নিষিদ্ধ বোমা মেশিনে পাথর তোলায় বাঁধের এই দশা?

সিলেটের জাফলংয়ে আদিবাসী পল্লি রক্ষায় পিয়াইন নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বাঁধের অধিকাংশ বিলীন হওয়ায় আদিবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমে বোল্ডার পাথর ফেলে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা করছে। নদীতীরে পাথর বসিয়ে বাঁধ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় বাঙালিরাও যোগ দিয়েছেন বাঁধ রক্ষার কাজে।


সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং এলাকার সংগ্রামপুঞ্জিতে শতাধিক খাসিয়া আদিবাসী পরিবার ও অর্ধশতাধিক বাঙালি পরিবার বসবাস করছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতে নেমেছেন বলে তাঁরা জানান। সংগ্রামপুঞ্জির বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জাফলংয়ে পিয়াইন নদে পাথর উত্তোলনে অবাধে অবৈধ বোমা মেশিন ব্যবহারে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এ অবস্থা হয়েছে।
সিলেটের জাফলং একটি পর্যটন এলাকা। জাফলংয়ে বেড়াতে যাওয়া মানুষের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে আদিবাসী পল্লি। আদিবাসী পল্লি না থাকলে জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে, এ আশঙ্কা প্রকাশ করে জাফলংয়ে পর্যটনশিল্পের উদ্যোক্তা হাসান মোরশেদ জানান, সীমান্ত নদী দিয়ে প্রতিবছরই পাহাড়ি ঢল নামে। কিন্তু এবার ঢলের তোড়ে বাঁধ টিকতে না পারার একটাই কারণ, আর সেটি হচ্ছে পাথর উত্তোলনে যত্রতত্রভাবে নিষিদ্ধ বোমা মেশিনের ব্যবহার। এ কারণেই বাঁধ নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল।
গত শনিবার সরেজমিনে গেলে আদিবাসীসহ স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যায় আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত সংগ্রামপুঞ্জির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পিয়াইন নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পাউবো এক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। গত সপ্তাহের পাহাড়ি ঢলে পুরো বাঁধটি ভেঙে যায়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হলেও বাঁধ মেরামতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন সংগ্রামপুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসীরা। তাঁদের আশঙ্কা, যেভাবে বাঁধ ভেঙেছে তাতে আরেক দিন ঢল নামলেই পুরো সংগ্রামপুঞ্জি তলিয়ে যাবে।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও ইফতেখার আহমদ চৌধুরী বলেন, বাঁধ পরিদর্শন করে তিনি পাউবোকে চিঠি দিয়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাঁধ আর রক্ষা করা যাবে না। গতকাল সোমবার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শৈলেন চন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আসলে পাউবোর বাঁধ নয়। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় খণ্ডকালীন প্রতিরক্ষামূলক একটি ব্যবস্থা পাউবো করে দিয়েছিল। পাউবোর বাঁধ হলে প্রতিবছর এটি সংরক্ষণে সংস্কারকাজ হতো। তা নয় বলে ১৯৮৮ সালের পর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। এ অবস্থায় পাউবোর একদল পর্যবেক্ষকদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণে আমরা ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া যায়, তা বিবেচনা করছি।’

No comments

Powered by Blogger.