পরিচ্ছন্ন ঢাকার স্বপ্ন-পোস্টার-ফেস্টুনের জঞ্জাল সরাতে হবে

'কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে'- বিগত শতকের কবি এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন কলকাতাকে নিয়ে। আবার এই শহর কলকাতার হতশ্রী দশা নিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে'। আজ আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকার সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যাচ্ছে পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানারে।


দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁদের আসা-যাওয়ার পথের ধারে শোভা পাচ্ছে নানা বর্ণের ও ধরনের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করতে এসব পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার যতই কার্যকর হোক, এতে নষ্ট হচ্ছে মহানগরীর সৌন্দর্য। এসব দলীয় পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানারের পাশাপাশি ফলের মৌসুমে রাজধানীর আবাসিক এলাকার ফুটপাত দখল করে আমের মেলার নামে চলছে মৌসুমি ফলের ব্যবসা। এতে কারো কারো বাণিজ্য হলেও রাজধানী ঢাকা হারাচ্ছে সৌন্দর্য।
ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই দেখা যাবে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বিশাল আকৃতির নানা বিলবোর্ড। এসব বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের ছবি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের কাউন্সিল সামনে রেখে নগরী ছেয়ে ফেলা হয়েছে এসব অবৈধ বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে কয়েকটি স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তার দুই পাশ ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব। পুরো রোকেয়া সরণির প্রতিটি লাইটপোস্টে সাঁটানো হয়েছে ফেস্টুন। সোনারগাঁও হোটেলের ঠিক সামনেই লাগানো হয়েছে বিশাল বিলবোর্ড। একই অবস্থা শাহবাগে হোটেল রূপসী বাংলার সামনে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ফটকের পাশে রয়েছে দুটি বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড। আশপাশে রমনা পার্কের দিকটার পুরো অংশ ভরে গেছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট এক নেতার বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, 'বর্তমানে ১০০ মিটারের মধ্যে এক হাজার বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন চোখে পড়ে। তিনটি সহযোগী সংগঠনের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অন্তত তিন কোটি টাকা এ খাতে খরচ করা হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত এই কাজে শামিল হয়েছেন। এখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে তো ভুঁইফোড় নেতাদের পোস্টার-ব্যানারের শেষ নেই। এসব ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিও চালকরা দেখতে পারছেন না।' অথচ এসব বিলবোর্ড, ব্যানার আর ফেস্টুন সাঁটাতে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অনুমোদন নিয়ে এগুলো করলে সিটি করপোরেশনের বড় একটা আয় হতো। সিটি করপোরেশন এ আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এসব পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন শুধু রাজধানীর সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, বিপদের কারণও হতে পারে। এখন ঝড়-বৃষ্টির সময়। এ সময় যেকোনো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে এসব পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন থেকে। আর ফুটপাতের ফলের দোকান কেন্দ্র করে স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্র নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। কাজেই এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে ঢাকার সৌন্দর্য। অবৈধ পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার-বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে অবৈধ ফলের দোকান। সিটি করপোরেশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, কিন্তু কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.