পিলখানা হত্যা মামলা-মইন, জয়নুল ও নূর মোহাম্মদকে সমন

পিলখানা হত্যা মামলায় সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) নূর মোহাম্মদসহ চারজনকে সাক্ষী হিসেবে হাজির হতে সমন জারি করেছেন আদালত।


অস্থায়ী আদালতের বিচারক ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। সমন জারি হওয়া অন্যজন হলেন তৎকালীন বিডিআর হাসপাতালের চিকিৎসক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহান আরা বেগম।
গতকাল আদালত নিহত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহেরীন ফেরদৌসীসহ ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার চলছে। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে তা চলে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত।
আদালতে জবানবন্দিতে মুজিবুল হকের স্ত্রী বলেন, বিডিআরে বিদ্রোহের দিন (২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কর্নেল মুজিব দরবারে যাওয়ার পর তিনি বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) ব্যায়ামাগারে যান। ওই সময় ব্যায়ামাগার বন্ধ থাকায় তিনি তা খোলার ব্যবস্থা করে ভেতরে ঢোকেন। এরপর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। কিছুক্ষণ পর সিপাহি কামরুজ্জামান তাঁকে জানান, সৈনিকেরা বিদ্রোহ করেছে। এরপর তিনি বাসায় ফোন করে ছেলেকে সাবধানে থাকতে বলেন। বিষয়টি মহাপরিচালকের স্ত্রীকেও জানান। বেলা ১১টার দিকে বাসার পরিচারক মেহেদি তাঁকে জানান, বাসার সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি সারা রাত ব্যায়ামাগারেই লুকিয়ে থাকেন। পরদিন বিকেলে সৈনিকেরা তাঁকে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যান। পরে বাসায় ফিরে দেখেন, সৈনিকেরা গ্রেনেড ছুড়ে বাসায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এতে সবকিছু পুড়ে গেছে। পরে জানতে পারেন, বাসার কর্মচারীরা তাঁর ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিল। বিদ্রোহ শেষ হওয়ার পর বোনের বাসায় গিয়ে জানতে পারেন, কামরাঙ্গীরচরে নালা দিয়ে ভেসে যাওয়ার সময় কর্নেল মুজিবের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নেহেরীন ফেরদৌসী জবানবন্দিতে ল্যান্স নায়েক কামরুল ইসলাম ও নায়েক জিয়াউল হকের নাম বলেন। জবানবন্দি শেষে আইনজীবী আনিসুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ তাঁকে জেরা করেন।
এরপর জবানবন্দি দেন নিহত লে. কর্নেল সামছুল আজমের স্ত্রী মুনমুন আক্তার। তিনি বলেন, বিদ্রোহের প্রথম দিন বিকেল সাড়ে চারটার পর সৈনিকেরা জোর করে বাসা থেকে তাঁকে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যান। সারা রাত সেখানেই সবাইকে আটকে রাখেন। রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গেলে সৈনিকেরা কোনো কথা না বলার জন্য হুমকি দেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর তাঁরা আবার গোলাগুলি শুরু করেন। তাঁরা বলতে থাকেন, ‘সেনাপ্রধান পদত্যাগ করেছেন। আপানারা হাততালি দেন।’ বিডিআর সদস্যরা তাঁর বাসা থেকে ১০ লাখ টাকাসহ ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করেন। জবানবন্দিতে তিনি ১১ জন সৈনিককে শনাক্ত করার কথা বলেন।
গতকাল সাক্ষ্য দেওয়া অপর আটজনের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক স্নিগ্ধা সরকার, বিডিআর হাসপাতালের সেবিকা সেলিনা সুলতানা, আকলিমা আক্তার ও সাবিনা ইয়াসমিন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদিন, সাবেক আইজিপি ও মরক্কোর রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদ এবং তৎকালীন বিডিআর হাসপাতালের চিকিৎসক লে. কর্নেল (অব.) জাহান আর বেগমকে সাক্ষী হিসেবে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।

No comments

Powered by Blogger.