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে দিন এবং তাদের জিজ্ঞেস করুন তারাও অনুরূপভাবে আত্মসমর্পণ করছে কি না? যদি তারা তা করে তবে তো সত্য পথে এসেই গেল, আর যদি না করে তবে আপনার আর কোনো করণীয় নেই, তাদের কাছে বার্তা পেঁৗছে দেওয়া ছাড়া। তর্কে যুক্তি প্রমাণ হাজির করার বদলে এই পথ অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হলো এ কারণে যে, তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর নবী ও তাঁর দ্বীনকে অস্বীকার করছে না, বরং তারা অস্বীকার করছে হিংসা ও বিদ্বেষের কারণে। তারা তাদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য সত্যকে অস্বীকার করছে। সুতরাং ইসলাম সত্য হওয়ার পক্ষে যত যুক্তিই দেওয়া হোক, কোনো যুক্তিই তারা শুনবে না, মানবেও না। যুক্তি সাধারণত তাদের জন্য কাজে আসে, যারা অজ্ঞতাবশত বা ভুল বোঝার কারণে অস্বীকার করে। আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান এবং কোরাইশদের অবস্থান এখানে সে রকম নয়। সুতরাং তাদের জন্য সঠিক উত্তর হলো, 'আমরা ইসলাম মেনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমরাও তা করো' এটুকু বলা।
২১ নম্বর আয়াতটিতে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে তাদের কিছু ন্যক্কারজনক ইতিহাসের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, একবার কোনো এক রবিবারে বনি ইসরাইলের ৪৩ জন নবীকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে আরো ১০০ জন সহচর যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে আহ্বান জানাত, তাদের হত্যা করা হয়েছিল। অথচ বনি ইসরাইলরা এই জঘন্য কাজটিকেও তাদের ধর্মীয় কাজ বলে বিশ্বাস করত। অতীতে তারা এ রকম একরোখা মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী জাতিতে পরিণত হয়েছিল। তারা ন্যক্কারজনক অধর্মকে ধর্ম মনে করে আসছিল এবং সত্য ও মানবিক ধর্মকে অস্বীকার করে আসছিল। আল্লাহতায়ালা এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের সেই কালিমাময় ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং তাদের জন্য যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে সে কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন। এখানে তাদের কঠিন শাস্তির 'সুসংবাদ' দেওয়ার কথা বলা হয়েছে উপহাস করে। 'বাশ্বির' শব্দের অর্থ সুসংবাদ আর 'নাজির' শব্দের অর্থ শাস্তির ভয়। এখানে 'নাজির' শব্দ ব্যবহার না করে 'বাশ্বির' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির ভয় হিসেবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
২২. উলা-ইকাল্লাযীনা হাবিত্বাত আ'মা-লুহুম ফিদ্দুনিয়া-ওয়াল আখিরাতি; ওয়ামা-লাহুম মিন্ না-সিরীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০-২২]
অনুবাদ : ২০. যদি এরা আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনোরূপ বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাহলে আপনি বলুন, আমি এবং আমার অনুসারীরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। অতঃপর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে আর যারা অশিক্ষিত অর্থাৎ কিতাবের অনুসারী নয়, তাদের সবাইকে আপনি জিজ্ঞেস করুন, তোমরা কি সবাই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছ? (হ্যাঁ) যদি তারা আল্লাহর আনুগত্য মেনে নিয়ে থাকে তবে তো তারা সঠিক পথ পেয়েই গেল। কিন্তু যদি তারা সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে মনে রাখুন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে কেবল বার্তা পেঁৗছে দেওয়া। আল্লাহতায়ালা বান্দাদের কর্মকাণ্ড নিজেই পর্যবেক্ষণ করেন।
২১. যারা আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করে, যারা অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে; আর হত্যা করে এমন ব্যক্তিদের যারা মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায় মেনে চলার নির্দেশ দেয়, এদের আপনি এক কঠোর শাস্তির সুসংবাদ দিন।
২২. দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই এদের কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে, এদের কোথাও কোনো সাহায্যকারী নেই।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতে ইসলাম প্রত্যাখ্যানকারী আহলে কিতাব এবং আরব মুশরিকদের শত্রুতাপ্রণোদিত অস্বীকৃতি ও তর্ক-বিতর্কের উত্তর দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর ধর্ম ইসলামের সত্যতা যখন প্রতিষ্ঠিত হলো তখনো যেহেতু তারা ইসলাম অস্বীকার করছে এবং তর্ক করছে তাই আপনি বলুন, আমি ও আমার অনুসারীরা একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। (ইসলাম মানে অনুরূপভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা) আপনি আপনার এই দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে দিন এবং তাদের জিজ্ঞেস করুন তারাও অনুরূপভাবে আত্মসমর্পণ করছে কি না? যদি তারা তা করে তবে তো সত্য পথে এসেই গেল, আর যদি না করে তবে আপনার আর কোনো করণীয় নেই, তাদের কাছে বার্তা পেঁৗছে দেওয়া ছাড়া। তর্কে যুক্তি প্রমাণ হাজির করার বদলে এই পথ অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হলো এ কারণে যে, তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর নবী ও তাঁর দ্বীনকে অস্বীকার করছে না, বরং তারা অস্বীকার করছে হিংসা ও বিদ্বেষের কারণে। তারা তাদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য সত্যকে অস্বীকার করছে। সুতরাং ইসলাম সত্য হওয়ার পক্ষে যত যুক্তিই দেওয়া হোক, কোনো যুক্তিই তারা শুনবে না, মানবেও না। যুক্তি সাধারণত তাদের জন্য কাজে আসে, যারা অজ্ঞতাবশত বা ভুল বোঝার কারণে অস্বীকার করে। আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান এবং কোরাইশদের অবস্থান এখানে সে রকম নয়। সুতরাং তাদের জন্য সঠিক উত্তর হলো, 'আমরা ইসলাম মেনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমরাও তা করো' এটুকু বলা।
২১ নম্বর আয়াতটিতে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে তাদের কিছু ন্যক্কারজনক ইতিহাসের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, একবার কোনো এক রবিবারে বনি ইসরাইলের ৪৩ জন নবীকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে আরো ১০০ জন সহচর যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে আহ্বান জানাত, তাদের হত্যা করা হয়েছিল। অথচ বনি ইসরাইলরা এই জঘন্য কাজটিকেও তাদের ধর্মীয় কাজ বলে বিশ্বাস করত। অতীতে তারা এ রকম একরোখা মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী জাতিতে পরিণত হয়েছিল। তারা ন্যক্কারজনক অধর্মকে ধর্ম মনে করে আসছিল এবং সত্য ও মানবিক ধর্মকে অস্বীকার করে আসছিল। আল্লাহতায়ালা এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের সেই কালিমাময় ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং তাদের জন্য যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে সে কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন। এখানে তাদের কঠিন শাস্তির 'সুসংবাদ' দেওয়ার কথা বলা হয়েছে উপহাস করে। 'বাশ্বির' শব্দের অর্থ সুসংবাদ আর 'নাজির' শব্দের অর্থ শাস্তির ভয়। এখানে 'নাজির' শব্দ ব্যবহার না করে 'বাশ্বির' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির ভয় হিসেবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments