পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম

১৮. শাহিদাল্লাহু আন্নাহু লা-ইলা-হা ইল্লা-হুয়া, ওয়ালমালা-য়িকাতু ওয়াউলুল ই'লমি ক্বা-য়িমাম্ বিলকি্বছতি; লা-ইলাহা ইল্লা-হুয়াল আ'যীযুল হাকীম। ১৯. ইন্নাদ্ দীনা ই'নদাল্লাহিল ইসলামু ওয়ামাখ্তালাফাল্লাযীনা ঊতুল কিতাবা ইল্লা-মিম্ বা'দি মা-জা-আহুমুল ই'লমু বাগ্ইয়াম্ বাইনাহুম; ওয়ামান ইয়াক্ফুর বিআ-ইয়া-তিল্লাহি ফাইন্নাল্লাহা ছারীউ'ল হিছাব। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮-১৯]


অনুবাদ : ১৮. আল্লাহ নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। ফেরেশতারা এবং জ্ঞানবান মানুষরা এ সাক্ষ্যই দিচ্ছে যে আল্লাহতায়ালাই একমাত্র ন্যায় ও ইনসাফের ধারক। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মা'বুদ নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
১৯. নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ধর্ম একমাত্র ইসলাম। যাদের আল্লাহর তরফ থেকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা নিজেরা একে অপরের প্রতিহিংসা-বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে মতানৈক্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল, তাও আবার তাদের কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বা আয়াত অস্বীকার করবে তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহতায়ালা দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
ব্যাখ্যা : ১৮ নম্বর আয়াতে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ এবং আল্লাহর স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে আল্লাহ নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই। আর তিনি সাক্ষী মানছেন তাঁর ফেরেশতা এবং জ্ঞানবান মানুষদের। ফেরেশতারা আল্লাহর নূর বা আলোর সৃষ্টি, তাঁরা আল্লাহর একক অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করেন। অন্যদিকে মানুষ যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানবান, তাঁরা দেখতে পান এবং বুঝতে পারেন আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ। আল্লাহতায়ালা সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের একমাত্র ধারক। 'উলুল আলবাব' ও 'উলুল ইলম'রা বিশ্বজগতে ন্যায়ের ধারক হিসেবে আল্লাহকে দেখতে পান।
১৯ নম্বর আয়াতটি ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে নাজিল হয়েছে। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে বিশ্বাসী। তাওরাত ও ইঞ্জিল আল্লাহ প্রেরিত কিতাব এবং আল্লাহ প্রেরিত ধর্ম। সুতরাং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করত, তারা সত্যের ওপর আছে, তারা আল্লাহর পথে আছে। কিন্তু তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ হয়ে গেছে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিচ্ছেন, আল্লাহর কাছে একমাত্র ইসলামই সত্য ধর্ম। এ আয়াতে এর পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে।
ইহুদি ও খ্রিস্টানরা জানে, তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে আখেরি জামানার নবী আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। আর তারা এটাও জানত, শেষ নবীর গ্রন্থ কোরআন ও তার প্রচারিত ধর্ম ইসলাম সত্য। তাদের পূর্বপুরুষরাও বলে গেছেন, 'আমাদের বংশধর যারা তখন বিদ্যমান থাকবে তারা যেন শেষ নবীর ধর্ম গ্রহণ করে।' তাদের ধারণা ছিল, বনি ইসরাইল বংশেই শেষ নবী জন্মগ্রহণ করবেন, এমনকি খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করত, শেষ নবী খ্রিস্টান সম্প্রদায়েই জন্মাবেন। কিন্তু তারা যখন দেখতে পেল শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসমাইল বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, তখন তাদের হিংসা হলো। তারা ভাবল, 'আমরা তাঁর ধর্ম গ্রহণ করলে এবং তাঁর আনুগত্য অবলম্বন করলে আমাদের সম্মান ও প্রভাবপ্রতিপত্তি ক্ষুণ্ন হবে,' তখনই তারা ভিন্নমত পোষণ করতে শুরু করল। তখন তারা তাওরাত ও ইঞ্জিলে শেষ নবীর আগমনসংক্রান্ত আয়াতগুলো বিকৃত ও পরিবর্তন করে ফেলতে লাগল এবং তারা রাসুলের বিরোধিতায় বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যে বিতর্ক ও বিভেদ সৃষ্টি করতে থাকে। অর্থাৎ তারা অজ্ঞতাবশত নয়, বরং হিংসাবশত আল্লাহর নবী এবং ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করতে থাকে। এ আয়াতে এ কথাটাই পরিষ্কার করে দিয়ে এটা জানিয়ে দেওয়া হলো যে ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র সত্য ধর্ম।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.