ধর্ম-মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গণসচেতনতা by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার শরিয়ত-গর্হিত একটি জঘন্য সামাজিক অপরাধ। মাদকদ্রব্যের অপকারিতা এবং এর ব্যবহারকারীর করুণ পরিণতির জন্য ইসলাম এগুলো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্তি অপবিত্র, ক্ষতিকর ও শয়তানের নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড, যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।
তাই ইসলাম মদ্যপান, জুয়াখেলা প্রভৃতি অনৈতিকতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং ধন-সম্পদ অসৎ পন্থায় ব্যয় করতে নিষেধ করে মানব জাতিকে নৈতিক অধঃপতন থেকে রক্ষার তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কারসাজি। সুতরাং তোমরা এসব বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা-আল মায়িদা, আয়াত-৯০)
ইসলামের সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক অজ্ঞতাবশত এবং নানা কুমন্ত্রণা, প্ররোচনা ও অসৎ সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বর্জনীয় ও ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণ করে নিজেদের, পরিবারের ও সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনে এবং মারাত্মক বদঅভ্যাসের দাসে পরিণত হয়। মাদকাসক্তি এ ধরনের একটি কু-অভ্যাস। মাদকাসক্তি মানে মাদকদ্রব্যের দ্বারা আসক্তি বা নেশা সৃষ্টি হওয়া। যেসব খাদ্য, পানীয় বা বস্তু সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞানবুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয় এবং যা নেশা সৃষ্টি করে সেগুলো মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। মাদকদ্রব্য প্রাকৃতিক হোক বা রাসায়নিক হোক, পরিমাণে অল্প হোক আর বেশি হোক, পান করা হোক বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা হোক, নেশা ও চিত্তভ্রমকারী হলেই তা হারাম বা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে শরিয়তের একটি মূলনীতি প্রদান করে বলেছেন, ‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম।’ (মুসলিম)
ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতি যুবসমাজে ভয়ানক মাদকাসক্তি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। জীবনবিধ্বংসী মাদকে অনেক তরুণের জীবন নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রকৃতই মাদকাসক্তি মানুষের দেহের মারাত্মক বিনাশ সাধন করে। নেশাগ্রস্ত যুবকদের উল্লেখযোগ্য অংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে; এ কারণে মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। নিজের সত্তা, ধর্ম-কর্ম সবকিছু ভুলে গিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নিছক কল্পনার জগতে বিচরণ করতে থাকে। ‘যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে, সে কখনো বেহেশতে প্রবেশাধিকার পাবে না’ এ মর্মে নবী করিম (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। (বুখারি)
মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদকের ব্যয় সঙ্কুলানের জন্য নানা রকম দুর্নীতি, অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়ে। একজন নেশাখোর মাদকের অর্থ জোগাতে গিয়ে সাধারণত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং ও চোরাকারবারে লিপ্ত হয়। নিজের পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সমাজের আর দশজনের টাকা-পয়সাও লুটে নিয়ে সমাজজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিকৃষ্টতর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও অনাচারে বাধ্য হয়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারে মানুষ চিত্তবিভ্রম, অস্থির, উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় তথা ব্যভিচার এবং নরহত্যার মতো ন্যক্কারজনক অপরাধগুলোর অধিকাংশই মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম। সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় ক্ষেত্রেই মাদকাসক্ত চালকের কারণে ঘটে থাকে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নবী করিম (সা.) কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করে ঘোষণা করেছেন, ‘মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল।’ (মুসলিম)
দেশের আশা-ভরসা ও মূল্যবান সম্পদ তথা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুবসমাজকে ধ্বংস করার এক ভয়ংকর ক্ষতিকারক হাতিয়ার মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া অনেক লোক মাদকসেবনকারীর সঙ্গে ওঠা-বসার দ্বারা মাদক গ্রহণ করতে পারে, ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। উপরন্তু মাদকাসক্তি মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ তথা কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ আল্লাহ তাআলার বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং পাপাচারে লিপ্ত করে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়, তবুও কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯১)
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্তি যেমন একটি চরম অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি জঘন্য পাপাচার; সমাজ, দেশ ও জাতিকে বিধ্বস্তকারী মারাত্মক ব্যাধি। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকায় সমাজের অর্থলিপ্সু চক্রের মদদের জন্য মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটছে। তাই সমাজজীবনে এ হেন ঘৃণ্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রসার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, এর প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত, তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে এ অনৈতিক কাজ বর্জন করা উচিত। যুবসমাজকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য মাদকসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। মুসলিম পরিবারের প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানদের মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত করবেন এবং তাদের মধ্যে এ কু-অভ্যাস যেন কোনোমতেই গড়ে না উঠতে পারে, এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকবেন। ভঙ্গুর পরিবারের ছেলেমেয়েরা অধিকতর মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে; সে জন্য তারা যাতে অসৎ, দুশ্চরিত্র ও নেশাগ্রস্ত বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গী-সাথির সঙ্গে মেলামেশা না করতে পারে, সেদিকে সুদৃষ্টি রাখবেন এবং ইসলামের আলোকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করবেন।
দেশের প্রায় তিন লাখ মসজিদের ইমাম-খতিবরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বিশেষ করে জুমার খুতবার ভাষণে মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর দিকগুলো উপস্থাপন করেন, তাহলে সমবেত মুসল্লিরা মাদক গ্রহণ না করার ব্যাপারে সজাগ হয়ে যাবেন এবং তাদের বিপথগামী সন্তানদেরও মাদক গ্রহণে নিরুৎসাহিত করবেন। সমাজের ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তিরা তথা আলেম-ওলামারা বিভিন্ন মিলাদ-মাহফিলে ওয়াজ-নসিহত ও উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে মাদকদ্রব্যের কুফলসমূহ বর্ণনা করবেন। সরকার মাদকের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে কঠোর আইন প্রণয়ন করবে এবং তা প্রয়োগ করবে। যারা মাদক আমদানি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করলে যুবসমাজ মাদকমুক্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ, সকল শ্রেণীর লোক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে সমাজ থেকে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ হবে। ইসলামের বিধি-বিধান তথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে যেসব সাবধানবাণী আছে, জনগণকে সেগুলো শোনাতে ও বোঝাতে হবে এবং মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও তীব্র ঘৃণা জন্মাতে হবে। আসুন, ‘আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস’ (২৬ জুন) সামনে রেখে আমরা সমবেত কণ্ঠে সব ধরনের নেশা জাতীয় মাদককে ‘না’ বলি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। dr.munimkhan@yahoo.com
ইসলামের সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক অজ্ঞতাবশত এবং নানা কুমন্ত্রণা, প্ররোচনা ও অসৎ সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বর্জনীয় ও ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণ করে নিজেদের, পরিবারের ও সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনে এবং মারাত্মক বদঅভ্যাসের দাসে পরিণত হয়। মাদকাসক্তি এ ধরনের একটি কু-অভ্যাস। মাদকাসক্তি মানে মাদকদ্রব্যের দ্বারা আসক্তি বা নেশা সৃষ্টি হওয়া। যেসব খাদ্য, পানীয় বা বস্তু সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞানবুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয় এবং যা নেশা সৃষ্টি করে সেগুলো মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। মাদকদ্রব্য প্রাকৃতিক হোক বা রাসায়নিক হোক, পরিমাণে অল্প হোক আর বেশি হোক, পান করা হোক বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা হোক, নেশা ও চিত্তভ্রমকারী হলেই তা হারাম বা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে শরিয়তের একটি মূলনীতি প্রদান করে বলেছেন, ‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম।’ (মুসলিম)
ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতি যুবসমাজে ভয়ানক মাদকাসক্তি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। জীবনবিধ্বংসী মাদকে অনেক তরুণের জীবন নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রকৃতই মাদকাসক্তি মানুষের দেহের মারাত্মক বিনাশ সাধন করে। নেশাগ্রস্ত যুবকদের উল্লেখযোগ্য অংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে; এ কারণে মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। নিজের সত্তা, ধর্ম-কর্ম সবকিছু ভুলে গিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নিছক কল্পনার জগতে বিচরণ করতে থাকে। ‘যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে, সে কখনো বেহেশতে প্রবেশাধিকার পাবে না’ এ মর্মে নবী করিম (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। (বুখারি)
মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদকের ব্যয় সঙ্কুলানের জন্য নানা রকম দুর্নীতি, অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়ে। একজন নেশাখোর মাদকের অর্থ জোগাতে গিয়ে সাধারণত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং ও চোরাকারবারে লিপ্ত হয়। নিজের পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সমাজের আর দশজনের টাকা-পয়সাও লুটে নিয়ে সমাজজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিকৃষ্টতর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও অনাচারে বাধ্য হয়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারে মানুষ চিত্তবিভ্রম, অস্থির, উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় তথা ব্যভিচার এবং নরহত্যার মতো ন্যক্কারজনক অপরাধগুলোর অধিকাংশই মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম। সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় ক্ষেত্রেই মাদকাসক্ত চালকের কারণে ঘটে থাকে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নবী করিম (সা.) কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করে ঘোষণা করেছেন, ‘মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল।’ (মুসলিম)
দেশের আশা-ভরসা ও মূল্যবান সম্পদ তথা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুবসমাজকে ধ্বংস করার এক ভয়ংকর ক্ষতিকারক হাতিয়ার মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া অনেক লোক মাদকসেবনকারীর সঙ্গে ওঠা-বসার দ্বারা মাদক গ্রহণ করতে পারে, ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। উপরন্তু মাদকাসক্তি মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ তথা কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ আল্লাহ তাআলার বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং পাপাচারে লিপ্ত করে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়, তবুও কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯১)
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্তি যেমন একটি চরম অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি জঘন্য পাপাচার; সমাজ, দেশ ও জাতিকে বিধ্বস্তকারী মারাত্মক ব্যাধি। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকায় সমাজের অর্থলিপ্সু চক্রের মদদের জন্য মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটছে। তাই সমাজজীবনে এ হেন ঘৃণ্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রসার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, এর প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত, তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে এ অনৈতিক কাজ বর্জন করা উচিত। যুবসমাজকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য মাদকসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। মুসলিম পরিবারের প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানদের মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত করবেন এবং তাদের মধ্যে এ কু-অভ্যাস যেন কোনোমতেই গড়ে না উঠতে পারে, এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকবেন। ভঙ্গুর পরিবারের ছেলেমেয়েরা অধিকতর মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে; সে জন্য তারা যাতে অসৎ, দুশ্চরিত্র ও নেশাগ্রস্ত বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গী-সাথির সঙ্গে মেলামেশা না করতে পারে, সেদিকে সুদৃষ্টি রাখবেন এবং ইসলামের আলোকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করবেন।
দেশের প্রায় তিন লাখ মসজিদের ইমাম-খতিবরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বিশেষ করে জুমার খুতবার ভাষণে মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর দিকগুলো উপস্থাপন করেন, তাহলে সমবেত মুসল্লিরা মাদক গ্রহণ না করার ব্যাপারে সজাগ হয়ে যাবেন এবং তাদের বিপথগামী সন্তানদেরও মাদক গ্রহণে নিরুৎসাহিত করবেন। সমাজের ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তিরা তথা আলেম-ওলামারা বিভিন্ন মিলাদ-মাহফিলে ওয়াজ-নসিহত ও উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে মাদকদ্রব্যের কুফলসমূহ বর্ণনা করবেন। সরকার মাদকের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে কঠোর আইন প্রণয়ন করবে এবং তা প্রয়োগ করবে। যারা মাদক আমদানি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করলে যুবসমাজ মাদকমুক্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ, সকল শ্রেণীর লোক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে সমাজ থেকে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ হবে। ইসলামের বিধি-বিধান তথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে যেসব সাবধানবাণী আছে, জনগণকে সেগুলো শোনাতে ও বোঝাতে হবে এবং মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও তীব্র ঘৃণা জন্মাতে হবে। আসুন, ‘আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস’ (২৬ জুন) সামনে রেখে আমরা সমবেত কণ্ঠে সব ধরনের নেশা জাতীয় মাদককে ‘না’ বলি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। dr.munimkhan@yahoo.com
No comments