বিশ্বব্যাংকের নানা অন্যায়ের ফিরিস্তি সংসদে
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, 'বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের ঋণচুক্তিটি বাতিল করে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশকে অপমান করা হয়েছে আর যে অপবাদটি দিয়েছে, তার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কোথাও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। আমার বিশ্বাস, বিশ্বব্যাংক এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।'
চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাতে কার্যপ্রণালি বিধির ৩০০ ধারায় প্রদত্ত বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী সরকারের এই দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ-সংক্রান্ত দীর্ঘ বিবৃতি প্রদানকালে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক তাঁর মেয়াদকালে বিষয়টির সুরাহা করার উদ্দেশ্যে একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশেষভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
নিজেকে আশাবাদী মানুষ দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমার বিশ্বাস বিশ্বব্যাংক এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। আমি আরো মনে করি, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও বিজ্ঞপ্তি বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে এই প্রকল্পের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্বব্যাংকে নিযুক্ত বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রকল্পের অন্য অর্থায়নকারীদের সঙ্গেও আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনার ব্যবস্থা করেছি।'
বিবৃতিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বিশেষ সংকট সম্পর্কে জাতিকে সরকারের অবস্থানটি প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরাই এই বিবৃতি প্রদানের উদ্দেশ্য। বিবৃতিদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি পরিহারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে তাও সঠিক নয়। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে দুর্নীতি নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করতে চেয়েছে। আমার কাছে এটি অপমানজনক মনে হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, যেভাবে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চিঠি লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়, এ ক্ষেত্রেও সেটি হওয়া বাঞ্ছনীয়।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পত্রালাপ হয়েছে সেগুলো সবই উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কিন্তু তদন্তের খাতিরে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি তাদের চিঠিপত্র প্রকাশ করিনি। প্রাসঙ্গিকভাবে যেসব বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে ভ্রান্তিমূলক তথ্য এসেছে, শুধু সেটুকুই শুধরেছি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের উদ্বেগ ও ঔৎসুক্য নিরসন করা।'
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, '২০১০ সালের এপ্রিল মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বাংলাদেশ তাদের সম্মতি নিয়ে মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্র মূল্যায়ন করে আমরা যখন আমাদের সুপারিশ বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করি তখন তারা প্রথমে একটি বিশেষ দরপত্রদাতাকে পুনর্বিবেচনার জন্য পরামর্শ দেয় এবং পরবর্তী সময়ে জানায়, সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে বিধায় নতুন দরপত্র আহ্বান করা উচিত। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করে ২০১০ সালের অক্টোবরে নতুন ডিজাইনের অভিজ্ঞতার শর্ত দিয়ে আমরা দরপত্র পুনরায় আহ্বান করি।'
আবুল মাল আবদুল মুহিত আরো বলেন, "বিশ্বব্যাংকে ২০১১ সালের মার্চ মাসে এই দরপত্র মূল্যায়ন করে আমরা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক-যোগ্য নির্দিষ্ট করে সুপারিশ পাঠাই। বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপন না করে 'সিআরসিসি' নামক একটি চীনা কম্পানিকে প্রাক-যোগ্যতায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করার জন্য আমাদের তিন-তিনবার পরামর্শ দেয়। এই পরামর্শ আমাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটি গ্রহণ করেনি এবং সেতু বিভাগ অনুসন্ধান করে জানতে পারে, চীনা কম্পানি সিআরসিসি কখনো পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেনি এবং ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে তাদের বাংলাদেশি সহযোগী এই বিষয়ে জালিয়াতি করেছে।'
অর্থমন্ত্রী জানান, এই জালিয়াত প্রতিষ্ঠান চীনে একটি দপ্তর স্থাপন করে সেখান থেকে সিআরসিসির নামে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সিআরসিসি এই তথ্য জানার পর লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়, তারা এই কাজের জন্য আগ্রহী নয়। একই সঙ্গে তারা ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সহযোগী হিসেবে বরখাস্ত করে। ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালের কর্তাব্যক্তি এই মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আছেন। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক সিআরসিসির অভিযোগ যথাযথ পরীক্ষা না করেই এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বারবার পরামর্শ দেওয়ার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় তিন মাস পিছিয়ে যায়। আমরা জানি না যেসব ব্যক্তি এই জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না।' অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের ইনট্রিগিটি দপ্তরের দুই কর্মকর্তা ঢাকায় এসে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে এক আলোচনায় তাঁরা যোগ দেন এবং সেখানে অত্যন্ত অশোভন গুজব রটানোর সূত্রপাত করেন। এই আসরে হাওয়ার্ড ডিন নামের একজন কর্মকর্তা কোনো সম্মানিত ব্যক্তিবিশেষের সম্বন্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এতে আসরে উপস্থিত একজন সদস্য শক্তভাবে প্রতিবাদ করেন এবং তাঁকে এ রকম রটনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। তিনি তাঁকে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতেও চ্যালেঞ্জ করেন। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আমরা বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংককে জানাই। কিন্তু আমরা আজও জানি না বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বা তদন্ত রুজু করেছে কি না।'
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, 'আগস্ট মাসে বিশ্বব্যাংক আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে সেতু নির্মাণের পর্যবেক্ষক পরামর্শক নিযুক্তির জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেখানে এসএনসি লাভালিন নামের একটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান দরপত্র পেশ করে। তাদের বিরুদ্ধে কানাডায় তদন্ত হচ্ছে এবং সে জন্য ও অন্যান্য কারণেও বিশ্বব্যাংক আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত রাখতে চায়।' তিনি বলেন, 'সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে একটি ঝটিকা সফরে এসে জানান, তাঁদের তদন্তে শুধু নির্মাণকাজের পরামর্শক নয়, নির্মাণকাজের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন বিষয়েও কিছু অনিয়ম প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন তাঁরা অচিরেই আমাদের কাছে পাঠাবেন। সেই সময় বিশ্বব্যাংকের ওই ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং আমাকে এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি প্রস্তাবও প্রদান করেন।' অর্থমন্ত্রী বলেন, '২১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সফরে গেলে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত চিঠি এবং এর সঙ্গে একটি প্রতিবেদনও আমার কাছে হস্তান্তর করে। আমি তাদের বলি, আমার মনে হয় আমরা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের জন্য পাঠাব এবং একই সঙ্গে দুর্নীতিতে লিপ্ত এসএনসি লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্তও করতে পারি। ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়ে দিই। পরে জানতে পারি, দুর্নীতি দমন কমিশন নিজে থেকেই পদ্মা সেতুর ব্যাপারে জুলাই মাস থেকে এই প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে।' তিনি বলেন, 'এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বিবেচনার বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। তারা এই দরপত্র গ্রহণে এবং মূল্যায়নে কোনো দুর্নীতির আলামত পায়নি বলে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। বিশেষ করে এই দরপত্র মূল্যায়নে অভিযুক্ত সাকো কম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা তাদের তদন্তে প্রতিভাত হয়নি বলে তারা জানাল। বিশ্বব্যাংক তখন এই বিষয়ে আরো অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে উপদেশ দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কাছে যে সাক্ষী-সাবুদ আছে, সে সম্বন্ধে কোনো তথ্য দিতে তারা প্রথা অনুযায়ী অস্বীকৃতি জানায়।'
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাতে কার্যপ্রণালি বিধির ৩০০ ধারায় প্রদত্ত বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী সরকারের এই দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ-সংক্রান্ত দীর্ঘ বিবৃতি প্রদানকালে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক তাঁর মেয়াদকালে বিষয়টির সুরাহা করার উদ্দেশ্যে একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশেষভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
নিজেকে আশাবাদী মানুষ দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমার বিশ্বাস বিশ্বব্যাংক এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। আমি আরো মনে করি, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও বিজ্ঞপ্তি বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে এই প্রকল্পের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্বব্যাংকে নিযুক্ত বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রকল্পের অন্য অর্থায়নকারীদের সঙ্গেও আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনার ব্যবস্থা করেছি।'
বিবৃতিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বিশেষ সংকট সম্পর্কে জাতিকে সরকারের অবস্থানটি প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরাই এই বিবৃতি প্রদানের উদ্দেশ্য। বিবৃতিদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি পরিহারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে তাও সঠিক নয়। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে দুর্নীতি নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করতে চেয়েছে। আমার কাছে এটি অপমানজনক মনে হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, যেভাবে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চিঠি লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়, এ ক্ষেত্রেও সেটি হওয়া বাঞ্ছনীয়।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পত্রালাপ হয়েছে সেগুলো সবই উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কিন্তু তদন্তের খাতিরে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি তাদের চিঠিপত্র প্রকাশ করিনি। প্রাসঙ্গিকভাবে যেসব বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে ভ্রান্তিমূলক তথ্য এসেছে, শুধু সেটুকুই শুধরেছি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের উদ্বেগ ও ঔৎসুক্য নিরসন করা।'
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, '২০১০ সালের এপ্রিল মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বাংলাদেশ তাদের সম্মতি নিয়ে মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্র মূল্যায়ন করে আমরা যখন আমাদের সুপারিশ বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করি তখন তারা প্রথমে একটি বিশেষ দরপত্রদাতাকে পুনর্বিবেচনার জন্য পরামর্শ দেয় এবং পরবর্তী সময়ে জানায়, সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে বিধায় নতুন দরপত্র আহ্বান করা উচিত। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করে ২০১০ সালের অক্টোবরে নতুন ডিজাইনের অভিজ্ঞতার শর্ত দিয়ে আমরা দরপত্র পুনরায় আহ্বান করি।'
আবুল মাল আবদুল মুহিত আরো বলেন, "বিশ্বব্যাংকে ২০১১ সালের মার্চ মাসে এই দরপত্র মূল্যায়ন করে আমরা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক-যোগ্য নির্দিষ্ট করে সুপারিশ পাঠাই। বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপন না করে 'সিআরসিসি' নামক একটি চীনা কম্পানিকে প্রাক-যোগ্যতায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করার জন্য আমাদের তিন-তিনবার পরামর্শ দেয়। এই পরামর্শ আমাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটি গ্রহণ করেনি এবং সেতু বিভাগ অনুসন্ধান করে জানতে পারে, চীনা কম্পানি সিআরসিসি কখনো পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেনি এবং ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে তাদের বাংলাদেশি সহযোগী এই বিষয়ে জালিয়াতি করেছে।'
অর্থমন্ত্রী জানান, এই জালিয়াত প্রতিষ্ঠান চীনে একটি দপ্তর স্থাপন করে সেখান থেকে সিআরসিসির নামে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সিআরসিসি এই তথ্য জানার পর লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়, তারা এই কাজের জন্য আগ্রহী নয়। একই সঙ্গে তারা ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সহযোগী হিসেবে বরখাস্ত করে। ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালের কর্তাব্যক্তি এই মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আছেন। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক সিআরসিসির অভিযোগ যথাযথ পরীক্ষা না করেই এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বারবার পরামর্শ দেওয়ার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় তিন মাস পিছিয়ে যায়। আমরা জানি না যেসব ব্যক্তি এই জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না।' অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের ইনট্রিগিটি দপ্তরের দুই কর্মকর্তা ঢাকায় এসে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে এক আলোচনায় তাঁরা যোগ দেন এবং সেখানে অত্যন্ত অশোভন গুজব রটানোর সূত্রপাত করেন। এই আসরে হাওয়ার্ড ডিন নামের একজন কর্মকর্তা কোনো সম্মানিত ব্যক্তিবিশেষের সম্বন্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এতে আসরে উপস্থিত একজন সদস্য শক্তভাবে প্রতিবাদ করেন এবং তাঁকে এ রকম রটনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। তিনি তাঁকে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতেও চ্যালেঞ্জ করেন। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আমরা বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংককে জানাই। কিন্তু আমরা আজও জানি না বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বা তদন্ত রুজু করেছে কি না।'
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, 'আগস্ট মাসে বিশ্বব্যাংক আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে সেতু নির্মাণের পর্যবেক্ষক পরামর্শক নিযুক্তির জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেখানে এসএনসি লাভালিন নামের একটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান দরপত্র পেশ করে। তাদের বিরুদ্ধে কানাডায় তদন্ত হচ্ছে এবং সে জন্য ও অন্যান্য কারণেও বিশ্বব্যাংক আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত রাখতে চায়।' তিনি বলেন, 'সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে একটি ঝটিকা সফরে এসে জানান, তাঁদের তদন্তে শুধু নির্মাণকাজের পরামর্শক নয়, নির্মাণকাজের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন বিষয়েও কিছু অনিয়ম প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন তাঁরা অচিরেই আমাদের কাছে পাঠাবেন। সেই সময় বিশ্বব্যাংকের ওই ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং আমাকে এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি প্রস্তাবও প্রদান করেন।' অর্থমন্ত্রী বলেন, '২১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সফরে গেলে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত চিঠি এবং এর সঙ্গে একটি প্রতিবেদনও আমার কাছে হস্তান্তর করে। আমি তাদের বলি, আমার মনে হয় আমরা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের জন্য পাঠাব এবং একই সঙ্গে দুর্নীতিতে লিপ্ত এসএনসি লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্তও করতে পারি। ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়ে দিই। পরে জানতে পারি, দুর্নীতি দমন কমিশন নিজে থেকেই পদ্মা সেতুর ব্যাপারে জুলাই মাস থেকে এই প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে।' তিনি বলেন, 'এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বিবেচনার বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। তারা এই দরপত্র গ্রহণে এবং মূল্যায়নে কোনো দুর্নীতির আলামত পায়নি বলে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। বিশেষ করে এই দরপত্র মূল্যায়নে অভিযুক্ত সাকো কম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা তাদের তদন্তে প্রতিভাত হয়নি বলে তারা জানাল। বিশ্বব্যাংক তখন এই বিষয়ে আরো অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে উপদেশ দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কাছে যে সাক্ষী-সাবুদ আছে, সে সম্বন্ধে কোনো তথ্য দিতে তারা প্রথা অনুযায়ী অস্বীকৃতি জানায়।'
No comments