অবৈধ অস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা-নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা প্রয়োজন

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে? সাম্প্রতি কিছু ঘটনার পর এ প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, সরকারের মেয়াদ প্রায় ফুরিয়ে আসা। এ সময়ে সরকারি দলের মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ যেমন নিজেদের ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে অস্ত্রের মহড়া দিতে পারে,


তেমনি বাইরে থেকে সরকারি দলে ভিড়ে গিয়ে বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পেশাদার ভাড়াটে কোনো গ্রুপকে দিয়েও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থির করে তোলার চেষ্টা করা হতে পারে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা তারই ইঙ্গিত দেয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরেও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সন্ত্রাসীদের কাছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে। এমন খবর রীতিমতো উদ্বেগের। প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের ব্যবহার দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
বিষয়টি মেনে নিতে রাজি নয় পুলিশ। পুলিশের মহাপরিদর্শক সম্প্রতি একটি দৈনিককে বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। পুলিশ নিয়মিতই অবৈধ অস্ত্রবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। অনেক অস্ত্র ব্যবসায়ী পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তারও হয়েছে। পুলিশ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে তাঁর এ বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয় না। গত রবিবার রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগের অফিসে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। গত ১২ জুন সড়ক ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। গত ২৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তিন ছাত্রনেতা গুলিবিদ্ধ হন। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এক সংসদ সদস্যের কাছারি ঘর থেকে গত শনিবার অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ অস্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী শুধু রাজধানীতেই সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখের মতো ছোট অস্ত্র রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বড় ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। দেশে কমপক্ষে ১২৪টি বড় ধরনের ক্রাইম সিন্ডিকেট ছিল বা আছে এবং এর ২৪টিরও বেশি ঢাকায়। তাদের কাছে আছে কমবেশি তিন লাখ ২০ হাজার থেকে চার লাখ ৮০ হাজার অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্র। আরেকটি হিসাবে প্রকাশ, এসব অস্ত্রের ৬০ শতাংশ ব্যবহার করে মূল ধারার রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা। ৩০ শতাংশ অস্ত্র আছে আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের কাছে। এর মধ্যে আছে পার্বত্য বিদ্রোহী এবং রোহিঙ্গারা। আর ১০ শতাংশ অস্ত্র আছে সাধারণ অপরাধীদের কাছে। ওই হিসাবে আরো দেখা গেছে, অবৈধ অস্ত্রের অর্ধেক ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে তৈরি দেশি অস্ত্র। ৩০ শতাংশ বিদেশি পিস্তল ও রিভলবার। এই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দেশে প্রায় ১০ হাজার পেশাদার সন্ত্রাসীর হাতে লাইসেন্স করা বা টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা অত্যাধুনিক ৯ এমএম পিস্তল রয়েছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে- এমনটি ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.