ড. বেগম জাহান আরা-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'রেড অ্যালার্ট' ও কিছু প্রশ্ন
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একার পক্ষে পূরণ সম্ভবপর না হওয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্রাটিও যোগ হয়। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় দুই লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।
ফলে বাংলাদেশের অনেক ছাত্রছাত্রী এখন বিদেশে না গিয়ে দেশে বসেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা কয়েক হাজার গ্র্যাজুয়েট দেশের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে ও দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বহুমাত্রিক সাফল্যের পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা বা অনিয়মও এই খাতের বাস্তবতা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেকটা একতরফাভাবেই অনেকে যেন শুধুই এই দুঃখজনক দিকটিই প্রচার করছেন। এর ভিত্তিতে আইন পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
গত বছর জুলাই মাসে সর্বমোট ৫৩টি ধারা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন এই ৫৩টি ধারার একটি মাত্র। বাকি ৫২টি ধারা বাদ দিয়ে শুধু একটির ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্তরবিন্যাস করা হয়। শিক্ষা ও গবেষণার মানসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করে এ ধরনের স্তরবিন্যাস কি যুক্তিসংগত?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। আরো বলা হয়েছে, যারা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারবে তারা আগামী ফল সেমিস্টারের পর তথা জানুয়ারি ২০১২ থেকে নতুন কোনো ছাত্রভর্তি করতে পারবে না। এ ছাড়াও এদের ওপর নতুন কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট খুলতে না দেওয়াসহ আরো কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। একমাত্র ইস্যু স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে কথা বলতে গেলেও প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপক বয়সভেদের দিকে নজর দিতে হবে। আলোচিত ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৩টির বয়স ১২ বছরের বেশি। অন্যগুলোর বয়স_একটির ১০, একটির ছয়, ১০টির আট, ১৬টির সাত, সাতটির ৯, একটির পাঁচ ও দুইটি চার বছরের।
সরকার নতুন আইনেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য সাত বছর ও প্রয়োজনে পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ রেখেছে। সরকার যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কার্যত আইনেই ১২ বছর সময়ের প্রয়োজন স্বীকার করেছেন সেখানে ১২ বছরের কম বয়সী পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এত কঠোরতা কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত? সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছে। পুরনো ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বিশেষে ছাত্রভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নতুনদের জন্য বৈষম্যমূলক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরবিন্যাস অনুসারে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্তরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও ইতিমধ্যে ১২ বছর পার করে কার্যত আরো পাঁচ বছর সময় পেয়ে যাচ্ছে। অতএব, অনেকে ১২ থেকে ২৮ বছরে ক্যাম্পাস করে 'বৈধ' মর্যাদা পাচ্ছে, অনেকে না করেও আরো পাঁচ বছর পাচ্ছে, তাহলে যাদের বয়স আগামী সেপ্টেম্বর সাত কী আট হবে, তাদেরও ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত হবে তা চিন্তা করতে হবে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি সরকার তাদের সবাইকে পাঁচ বছর সময় দিয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থানান্তরের সময় পাঁচ বছর বলা হলেও ছাত্রভর্তি ও নতুন বিভাগ খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার ফলে এই সময়কাল এক বছরেরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টরে এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তি বন্ধ অর্থই হচ্ছে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেতন হচ্ছে আয়ের প্রধান উৎস। এ উৎস বন্ধ হলে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না। ভৌত অবকাঠামো চলমান রাখা সম্ভব হবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি শেষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া ছাত্রভর্তি বন্ধ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে শিক্ষক এবং স্টাফ মিলে প্রায় আট হাজার মানুষ বেকার হবে। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ এবং প্রতিবছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে ৫০ হাজার এইচএসসি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। যারা ১৮ বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে তাদের সবাই ব্যাপক ঋণ সুবিধা ভোগ করেছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৯(৩) ধারায় এ সুবিধাও বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার ভর্তি বন্ধের মাধ্যমে তাদের আয়েরও ব্যাপক সংকোচন নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঋণ ও আয় বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয়বহুল ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে বলা কি বাস্তবসংগত প্রস্তাব? বলা হচ্ছে, ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এর ক্ষুদ্রাংশই আগামী ফল সেমিস্টারের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এর মধ্যে কয়টি রাতারাতি কতটা মান অর্জন করতে পারবে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। দেশের চলমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না তাও ভাবনার বিষয়। মনে হয়, ৪৩টি চলমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীচ্ছু হাজার পঞ্চাশেক ছাত্র কিছুতেই মাত্র আটটি তথাকথিত 'বৈধ' ও কয়েকটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকুলান হবে না। এখানে রাতারাতি কয়েক হাজার গুণগতমানের শিক্ষক এবং স্টাফের চাকরির বন্দোবস্ত করাও সহজে সম্ভব হবে না। অতএব, নতুন আইনানুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে পাঁচ বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা নিঃশর্তকরণ এবং এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য উৎসাহী করাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর ২০১১-এর মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের শর্ত পুনর্বিবেচনায় দাবি রাখে। অন্যথায় এ আইনের ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টরে উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গত বছর জুলাই মাসে সর্বমোট ৫৩টি ধারা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন এই ৫৩টি ধারার একটি মাত্র। বাকি ৫২টি ধারা বাদ দিয়ে শুধু একটির ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্তরবিন্যাস করা হয়। শিক্ষা ও গবেষণার মানসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করে এ ধরনের স্তরবিন্যাস কি যুক্তিসংগত?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। আরো বলা হয়েছে, যারা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারবে তারা আগামী ফল সেমিস্টারের পর তথা জানুয়ারি ২০১২ থেকে নতুন কোনো ছাত্রভর্তি করতে পারবে না। এ ছাড়াও এদের ওপর নতুন কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট খুলতে না দেওয়াসহ আরো কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। একমাত্র ইস্যু স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে কথা বলতে গেলেও প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপক বয়সভেদের দিকে নজর দিতে হবে। আলোচিত ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৩টির বয়স ১২ বছরের বেশি। অন্যগুলোর বয়স_একটির ১০, একটির ছয়, ১০টির আট, ১৬টির সাত, সাতটির ৯, একটির পাঁচ ও দুইটি চার বছরের।
সরকার নতুন আইনেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য সাত বছর ও প্রয়োজনে পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ রেখেছে। সরকার যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কার্যত আইনেই ১২ বছর সময়ের প্রয়োজন স্বীকার করেছেন সেখানে ১২ বছরের কম বয়সী পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এত কঠোরতা কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত? সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছে। পুরনো ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বিশেষে ছাত্রভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নতুনদের জন্য বৈষম্যমূলক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরবিন্যাস অনুসারে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্তরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও ইতিমধ্যে ১২ বছর পার করে কার্যত আরো পাঁচ বছর সময় পেয়ে যাচ্ছে। অতএব, অনেকে ১২ থেকে ২৮ বছরে ক্যাম্পাস করে 'বৈধ' মর্যাদা পাচ্ছে, অনেকে না করেও আরো পাঁচ বছর পাচ্ছে, তাহলে যাদের বয়স আগামী সেপ্টেম্বর সাত কী আট হবে, তাদেরও ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত হবে তা চিন্তা করতে হবে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি সরকার তাদের সবাইকে পাঁচ বছর সময় দিয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থানান্তরের সময় পাঁচ বছর বলা হলেও ছাত্রভর্তি ও নতুন বিভাগ খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার ফলে এই সময়কাল এক বছরেরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টরে এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তি বন্ধ অর্থই হচ্ছে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেতন হচ্ছে আয়ের প্রধান উৎস। এ উৎস বন্ধ হলে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না। ভৌত অবকাঠামো চলমান রাখা সম্ভব হবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি শেষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া ছাত্রভর্তি বন্ধ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে শিক্ষক এবং স্টাফ মিলে প্রায় আট হাজার মানুষ বেকার হবে। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ এবং প্রতিবছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে ৫০ হাজার এইচএসসি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। যারা ১৮ বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে তাদের সবাই ব্যাপক ঋণ সুবিধা ভোগ করেছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৯(৩) ধারায় এ সুবিধাও বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার ভর্তি বন্ধের মাধ্যমে তাদের আয়েরও ব্যাপক সংকোচন নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঋণ ও আয় বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয়বহুল ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে বলা কি বাস্তবসংগত প্রস্তাব? বলা হচ্ছে, ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এর ক্ষুদ্রাংশই আগামী ফল সেমিস্টারের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এর মধ্যে কয়টি রাতারাতি কতটা মান অর্জন করতে পারবে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। দেশের চলমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না তাও ভাবনার বিষয়। মনে হয়, ৪৩টি চলমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীচ্ছু হাজার পঞ্চাশেক ছাত্র কিছুতেই মাত্র আটটি তথাকথিত 'বৈধ' ও কয়েকটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকুলান হবে না। এখানে রাতারাতি কয়েক হাজার গুণগতমানের শিক্ষক এবং স্টাফের চাকরির বন্দোবস্ত করাও সহজে সম্ভব হবে না। অতএব, নতুন আইনানুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে পাঁচ বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা নিঃশর্তকরণ এবং এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য উৎসাহী করাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর ২০১১-এর মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের শর্ত পুনর্বিবেচনায় দাবি রাখে। অন্যথায় এ আইনের ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টরে উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments