আন্তর্জাতিক-লাদেনের মৃত্যু ও আফগান যুদ্ধ by জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ বিদেশি সৈন্য রয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই আমেরিকার। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর আগেই ওবামা ঘোষণা করেছিলেন, 'তালেবানের' শক্তিশালী ঘাঁটি কান্দাহারসহ অন্যান্য স্থানে তারা যুদ্ধে বেশ সাফল্য পাচ্ছেন
আল কায়দা নেতা এবং আমেরিকার সৃষ্টি বিশ্বের '১নং' সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী আল কায়দা ও তাদের সহযোগী 'তালেবান'দের কর্মতৎপরতা নিঃসন্দেহে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সম্প্রতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে মার্কিন সামরিক অভিযানে লাদেনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই যে প্রশ্নটি সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো এখন এই দুই সংগঠনের ভবিষ্যৎ কী এবং লাদেনবিহীন পরিস্থিতিতে তার অনুসারী এবং অনুরাগীরা কতদূর সমর্থ হবে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে? একদিকে যেমন ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানে গোপনে বসবাস এবং আমেরিকানদের সফলভাবে তাকে চিহ্নিতকরণের মধ্য দিয়ে লাদেনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সাফল্য ব্যাপকভাবে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে, অন্যদিকে আল কায়দা ও তালেবান নিয়ে চলছে সীমাহীন বিশ্লেষণ ও বিতর্ক। অনেকেই মনে করছেন, এভাবে আল কায়দার শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর তার সৃষ্ট সেই সংগঠন আদৌ টিকে থাকবে কি-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। পাশাপাশি সমর্থক ও সহযোগী তালেবানদের আগামীর কর্মতৎপরতা কীভাবে প্রভাবিত হবে_ সেটিও আলোচনা ও আগ্রহের বিষয়। যদিও লাদেন প্রত্যক্ষভাবে তালেবানের সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তথাপি আল কায়দা এবং সেই সংগঠন অনেকটা এক ধরনের উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের কর্মপন্থা চালিত করছিল।
লাদেনের মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থায় এই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১০ বছরব্যাপী আফগান যুদ্ধ বেশি করে আগ্রহ ও কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এবং সেখানে মার্কিনদের নেতৃত্বে বিশালসংখ্যক ন্যাটো সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধরত 'তালেবানদের' সফলতা-ব্যর্থতা লাদেনের মৃত্যুর পর ভিন্নভাবে গুরুত্বে প্রাধান্য পাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, লাদেনের মৃত্যু তার সমর্থক ও সহযোগীদের জন্য চরম দুঃসংবাদ এবং তারা আল কায়দার স্থপতি লাদেনের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে যেতে পারে। কেননা যেখানেই থাকেন না কেন, ওসামা বিন লাদেনই তাদের বৃহত্তরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। আফগানিস্তানের যুদ্ধেও লাদেনের বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দারা তার গোপন বাসভবনে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছেন, লাদেন নীতিনির্ধারণ এবং কলাকৌশলের বিষয়াদিতে সক্রিয় ছিলেন। যদিও তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল এবং গোপন আস্তানার সীমাবদ্ধতায় ততটা সক্রিয় হতে পারেননি, তথাপি তার ভূমিকা ছিল যতটুকু সম্ভব কার্যকর এবং সবাইকে প্রভাবিত করার মতো বিরল ক্ষমতা তিনি রাখতেন।
সে ক্ষেত্রে লাদেনের মৃত্যু সবচেয়ে আলোচিত এবং পৃথিবীর বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক সংকট আফগান যুদ্ধকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? এ বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই এ ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আফগান যুদ্ধ ওসামা বিন লাদেনের কারণেই এক অর্থে সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ২০০১ সালে আমেরিকায় স্মরণকালের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তারই কীর্তি বলে মনে করা হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ নিউইয়র্ক শহরের খ্যাতনামা টুইন টাওয়ার ভবনসহ আমেরিকার দেশরক্ষা বিষয়ক প্রধান দফতর পেন্টাগনে যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে হামলা চালানো হয়। প্রায় তিন হাজার মানুষ সেই ভয়াবহ হামলায় নিহত হয় এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকসহ নারী ও শিশুও ছিল। আল কায়দা সেই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছিল, বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে 'মার্কিনদের কর্মকাণ্ডের' বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এই আক্রমণ চালানো হয়। হামলায় এক অর্থে পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকার দর্প চূর্ণ হয়। তবে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়। তাছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অন্যান্য উদ্দেশ্য অর্জনের পন্থার সমর্থকও খুব কম বলেই মনে করা হয়ে থাকে।
আমেরিকায় সেই হামলার কারণেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আফগানিস্তানে 'তালেবান' সরকার এবং সেই দেশে অবস্থানরত ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালান। কাবুলের সরকার উৎখাত হয়। তবে লাদেন ও তালেবান নেতা মোল্লা ওমর অধরাই থেকে যান। লাদেনের মৃত্যুর পর ন্যাটো দেশগুলো মনে করছে, সেখানে আল কায়দা এবং তালেবানের কর্মতৎপরতায় এখন ভাটা পড়তে বাধ্য।
আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ বিদেশি সৈন্য রয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই আমেরিকার। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর আগেই ওবামা ঘোষণা করেছিলেন, 'তালেবানের' শক্তিশালী ঘাঁটি কান্দাহারসহ অন্যান্য স্থানে তারা যুদ্ধে বেশ সাফল্য পাচ্ছেন। তবে আফগানিস্তানে ন্যাটো শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ডেভিড পেট্রিয়াসের মতামত হলো, পূর্ণ জয়ের পথ ততটা কাছে নয়। পেট্রিয়াস সম্প্রতি তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানে সাফল্য অর্জনের জন্যই এই বড় দায়িত্ব পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আগে তিনি ইরাকেও বড় সফলতা পেয়েছিলেন।
এত কিছু সত্ত্বেও 'তালেবান' বলেছে, লাদেনের মৃত্যু তাদের 'বিদেশিদের' বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরও অনুপ্রাণিত করবে। লাদেনের মৃত্যুর আগে কান্দাহার কারাগার থেকে প্রায় পাঁচশ 'তালেবান' জঙ্গি বন্দির পলায়ন এবং কাবুল বিমান ঘাঁটিতে একজন সরকারি আফগান বৈমানিক কর্তৃক ৯ জন ন্যাটো সৈন্যকে হত্যা ন্যাটোকে বেশ হতাশ করেছিল। এখন লাদেনের মৃত্যু তাদের জন্য সুসংবাদ। কিন্তু লাদেনের তিরোধান আফগান যুদ্ধকে ত্বরিত কোনো সমাধান দেবে বলে মনে করা অবাস্তব।
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী : সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
লাদেনের মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থায় এই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১০ বছরব্যাপী আফগান যুদ্ধ বেশি করে আগ্রহ ও কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এবং সেখানে মার্কিনদের নেতৃত্বে বিশালসংখ্যক ন্যাটো সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধরত 'তালেবানদের' সফলতা-ব্যর্থতা লাদেনের মৃত্যুর পর ভিন্নভাবে গুরুত্বে প্রাধান্য পাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, লাদেনের মৃত্যু তার সমর্থক ও সহযোগীদের জন্য চরম দুঃসংবাদ এবং তারা আল কায়দার স্থপতি লাদেনের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে যেতে পারে। কেননা যেখানেই থাকেন না কেন, ওসামা বিন লাদেনই তাদের বৃহত্তরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। আফগানিস্তানের যুদ্ধেও লাদেনের বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দারা তার গোপন বাসভবনে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছেন, লাদেন নীতিনির্ধারণ এবং কলাকৌশলের বিষয়াদিতে সক্রিয় ছিলেন। যদিও তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল এবং গোপন আস্তানার সীমাবদ্ধতায় ততটা সক্রিয় হতে পারেননি, তথাপি তার ভূমিকা ছিল যতটুকু সম্ভব কার্যকর এবং সবাইকে প্রভাবিত করার মতো বিরল ক্ষমতা তিনি রাখতেন।
সে ক্ষেত্রে লাদেনের মৃত্যু সবচেয়ে আলোচিত এবং পৃথিবীর বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক সংকট আফগান যুদ্ধকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? এ বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই এ ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আফগান যুদ্ধ ওসামা বিন লাদেনের কারণেই এক অর্থে সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ২০০১ সালে আমেরিকায় স্মরণকালের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তারই কীর্তি বলে মনে করা হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ নিউইয়র্ক শহরের খ্যাতনামা টুইন টাওয়ার ভবনসহ আমেরিকার দেশরক্ষা বিষয়ক প্রধান দফতর পেন্টাগনে যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে হামলা চালানো হয়। প্রায় তিন হাজার মানুষ সেই ভয়াবহ হামলায় নিহত হয় এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকসহ নারী ও শিশুও ছিল। আল কায়দা সেই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছিল, বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে 'মার্কিনদের কর্মকাণ্ডের' বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এই আক্রমণ চালানো হয়। হামলায় এক অর্থে পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকার দর্প চূর্ণ হয়। তবে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়। তাছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অন্যান্য উদ্দেশ্য অর্জনের পন্থার সমর্থকও খুব কম বলেই মনে করা হয়ে থাকে।
আমেরিকায় সেই হামলার কারণেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আফগানিস্তানে 'তালেবান' সরকার এবং সেই দেশে অবস্থানরত ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালান। কাবুলের সরকার উৎখাত হয়। তবে লাদেন ও তালেবান নেতা মোল্লা ওমর অধরাই থেকে যান। লাদেনের মৃত্যুর পর ন্যাটো দেশগুলো মনে করছে, সেখানে আল কায়দা এবং তালেবানের কর্মতৎপরতায় এখন ভাটা পড়তে বাধ্য।
আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ বিদেশি সৈন্য রয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই আমেরিকার। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর আগেই ওবামা ঘোষণা করেছিলেন, 'তালেবানের' শক্তিশালী ঘাঁটি কান্দাহারসহ অন্যান্য স্থানে তারা যুদ্ধে বেশ সাফল্য পাচ্ছেন। তবে আফগানিস্তানে ন্যাটো শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ডেভিড পেট্রিয়াসের মতামত হলো, পূর্ণ জয়ের পথ ততটা কাছে নয়। পেট্রিয়াস সম্প্রতি তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানে সাফল্য অর্জনের জন্যই এই বড় দায়িত্ব পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আগে তিনি ইরাকেও বড় সফলতা পেয়েছিলেন।
এত কিছু সত্ত্বেও 'তালেবান' বলেছে, লাদেনের মৃত্যু তাদের 'বিদেশিদের' বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরও অনুপ্রাণিত করবে। লাদেনের মৃত্যুর আগে কান্দাহার কারাগার থেকে প্রায় পাঁচশ 'তালেবান' জঙ্গি বন্দির পলায়ন এবং কাবুল বিমান ঘাঁটিতে একজন সরকারি আফগান বৈমানিক কর্তৃক ৯ জন ন্যাটো সৈন্যকে হত্যা ন্যাটোকে বেশ হতাশ করেছিল। এখন লাদেনের মৃত্যু তাদের জন্য সুসংবাদ। কিন্তু লাদেনের তিরোধান আফগান যুদ্ধকে ত্বরিত কোনো সমাধান দেবে বলে মনে করা অবাস্তব।
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী : সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
No comments