সম্ভাবনা ও সমস্যা

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর_এ কথা সবারই জানা। সাধারণ একজনেরও এটা জানা আছে, কিছু সমস্যার কারণে আমাদের পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। অভিযোগ আছে, আমাদের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যটন শিল্প নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। এ রকম মনে হওয়ার কারণও আছে।


গত দুই দশকে দেশে একটি পর্যটন নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি। এ অবস্থায় এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের প্রতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে নানা দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকরা যেমন আসবেন, তেমনি আসবেন বিদেশি পর্যটকরাও। কিন্তু খেলার পাশাপাশি পর্যটকদের আর কী দিতে পারছি আমরা? এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যে বিদেশিরা থাকবেন এ দেশে, তাঁদের কোন আকর্ষণে বেঁধে রাখা যাবে?
এ সম্ভাবনার মুখে বাংলাদেশের জন্য আরো বড় একটি সুখবর দিয়েছে 'লোনলি প্লানেট' নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটি বলছে, বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য ২০১১ সালে পৃথিবীর সেরা দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক তাঁদের গন্তব্য ঠিক করেন। একই সঙ্গে এ বছরটি বাংলাদেশের জন্য পর্যটন বর্ষ। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আরো তিনটি দেশ এ বছরকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পর্যটন নীতিমালা করা হয়েছিল। ওই নীতিমালায় বলা হয়, বিদেশি পর্যটকদের আধুনিক ও চিত্তবিনোদনের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। সুন্দরবন ও কঙ্বাজারের জন্য নেওয়া হবে মহাপরিকল্পনা। বিদেশি পর্যটকদের আগমন ও বহির্গমন সহজ করা হবে। দূতাবাসগুলোতে এ সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া হবে। কিন্তু ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে গত বছর পর্যটন নীতিমালাটি হালনাগাদ করে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা-২০১০ নামে আরেকটি নীতিমালা করেছে সরকার। ১৮ বছর আগের নীতিমালায় যা যা করার কথা ছিল, তার সবই স্থান পেয়েছে এবারের পরিকল্পনায়ও। কিন্তু কবে নাগাদ সেটি বাস্তবায়িত হবে, তা জানা নেই কারো। এত অবহেলার পরও বাংলাদেশে পর্যটক বাড়ছে। পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন এক লাখ ৯৯ হাজার ২১১ পর্যটক। ২০০৯ সালে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পর্যটন খাত থেকে সরকারের আয়ও প্রতিবছর বেড়েছে। ২০০১ সালে আয় ছিল দুই হাজার ৬৫৩ দশমিক ৮০ মিলিয়ন। সেটা ২০০৯ সালে পাঁচ হাজার ৭৬২ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালে এ অঙ্ক অনেক বেশি হবে বলে মনে করছে পর্যটন করপোরেশন। কিন্তু পর্যটকদের আকৃষ্ট করার যে সুযোগটি এখন একেবারে হাতের নাগালে, সে সুযোগ কাজে লাগানোর প্রস্তুতি একেবারেই নেই। এ অবস্থায় পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতটুকু আশাবাদী হতে পারি আমরা?

No comments

Powered by Blogger.