সরেজমিন : মধুপুর-বিষে ভরা আনারস by বিপ্লব রহমান
দেশজুড়ে মধুপুরের বিশালাকারের সুমিষ্ট 'জায়ান্টকিউ' আনারসের রয়েছে বিশেষ সুখ্যাতি। এই আনারসকে কেন্দ্র করেই টাঙ্গাইলের মধুপুরের নাম ছড়িয়েছে সর্বত্র। এবারও সেখানে হয়েছে ফলটির বাম্পার ফলন। শালবন ঘেঁষে দূর-দূরান্তের গ্রামের বাগান থেকে পাইকাররা ঘোড়ার গাড়ি ও রিকশাভ্যানে সংগ্রহ করছেন 'রসে টইটম্বুর গাছপাকা' ফল। জলছত্র বাজার, ২৫ মাইল বাজার, গারো বাজার,
মধুপুর বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি হাটে এসব আনারস জড়ো করে ট্রাকে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় ফলের বাজারে।
তবে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, মধুপুরের এসব আনারস প্রায় ১০০ শতাংশই বিষে ভরপুর। ভালো ফলন পেতে বাগানের মালিক ও চাষিরা বাগানেই যথেচ্ছ রাসায়নিক সার প্রয়োগ তো করেনই, উপরন্তু তাঁরা এক দফা রাসায়নিক হরমোন স্প্রে করেন ফল দ্রুত বড় করার জন্য। এরপর তাঁরা সবুজ কাঁচা ফলগুলো দ্রুত পাকানোর জন্য আরেক দফা রাসায়নিক বিষ স্প্রে করেন বাগানেই। স্বল্প শিক্ষিত ও নিরক্ষর বাগানের মালিক বা চাষিরা কেউই ইউরিয়া, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও পটাশের মতো রাসায়নিক সার, 'ফল বড় করার হরমোন' ক্রপস কেয়ার, বক্সেল সুপার বা পাইনো-পিক্স এবং 'ফল পাকানোর ওষুধ' রাইপেন বা প্রোপিট রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের মাত্রা জানেন না। তাই তাঁরা দ্রুত ফলন পেতে তথা রাতারাতি লাভের মুখ দেখতে যথেচ্ছ মাত্রায় ঢেলে চলেছেন 'বিষ'।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বিষে ভরা এসব আনারস পুষ্টির জোগান তো দিচ্ছেই না, উল্টো তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশি দাম দিয়ে ফল কিনে ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন। আনারসচাষিরা বলছেন, মাত্র বছর দশেক আগেও মধুপুরের আনারসে এমন বিষের ছড়াছড়ি ছিল না। তখন আদিবাসী গারোরা বাগানে জৈব সার ব্যবহার করতেন। প্রাকৃতিক উপায়েই ফলগুলো বেড়ে গাছপাকা হতো। তখন এগুলোর পুষ্টিগুণও থাকত অক্ষুণ্ন। এ জন্য মধুপুরে আদিবাসীদের উৎপাদিত আনারসের ছিল বিশেষ চাহিদা। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আদিবাসী-বাঙালি সবাই বিষনির্ভর আনারস চাষে ঝুঁকেছেন। এগুলো দেখভাল করারও যেন কেউ নেই। বাজারের অসংখ্য বীজ ও কীটনাশকের দোকানে সহজেই মিলছে রাসায়নিক সার, হরমোন ও ফল পাকানোর ওষুধ।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে মধুপুরের জলছত্রের চুনিয়া রেঞ্জ শালবন এলাকায় দেখা গেছে, আনারসচাষিদের দম ফেলার জো নেই। গারো আদিবাসী, কি বাঙালি চাষি- সবারই এখন ব্যস্ত সময়। ভোর হতে না হতেই তাঁরা দলে দলে উৎসবের মেজাজে বাগানে প্রকাশ্যে স্প্রে করছেন ফল পাকানোর ওষুধ। দু-এক দিনের মধ্যেই ফলগুলো পেকে লালচে রং ধারণ করলে তাঁরা শ্রমিক লাগিয়ে সংগ্রহ করছেন এসব বিষাক্ত আনারস। এরপর এসব ফল সার বেঁধে অপেক্ষমাণ ঘোড়ার গাড়ি বা রিকশাভ্যানে করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন জলছত্র বাজার, গারো বাজার, মধুপুর বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি হাটে। পাইকাররা সেখান থেকে দরাদরি করে 'লোভনীয়' আনারস ট্রাকে করে পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ বড় বড় জেলা শহরের বাজারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গারো আদিবাসী বাগানের মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বছর দশেক আগেও আমাদের এখানে এমনভাবে রাসায়নিক সার, হরমোন ও ফল পাকানোর ওষুধের ব্যবহার ছিল না। তখন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত আদিবাসীদের আনারসের ছিল আলাদা কদর। কিন্তু বাজারে টিকে থাকতে এখন আমরাও বাধ্য হয়ে ফলে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছি। তবে আনারস চাষে পোকামাকড় তেমন হয় না বলে কীটনাশক কখনোই ব্যবহার করা হয় না।'
ওই আদিবাসী জানান, এবার ২০ বিঘা জমিতে তিনি আনারসের চাষ করেছেন। সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করেছেন 'আন্দাজ মতো' কয়েক বস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি। ফলের গুটি দেখার পর সেগুলোকে বিশালাকৃতির করতে 'ক্রোপস কেয়ার' নামক হরমোন ১০ লিটার পানিতে এক বোতল (পাঁচ মিলিমিটার, দাম ১২০ টাকা) দুবার স্প্রে করেছেন। এরপর ফলগুলো বড় হলে এগুলো তাড়াতাড়ি পাকিয়ে বাজারজাত করতে একবার ফল পাকানোর ওষুধ রাইপেন স্প্রে করেছেন। আশা করছেন, দু থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পাকলে তিনি এগুলো পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। সাধারণত ৬০০ আনারস পাকাতে ১৬ লিটার পানিতে এক বোতল রাইপেন (১০ মিমি, দাম ১০০ টাকা) ব্যবহার করতে হয়।
আরেকজন বাঙালি আনারসচাষি বলেন, সব সার, হরমোন, ফল পাকানো ওষুধের গায়ে এগুলোর ব্যবহার বিধি লেখা আছে। তবে বেশির ভাগ আনারসচাষি ও বাগানের শ্রমিক লেখাপড়া জানেন না বলে এসব রাসায়নিক পদার্থ তাঁরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন। বাজারের সার ও কীটনাশকের দোকানে তো বটেই, মুদির দোকানেও এসব রাসায়নিক পদার্থ সহজেই মেলে। মৌসুমের আগে শহরের বাজারে 'গাছপাকা আনারস' তুলতে পারলে এগুলো চড়া দামে বিক্রি করা যায়। তিনি জানান, পাইকারি দরে ছোট আকৃতির একেকটি আনারসের দাম পড়ে সাত টাকা; বড় আকৃতির ২০ টাকা। এগুলো ঢাকার বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
ময়মনসিংহ থেকে জলছত্রে প্রতিবছরই পাইকারি দরে আনারস কিনতে আসেন চান মিয়া। তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষান্তে আনারস গাছপাকা হয়। তবে বাগানের মালিক, চাষি বা পাইকার কেউই 'বেশি মুনাফা'র আশায় এত সময় অপেক্ষা করতে চান না। এ জন্য বাগানে সার-হরমোনের পাশাপাশি ফল পাকানো ওষুধ প্রয়োগ করেন তাঁরা।
চান মিয়া আরো জানান, এবার মধুপুরের অরুণখোলা, ষোলাকুঁড়ি, আউশনাড়া- এই তিনটি ইউনিয়নে আনারসের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে।
চান মিয়ার তথ্য মতে, মধুপুরের কাঁঠালেরও ভালো চাহিদা আছে। কাঁচা কাঁঠাল গাছ থেকে সংগ্রহ করে চাষিরা বোঁটার দিকে সরু শিক ঢুকিয়ে একটি গভীর ছিদ্র করেন। তারপর সেখানে সিরিঞ্জ দিয়ে প্রয়োগ করা হয় 'ফল পাকানো ওষুধ' রাইপেন বা প্রোপিট। এতে দু-এক দিনের মধ্যেই কাঁঠাল পেকে লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। তবে এগুলোর স্বাদ প্রাকৃতিকভাবে পাকানো ফলের মতো সুস্বাদু ও মিষ্টি নয়।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, এ বছর মধুপুরের ছয় হাজার হেক্টর আনারস বাগানের মধ্যে চার হাজার হেক্টরে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ হাজার আনারস ফলেছে। আনারস একবার লাগালে পরের মৌসুমে জমিকে অনাবাদি রাখতে হয় বলে এবার দুই হাজার হেক্টর চাষের বাইরে রাখা হয়েছে।
মধুপুরের আনারসে যথেচ্ছ রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হজরত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে প্রচলিত রাসায়নিক সার, হরমোন বা ফল পাকানোর ওষুধ বেচাকেনা- কোনোটিই নিষিদ্ধ নয়। তাই তাঁদের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল বাসিত বলেন, মাত্রাবিহীনভাবে জমিতে রাসায়নিক সার এবং ফলে হরমোন ও পাকানোর ওষুধ প্রয়োগে ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে এগুলো বিষাক্ত খাদ্যদ্রব্যে পরিণত হয়। এসব বিষাক্ত ফল খেলে যে কারো চর্মরোগ, পেটের পীড়া ও জণ্ডিস হতে পারে। দীর্ঘদিন এসব বিষ মেশানো ফল খেলে যে কারো কিডনি, যকৃৎ, হৃদযন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিশুদের দেহযন্ত্র অনেক কোমল থাকে বলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেশি।
তবে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, মধুপুরের এসব আনারস প্রায় ১০০ শতাংশই বিষে ভরপুর। ভালো ফলন পেতে বাগানের মালিক ও চাষিরা বাগানেই যথেচ্ছ রাসায়নিক সার প্রয়োগ তো করেনই, উপরন্তু তাঁরা এক দফা রাসায়নিক হরমোন স্প্রে করেন ফল দ্রুত বড় করার জন্য। এরপর তাঁরা সবুজ কাঁচা ফলগুলো দ্রুত পাকানোর জন্য আরেক দফা রাসায়নিক বিষ স্প্রে করেন বাগানেই। স্বল্প শিক্ষিত ও নিরক্ষর বাগানের মালিক বা চাষিরা কেউই ইউরিয়া, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও পটাশের মতো রাসায়নিক সার, 'ফল বড় করার হরমোন' ক্রপস কেয়ার, বক্সেল সুপার বা পাইনো-পিক্স এবং 'ফল পাকানোর ওষুধ' রাইপেন বা প্রোপিট রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের মাত্রা জানেন না। তাই তাঁরা দ্রুত ফলন পেতে তথা রাতারাতি লাভের মুখ দেখতে যথেচ্ছ মাত্রায় ঢেলে চলেছেন 'বিষ'।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বিষে ভরা এসব আনারস পুষ্টির জোগান তো দিচ্ছেই না, উল্টো তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশি দাম দিয়ে ফল কিনে ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন। আনারসচাষিরা বলছেন, মাত্র বছর দশেক আগেও মধুপুরের আনারসে এমন বিষের ছড়াছড়ি ছিল না। তখন আদিবাসী গারোরা বাগানে জৈব সার ব্যবহার করতেন। প্রাকৃতিক উপায়েই ফলগুলো বেড়ে গাছপাকা হতো। তখন এগুলোর পুষ্টিগুণও থাকত অক্ষুণ্ন। এ জন্য মধুপুরে আদিবাসীদের উৎপাদিত আনারসের ছিল বিশেষ চাহিদা। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আদিবাসী-বাঙালি সবাই বিষনির্ভর আনারস চাষে ঝুঁকেছেন। এগুলো দেখভাল করারও যেন কেউ নেই। বাজারের অসংখ্য বীজ ও কীটনাশকের দোকানে সহজেই মিলছে রাসায়নিক সার, হরমোন ও ফল পাকানোর ওষুধ।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে মধুপুরের জলছত্রের চুনিয়া রেঞ্জ শালবন এলাকায় দেখা গেছে, আনারসচাষিদের দম ফেলার জো নেই। গারো আদিবাসী, কি বাঙালি চাষি- সবারই এখন ব্যস্ত সময়। ভোর হতে না হতেই তাঁরা দলে দলে উৎসবের মেজাজে বাগানে প্রকাশ্যে স্প্রে করছেন ফল পাকানোর ওষুধ। দু-এক দিনের মধ্যেই ফলগুলো পেকে লালচে রং ধারণ করলে তাঁরা শ্রমিক লাগিয়ে সংগ্রহ করছেন এসব বিষাক্ত আনারস। এরপর এসব ফল সার বেঁধে অপেক্ষমাণ ঘোড়ার গাড়ি বা রিকশাভ্যানে করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন জলছত্র বাজার, গারো বাজার, মধুপুর বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি হাটে। পাইকাররা সেখান থেকে দরাদরি করে 'লোভনীয়' আনারস ট্রাকে করে পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ বড় বড় জেলা শহরের বাজারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গারো আদিবাসী বাগানের মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বছর দশেক আগেও আমাদের এখানে এমনভাবে রাসায়নিক সার, হরমোন ও ফল পাকানোর ওষুধের ব্যবহার ছিল না। তখন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত আদিবাসীদের আনারসের ছিল আলাদা কদর। কিন্তু বাজারে টিকে থাকতে এখন আমরাও বাধ্য হয়ে ফলে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছি। তবে আনারস চাষে পোকামাকড় তেমন হয় না বলে কীটনাশক কখনোই ব্যবহার করা হয় না।'
ওই আদিবাসী জানান, এবার ২০ বিঘা জমিতে তিনি আনারসের চাষ করেছেন। সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করেছেন 'আন্দাজ মতো' কয়েক বস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি। ফলের গুটি দেখার পর সেগুলোকে বিশালাকৃতির করতে 'ক্রোপস কেয়ার' নামক হরমোন ১০ লিটার পানিতে এক বোতল (পাঁচ মিলিমিটার, দাম ১২০ টাকা) দুবার স্প্রে করেছেন। এরপর ফলগুলো বড় হলে এগুলো তাড়াতাড়ি পাকিয়ে বাজারজাত করতে একবার ফল পাকানোর ওষুধ রাইপেন স্প্রে করেছেন। আশা করছেন, দু থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পাকলে তিনি এগুলো পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। সাধারণত ৬০০ আনারস পাকাতে ১৬ লিটার পানিতে এক বোতল রাইপেন (১০ মিমি, দাম ১০০ টাকা) ব্যবহার করতে হয়।
আরেকজন বাঙালি আনারসচাষি বলেন, সব সার, হরমোন, ফল পাকানো ওষুধের গায়ে এগুলোর ব্যবহার বিধি লেখা আছে। তবে বেশির ভাগ আনারসচাষি ও বাগানের শ্রমিক লেখাপড়া জানেন না বলে এসব রাসায়নিক পদার্থ তাঁরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন। বাজারের সার ও কীটনাশকের দোকানে তো বটেই, মুদির দোকানেও এসব রাসায়নিক পদার্থ সহজেই মেলে। মৌসুমের আগে শহরের বাজারে 'গাছপাকা আনারস' তুলতে পারলে এগুলো চড়া দামে বিক্রি করা যায়। তিনি জানান, পাইকারি দরে ছোট আকৃতির একেকটি আনারসের দাম পড়ে সাত টাকা; বড় আকৃতির ২০ টাকা। এগুলো ঢাকার বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
ময়মনসিংহ থেকে জলছত্রে প্রতিবছরই পাইকারি দরে আনারস কিনতে আসেন চান মিয়া। তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষান্তে আনারস গাছপাকা হয়। তবে বাগানের মালিক, চাষি বা পাইকার কেউই 'বেশি মুনাফা'র আশায় এত সময় অপেক্ষা করতে চান না। এ জন্য বাগানে সার-হরমোনের পাশাপাশি ফল পাকানো ওষুধ প্রয়োগ করেন তাঁরা।
চান মিয়া আরো জানান, এবার মধুপুরের অরুণখোলা, ষোলাকুঁড়ি, আউশনাড়া- এই তিনটি ইউনিয়নে আনারসের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে।
চান মিয়ার তথ্য মতে, মধুপুরের কাঁঠালেরও ভালো চাহিদা আছে। কাঁচা কাঁঠাল গাছ থেকে সংগ্রহ করে চাষিরা বোঁটার দিকে সরু শিক ঢুকিয়ে একটি গভীর ছিদ্র করেন। তারপর সেখানে সিরিঞ্জ দিয়ে প্রয়োগ করা হয় 'ফল পাকানো ওষুধ' রাইপেন বা প্রোপিট। এতে দু-এক দিনের মধ্যেই কাঁঠাল পেকে লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। তবে এগুলোর স্বাদ প্রাকৃতিকভাবে পাকানো ফলের মতো সুস্বাদু ও মিষ্টি নয়।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, এ বছর মধুপুরের ছয় হাজার হেক্টর আনারস বাগানের মধ্যে চার হাজার হেক্টরে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ হাজার আনারস ফলেছে। আনারস একবার লাগালে পরের মৌসুমে জমিকে অনাবাদি রাখতে হয় বলে এবার দুই হাজার হেক্টর চাষের বাইরে রাখা হয়েছে।
মধুপুরের আনারসে যথেচ্ছ রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হজরত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে প্রচলিত রাসায়নিক সার, হরমোন বা ফল পাকানোর ওষুধ বেচাকেনা- কোনোটিই নিষিদ্ধ নয়। তাই তাঁদের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল বাসিত বলেন, মাত্রাবিহীনভাবে জমিতে রাসায়নিক সার এবং ফলে হরমোন ও পাকানোর ওষুধ প্রয়োগে ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে এগুলো বিষাক্ত খাদ্যদ্রব্যে পরিণত হয়। এসব বিষাক্ত ফল খেলে যে কারো চর্মরোগ, পেটের পীড়া ও জণ্ডিস হতে পারে। দীর্ঘদিন এসব বিষ মেশানো ফল খেলে যে কারো কিডনি, যকৃৎ, হৃদযন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিশুদের দেহযন্ত্র অনেক কোমল থাকে বলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেশি।
No comments