নিবন্ধনহীন কাগজ ব্যবসা-অচিরেই বন্ধ করতে হবে অনিয়ম

অনিয়মের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাগজ ক্রয় এবং কিছু কাগজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাগজ সরবরাহসংক্রান্ত অনিয়ম। নিয়ম হলো, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট বা বিএসটিআইর সার্টিফিকেট মার্কস (সিএম) নিবন্ধন না নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ তো দূরের কথা, কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বাজারেও ছাড়া যাবে না।


অথচ তা-ই করা হচ্ছে; এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এই অনিয়মে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করতে হলে বিএসটিআইর সিএম সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সিএম নিবন্ধন ছাড়াই কাগজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ পাওয়া গেছে, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানের কাগজ কিনে সরকারি প্রতিষ্ঠানই আইন লঙ্ঘন করছে। এ বিষয়ে আইন মেনে চলা প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার অভিযোগ করলেও তাতে কর্ণপাত করা হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, বাজারে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করে ব্যবসা করছে; এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করছে, যাদের কোনো নিবন্ধন সনদ নেই। উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর ৫০ হাজার টন কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বভাবতই এই কাগজ খোলাবাজার থেকে কেনা হয়ে থাকে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাগজ জাতির জন্য এক মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটা পুস্তক ছাপা অথবা কাগজ ব্যবহার- দুই ক্ষেত্রেই। এর সঙ্গে সরাসরি দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মানসম্পন্ন শিক্ষার বিষয়টি জড়িত। দেশের শিক্ষামন্ত্রী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার সার্বিক মান নিশ্চিত করতে। অথচ এই অনিয়ম অনেকটাই আলোর নিচে অন্ধকারের মতো বিদ্যমান। কোনোক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না, কাগজ ব্যবসার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় বিএসটিআইর নিবন্ধনবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চরম অনিয়মের বিরুদ্ধে বিএসটিআইকেই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিএসটিআই যদি ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে পুরো দায় বিএসটিআইর ওপরই বর্তায়। যে প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআই থেকে নিবন্ধন নিয়ে থাকে, তাদের একটি নিবন্ধন ফি দিতে হয়। পাশাপাশি যারা নিবন্ধন নেয় না, তাদের এই খরচটি বেঁচে যায়। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে নিবন্ধন না নেওয়া এবং অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রত্যক্ষ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সরকারও ওই অনিয়ম করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে, অর্থাৎ নিবন্ধন না করার ফলে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যত শিগগির সম্ভব এই অনিয়ম দূর করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.