অভিযোগ অস্বীকার করেছে গাজী গ্রুপ-সাংসদ গাজীর প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ!

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার খাদুন গ্রামে স্থানীয় সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীকের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকেরা। গত রোববার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এই অভিযোগ করেন।


তবে এর কিছুক্ষণ পরেই পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে সাংসদের ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দাবি করেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন বৈধভাবেই ওই জমি তাঁদের প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিগ্রহণ করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুলহাস আলী ভূঁইয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, অধিগ্রহণের নোটিশ পাওয়া জমির মালিক আবদুল বারি, ইলিয়াস আলী, আবদুর রহমান, আমজাদ আলী ভূঁইয়া, সামছুল হক, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার খাদুন এলাকায় সাংসদ গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন গাজী অটো টায়ারস নামের প্রতিষ্ঠানের কারখানা তৈরির জন্য প্রায় পাঁচ একর ভূমি (বসতভিটা ও কৃষিজমি) অধিগ্রহণের জন্য গত ৩ জুন নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নোটিশে বলা হয়েছে, গাজী অটো টায়ারসের জন্য জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে এবং জনস্বার্থে জমি প্রয়োজন হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য নোটিশ জারি করা হলো যে, উক্ত সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত সম্পত্তিতে স্বার্থবান যেকোনো ব্যক্তি এই নোটিশ জারি হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিকেরা অভিযোগ করেন, ‘গাজী অটো টায়ারস ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এটা কোনো জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান নয়। তা ছাড়া একটি আবাসিক ও কৃষি এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হলে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশসহ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অধিগ্রহণের নোটিশ দেওয়ার আগে জমির মালিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। আমাদের কোনো শুনানিও গ্রহণ করা হয়নি।’ তাঁরা অভিযোগ করেন, নোটিশ পাঠানোর পর থেকে রাতের আঁধারে বালু ফেলে জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনেককে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ১২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে সঞ্চারকলিপি পেশ, ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং ২৬ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনশন।
জমির মালিকদের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন গাজী অটো টায়ারসের ব্যবস্থাপক (ভূমি) মহিউদ্দিন মিয়া, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এহসানুল হক ও সহকারী ব্যবস্থাপক আলফাজউদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাজী গ্রুপ ২০০১ সালে খাদুন মৌজায় ১১ বিঘা জমি কিনে গাজী অটো টায়ারস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়। সেই লক্ষ্যে স্থানীয় ভূমির মালিকদের কাছ থেকে জমি কেনা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৪০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য আরও ২০ বিঘা জমি প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের অসহযোগিতার কারণে জমি কিনতে না পেরে তাঁরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিটির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়। গাজী গ্রুপের পক্ষ থেকে কারও জমি জবরদখল করা হয়নি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল প্রথম আলোকে জানান, আইন অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আপত্তি দাখিল করতে পারেন। আপত্তির শুনানি হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.