চরাচর-জন্মনিবন্ধন প্রত্যেকের রক্ষাকবচ by তামান্না ইসলাম অলি
কাজলির বয়স ১৫ বছর। ও যৌনকর্মী। বয়স বেশি দেখিয়ে তাকে এ কাজে বাধ্য করা হয়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ও পারছে না আইনের আশ্রয় নিতে। কারণ ওর কাছে ওর বয়স প্রমাণের কোনো প্রমাণপত্র নেই। অথচ একটি জন্মসনদই পারত ওকে এ অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে। ওসমানের বয়স ১২ বছর। একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিক সে।
মালিক তাকে নিয়োজিত করেছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে, যা শিশুশ্রম আইনে নিষিদ্ধ। ওসমানের কাছেও নেই ওর বয়সের কোনো তথ্য। তাই বাধ্য হয়ে সারা দিন ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। আমাদের চারপাশে ওসমান ও কাজলিদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এর পরও ওরা আমাদের দেশের কম আয়ের পরিবার থেকে এসেছে। ওদের জন্য জন্মনিবন্ধন না করাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু পত্রিকার তথ্য এবং সাধারণ অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমাদের ধনী অথবা মধ্য আয়ের পরিবারগুলোতেও জন্মনিবন্ধনের হার খুব সন্তোষজনক নয়। অথচ এই নিবন্ধনের অভাবে আজকের শিশুদের ভবিষ্যতে নানা বিপদে পড়তে হয়। তাই জন্মনিবন্ধন উৎসাহিত করতে রীতিমতো জন্মনিবন্ধন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে।
আজ ৩ জুলাই। জন্মনিবন্ধন দিবস। প্রত্যেক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব বোঝাতে বাংলাদেশ সরকার এ দিনটিকে জন্মনিবন্ধন দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। নিবন্ধন মানে পরিচয় প্রকাশ। লিখিতভাবে শিশু জন্মের ঘোষণা দেওয়া। একজন মানুষের জন্মবৃত্তান্ত কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে লিখে রাখা এবং পরে সেই অনুযায়ী সনদ নেওয়া। জন্মনিবন্ধন মানুষের জীবনকে সহজ করে।
১৮৭৩ সালের ২ জুলাই ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলায় জন্মনিবন্ধন আইন জারি করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ আইন কার্যকর হয়নি। ২০০৬ সালে ইউনিসেফ-বাংলাদেশ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৮টি জেলায় ও চারটি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ শুরু করে নতুনভাবে। এ কাজে সরকারকে সহায়তা করছে ইউনিসেফ প্লান্ট ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশে ১৫ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের জন্মনিবন্ধন হয়েছে। ৩০ শতাংশ আছে নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার মধ্যে। বাকি ৩০ শতাংশকে এর আওতায় আনার জন্য জন্মনিবন্ধন সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকারবিষয়ক কার্যক্রম অনুযায়ী জন্মের পর পরই একটি শিশুর জন্মনিবন্ধন ও তার একটি নাম দেওয়া শিশুর অধিকার। শিশু পাচার, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এই জন্মসনদ অনেক কার্যকর। ইউনিসেফ তাই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, শ্রমিক শিশু, শিশু যৌনকর্মী ও শরণার্থী শিশুদের জন্মনিবন্ধনের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জন্মনিবন্ধন দরকার কেন? নানা কারণে একটি শিশুর বয়স নিশ্চিত হওয়া দরকার। যেমন- চিকিৎসা, স্কুলে ভর্তি, বিবাহ ও চাকরি পাওয়া। কারণ এসব ক্ষেত্রে শিশুর বয়স নিশ্চিত হলে তার জীবনের এ ধাপগুলোয় ওঠা অনেক কার্যকর হয়। এ ছাড়া শিশুর পরিচয় বা নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্যও জন্মনিবন্ধন দরকার।
পৃথিবীর সব মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশ। যে কারণে তাকেও মানতে হচ্ছে সব আন্তর্জাতিক নিয়ম। দিন দিন বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। তাই দীর্ঘ সময় জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে সবাই উদাসীন থাকলেও এখন জোর দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আগামী দিনগুলোয় যেকোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে করা হয়েছে। মোদ্দা কথা, জন্মসনদ শিশুর রক্ষাকবচ। এটি তাকে জীবনভর রক্ষা করবে।
তামান্না ইসলাম অলি
আজ ৩ জুলাই। জন্মনিবন্ধন দিবস। প্রত্যেক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব বোঝাতে বাংলাদেশ সরকার এ দিনটিকে জন্মনিবন্ধন দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। নিবন্ধন মানে পরিচয় প্রকাশ। লিখিতভাবে শিশু জন্মের ঘোষণা দেওয়া। একজন মানুষের জন্মবৃত্তান্ত কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে লিখে রাখা এবং পরে সেই অনুযায়ী সনদ নেওয়া। জন্মনিবন্ধন মানুষের জীবনকে সহজ করে।
১৮৭৩ সালের ২ জুলাই ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলায় জন্মনিবন্ধন আইন জারি করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ আইন কার্যকর হয়নি। ২০০৬ সালে ইউনিসেফ-বাংলাদেশ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৮টি জেলায় ও চারটি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ শুরু করে নতুনভাবে। এ কাজে সরকারকে সহায়তা করছে ইউনিসেফ প্লান্ট ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশে ১৫ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের জন্মনিবন্ধন হয়েছে। ৩০ শতাংশ আছে নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার মধ্যে। বাকি ৩০ শতাংশকে এর আওতায় আনার জন্য জন্মনিবন্ধন সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকারবিষয়ক কার্যক্রম অনুযায়ী জন্মের পর পরই একটি শিশুর জন্মনিবন্ধন ও তার একটি নাম দেওয়া শিশুর অধিকার। শিশু পাচার, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এই জন্মসনদ অনেক কার্যকর। ইউনিসেফ তাই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, শ্রমিক শিশু, শিশু যৌনকর্মী ও শরণার্থী শিশুদের জন্মনিবন্ধনের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জন্মনিবন্ধন দরকার কেন? নানা কারণে একটি শিশুর বয়স নিশ্চিত হওয়া দরকার। যেমন- চিকিৎসা, স্কুলে ভর্তি, বিবাহ ও চাকরি পাওয়া। কারণ এসব ক্ষেত্রে শিশুর বয়স নিশ্চিত হলে তার জীবনের এ ধাপগুলোয় ওঠা অনেক কার্যকর হয়। এ ছাড়া শিশুর পরিচয় বা নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্যও জন্মনিবন্ধন দরকার।
পৃথিবীর সব মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশ। যে কারণে তাকেও মানতে হচ্ছে সব আন্তর্জাতিক নিয়ম। দিন দিন বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। তাই দীর্ঘ সময় জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে সবাই উদাসীন থাকলেও এখন জোর দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আগামী দিনগুলোয় যেকোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে করা হয়েছে। মোদ্দা কথা, জন্মসনদ শিশুর রক্ষাকবচ। এটি তাকে জীবনভর রক্ষা করবে।
তামান্না ইসলাম অলি
No comments