পিলখানা হত্যা মামলা-মইন উ আহমেদসহ চারজনকে সাক্ষ্য দিতে সমন

পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সাবেক সেনাপ্রধানসহ চারজনকে সমন পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ সমন জারি করেন। যাঁদের সমন দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদ, সাবেক আইজিপি নূর


মোহাম্মদ, মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন ও তৎকালীন বিডিআর হাসপাতালের চিকিৎসক কর্নেল জাহানারা বেগম। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম বাহার কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী ২৫ জুলাই সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাঁদের চারজনকে আসতে বলা হয়েছে। গতকাল যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের কাছে সমন পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়েছে ৪ জুলাই।
অন্যদিকে গতকাল পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহত কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী ও নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজমের স্ত্রী মুনমুন আক্তারসহ ১০ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নেহরীন ফেরদৌসী ও মুনমুন আক্তার আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বামী হত্যার বিচার চান।
নেহরীনের সাক্ষ্য : কর্নেল মুজিবের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী আদালতকে জানান, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পিলখানার বাংলো থেকে কর্নেল মুজিব দরবারে যোগ দেওয়ার জন্য গাড়িচালক মোস্তফা ও রানার নায়েক জিয়াকে নিয়ে রওনা দেন। বাসায় তখন তাঁর সঙ্গে ছিল দ্বিতীয় ছেলে নাদীত হক ওরফে প্রীতম, কুক হযরত আলী, ওয়েটার মেহেদী, ঝাড়ুদার আকরাম ও গৃহকর্মী মীনা। সকাল ৯টার দিকে তিনি আরেক গাড়িচালক আউয়াল ও একজন নতুন সৈনিক নিয়ে পিলখানার জিমে যান। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সৈনিকদের হৈ-হল্লা শুনে তিনি ভেবেছিলেন সৈনিকরা আনন্দ করছেন। এর পাঁচ-সাত মিনিট পর তিনি গুলির শব্দ শোনেন। অল্প কিছুক্ষণ পর কর্নেল মুজিবের পিএ কামরুজ্জামান মোবাইল ফোনে তাঁকে বলেন, 'ম্যাডাম, আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। বের হবেন না। কারণ সৈনিকরা রিভল্ট (বিদ্রোহ) করেছে।' সাহেবের (কর্নেল মুজিব) কথা জিজ্ঞেস করলে পিএ বলেন, 'স্যার রানার জিয়ার সঙ্গে আছেন। তাঁকে কিছু করবে না।'
নেহরীন আদালতে আরো বলেন, 'এরপর আমি ছেলে প্রীতমকে ফোন করে ঘটনার কথা জানিয়ে সাবধানে থাকতে বলি। তারপর ডিজি (মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ) ভাবিকে ফোন করে বিদ্রোহের বিষয় জানালে তিনি বলেন, তাই নাকি। কেন কেন?'
নেহরীন জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁকে তিনজন সৈনিক কোয়ার্টার গার্ডের সামনে নিয়ে যান। সেখান থেকে পিকআপে করে ৪ নম্বর গেটে নিয়ে যান। রাত ৮টার দিকে তিনি জানতে পারেন, কামরাঙ্গীরচরে ড্রেন দিয়ে ভেসে যাওয়ার সময় কর্নেল মুজিবের লাশ পাওয়া গেছে।
মুনমুন আক্তারের সাক্ষ্য : লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজমের স্ত্রী মুনমুন অক্তার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর স্বামীকে ফোন করলে তিনি তাঁকে বলেন, 'আমি ভালো আছি। তুমি বাচ্চাদের নিয়ে খাবার টেবিলের নিচে মাথা নিচু করে বসে থাকো। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আজমের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।' তিনি বলেন, 'দুই দিন আর আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ২৭ ফেব্রুয়ারি মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে তাঁর মৃতদেহ দেখতে পাই।'
টার্গেট ডিসেম্বর : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পিলখানা হত্যা মামলার রায় সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নিহতদের স্ত্রী ও স্বজনরা এভাবে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেবেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এক হাজার ২৮৭ জন সাক্ষী রয়েছেন এই মামলায়। সব সাক্ষীকে হাজির করলে এই সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করা সম্ভব হবে না।
কারাগারের পাশে উমেশ দত্ত রোডের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে গত বছর ৫ জানুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত ২৭১ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ মামলায় আসামির সংখ্যা ৮৫০। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.