শ্রদ্ধাঞ্জলি-আলোকদীপ্ত শহীদজননী জাহানারা ইমাম by সুস্মিতা সিকদার
ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের একটি রক্ষণশীল বাঙালি মুসলিম পরিবারে শহীদজননী জাহানারা ইমামের জন্ম হয়। সামাজিক নানা অনুশাসনের মধ্যে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। বাবা ছিলেন অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বাবার উদার মনোভাবের কারণে তিনি একজন আধুনিক, রুচিশীল মানুষ হতে পেরেছিলেন।
তা না হলে সে যুগে এমন একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিয়ে সংস্কৃতিমনা, শিক্ষিত, পরিশীলিত মনের মানুষ করে নিজেকে গড়ে তোলা মোটেই সহজ হতো না।
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সাহিত্যপাগল শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হন। ওই বয়সে তিনি বাংলা অনুবাদে পরিচিত হন তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, ভিক্টর হুগো, সেলমা লেগারলফ, শেক্সপিয়র, বার্নার্ড শ, ন্যুট হামসুনের মতো লেখকদের সাহিত্যের সঙ্গে। পৃথিবীর জন্ম ও সভ্যতার বিবর্তন নিয়ে কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা নেহেরুর ‘এ ফাদার্স লেটার টু হিজ ডটার’ ইত্যাদি জাহানারা ইমামকে যুক্তিশীল ধ্যান-ধারণায় মনোযোগী করে তোলে। সুদূর মফস্বলে থেকে তিনি জেনেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। তিনি আরও জেনেছিলেন মুসলমান সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে বেগম রোকেয়ার আমৃত্যু সংগ্রামের ইতিহাস। এ প্রসঙ্গে জাহানারা ইমাম বলেছেন, ‘আধো অস্পষ্টতার মধ্যে আমি বোধহয় সত্যিকারের মানুষ হতে চেয়েছিলাম। বাবা আমাদের Plain living, high thinking-এর কথা বলতেন। অল্প বয়সেই বড় বড় লেখকের বই পড়তাম, বড় বড় লোকের জীবনী পড়তাম। রবীন্দ্রনাথকে তো হূদয়েই গেঁথে নিয়েছিলাম। ধর্মীয় গ্রন্থ, বিশেষ করে সুফিদের ওপর পড়াশোনা করতাম। বাউল-বৈরাগীদের জীবন আমাকে আকর্ষিত করত...সবখানেই মূল সুর তো আত্মার মুক্তি এবং একই সঙ্গে মানবকল্যাণ। নিজের ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য ভাবনা। আমার এই ভাবনা পরিপক্বতা পায় অঞ্জলীর সঙ্গে মিশে।’
রংপুর কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় জাহানারা ইমাম শোষিত, লাঞ্ছিত, নির্বাক মানুষের কথা জানতে পেরেছিলেন প্রগতিশীল পত্রিকা জনযুদ্ধ এবং বাম ছাত্রসংগঠনের কর্মী অঞ্জলীর মাধ্যমে। অঞ্জলীর কথা তিনি লিখেছেন তাঁর অন্যজীবন গ্রন্থে। অঞ্জলীর মাধ্যমেই বাম রাজনীতি সম্পর্কে অল্পকিছু পড়াশোনা, ছোটখাটো কাজের সূচনা। কিন্তু অঞ্জলীর সঙ্গে মেলামেশা তাঁর বাবা পছন্দ করেননি। তাই রাজনীতি করা তাঁর আর হলো না।
কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত হতে না পারলেও এই সময় জাহানারা ইমাম বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি কিশোরী মেয়েদের নিয়ে মুকুল ফৌজ গঠন করেন। তাঁর নির্দেশে মেয়েরা প্যারেড করত, দেয়ালপত্রিকা বের করত, বাঁশের ছোট ছোট তাঁতে তোয়ালে বা গামছা আকারে কাপড় বুনত, গরিব ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুধ বিতরণ করত। নাচ, গান ও নাটকের মহড়া দিত। জাহানারা ইমাম মেয়েদের হামদ ও নাত গাওয়ার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতেন। বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে উঠানে মঞ্চ তৈরি করে সোহরাব রুস্তম নাটকটি প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি বাড়িতে নারীদের দাওয়াত করে মিলাদ পড়াতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তখন তিনি সাদা সালোয়ার-কামিজ পরতেন, গয়না পরতেন না। অন্যদেরও গয়না না পরার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। ইসলাম ধর্মসংক্রান্ত যত বই বাড়িতে ছিল, সব তিনি পড়ে ফেলেছিলেন। এ জন্য জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তাঁর মধ্যে কোনো মিথ্যাচার, ভণ্ডামি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। অত্যন্ত আকর্ষণীয় চেহারা ও অদ্ভুত সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই তরুণী অতি অল্প সময়ের মধ্যে বহুজনের আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন। তখন যুদ্ধের সময় বাজারে ভালো কাপড় পাওয়া যেত না। রেশনের দোকানে দেওয়া কন্ট্রোলের মোটা শাড়ি নারীরা পরতে চাইতেন না। জাহানারা ইমাম এবং তাঁর মা কন্ট্রোলের মোটা শাড়ির পাড়ে ব্লকপ্রিন্ট করিয়ে সেই শাড়ি পরে লাইব্রেরিতে, মিটিংয়ে গিয়ে নারীদের কন্ট্রোলের মোটা শাড়ি পরতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। চরিত্রের তেজস্বিতা, বিবেকের সচেতনতা, দূরদর্শিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের সাহসিকতার অঙ্কুর এই সময়েই তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।
রংপুর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি কলকাতায় লেডিব্রেবোন কলেজে ভর্তি হন। তাঁর জীবন যত এগিয়েছে, তিনি তত বাহুল্য বর্জন করতে শিখেছেন। তিনি সাদা শাড়ি পরতে শুরু করেন। এমনকি জাহানারা ইমামের বিয়ে হয়েছিল চিরাচরিত বেনারসি শাড়ির পরিবর্তে সাদা সালোয়ার-কামিজ আর রজনীগন্ধা ফুলের অলংকার পরে।
জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তিনি ছিলেন মুক্ত ও পরিশীলিত মনের মানুষ। তাই জাহানারা ইমামের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল স্বামীর ঘর থেকেই। বিয়ের পর তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যান। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ষাটের দশকে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতেন তিনি। কিন্তু কোথাও তাঁর কোনো উগ্রতা ছিল না। হালকা রঙের শাড়ি পরতেন। গয়না পরতেন না।
সংসারজীবনে জাহানারা ইমাম স্বামী এবং দুই ছেলে রুমী ও জামীকে নিয়ে ছিলেন পরিপূর্ণ সুখী। কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি হারালেন প্রাণপ্রিয় ছেলে রুমী আর প্রিয়তম স্বামী শরীফ ইমামকে। নিদারুণ শোকের হাহাকার জাহানারা ইমামকে বিপর্যস্ত করলেও নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। তাই হূদয়কে পাথর করে দুঃখের নিবিড় অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনেন বিন্দু বিন্দু মুক্তোর দানার মতো অভিজ্ঞতার সব নির্যাস। রচিত হয় অমর গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। ব্যক্তিগত শোক-স্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সবার টুকরো টুকরো অগণিত দুঃখবোধের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। তাঁর আপনজনের গৌরবগাথা যুক্ত হয়ে যায় জাতির হাজারো বীরগাথার সঙ্গে। রুমী অলক্ষে হয়ে যায় সবার আদরের ভাই, সজ্জন ব্যক্তি শরীফ ইমাম প্রতীক হয়ে পড়েন রাশভারী স্নেহপ্রবণ পিতার।
একাত্তরের দিনগুলি ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। ষাটের দশকে অনুবাদগ্রন্থ দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু হয় নদীর তীরে ফুলের মেলা, তেপান্তরের ছোট্ট শহর ও নগরী দিয়ে। মাঝখানে তিনি আর লেখালেখি না করলেও শেষ জীবনে এসে অনেক বই লিখেছেন। গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি, অন্যজীবন, নিঃসঙ্গ পাইন, বীরশ্রেষ্ঠ, এ নয় মধুর খেলা, নাটকের অবসান, ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, বিদায় দে মা ঘুরে আসি ইত্যাদি।
আজ ২৬ জুন শহীদজননী জাহানারা ইমামের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। শহীদজননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শহীদজননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সাহিত্যপাগল শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হন। ওই বয়সে তিনি বাংলা অনুবাদে পরিচিত হন তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, ভিক্টর হুগো, সেলমা লেগারলফ, শেক্সপিয়র, বার্নার্ড শ, ন্যুট হামসুনের মতো লেখকদের সাহিত্যের সঙ্গে। পৃথিবীর জন্ম ও সভ্যতার বিবর্তন নিয়ে কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা নেহেরুর ‘এ ফাদার্স লেটার টু হিজ ডটার’ ইত্যাদি জাহানারা ইমামকে যুক্তিশীল ধ্যান-ধারণায় মনোযোগী করে তোলে। সুদূর মফস্বলে থেকে তিনি জেনেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। তিনি আরও জেনেছিলেন মুসলমান সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে বেগম রোকেয়ার আমৃত্যু সংগ্রামের ইতিহাস। এ প্রসঙ্গে জাহানারা ইমাম বলেছেন, ‘আধো অস্পষ্টতার মধ্যে আমি বোধহয় সত্যিকারের মানুষ হতে চেয়েছিলাম। বাবা আমাদের Plain living, high thinking-এর কথা বলতেন। অল্প বয়সেই বড় বড় লেখকের বই পড়তাম, বড় বড় লোকের জীবনী পড়তাম। রবীন্দ্রনাথকে তো হূদয়েই গেঁথে নিয়েছিলাম। ধর্মীয় গ্রন্থ, বিশেষ করে সুফিদের ওপর পড়াশোনা করতাম। বাউল-বৈরাগীদের জীবন আমাকে আকর্ষিত করত...সবখানেই মূল সুর তো আত্মার মুক্তি এবং একই সঙ্গে মানবকল্যাণ। নিজের ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য ভাবনা। আমার এই ভাবনা পরিপক্বতা পায় অঞ্জলীর সঙ্গে মিশে।’
রংপুর কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় জাহানারা ইমাম শোষিত, লাঞ্ছিত, নির্বাক মানুষের কথা জানতে পেরেছিলেন প্রগতিশীল পত্রিকা জনযুদ্ধ এবং বাম ছাত্রসংগঠনের কর্মী অঞ্জলীর মাধ্যমে। অঞ্জলীর কথা তিনি লিখেছেন তাঁর অন্যজীবন গ্রন্থে। অঞ্জলীর মাধ্যমেই বাম রাজনীতি সম্পর্কে অল্পকিছু পড়াশোনা, ছোটখাটো কাজের সূচনা। কিন্তু অঞ্জলীর সঙ্গে মেলামেশা তাঁর বাবা পছন্দ করেননি। তাই রাজনীতি করা তাঁর আর হলো না।
কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত হতে না পারলেও এই সময় জাহানারা ইমাম বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি কিশোরী মেয়েদের নিয়ে মুকুল ফৌজ গঠন করেন। তাঁর নির্দেশে মেয়েরা প্যারেড করত, দেয়ালপত্রিকা বের করত, বাঁশের ছোট ছোট তাঁতে তোয়ালে বা গামছা আকারে কাপড় বুনত, গরিব ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুধ বিতরণ করত। নাচ, গান ও নাটকের মহড়া দিত। জাহানারা ইমাম মেয়েদের হামদ ও নাত গাওয়ার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতেন। বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে উঠানে মঞ্চ তৈরি করে সোহরাব রুস্তম নাটকটি প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি বাড়িতে নারীদের দাওয়াত করে মিলাদ পড়াতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তখন তিনি সাদা সালোয়ার-কামিজ পরতেন, গয়না পরতেন না। অন্যদেরও গয়না না পরার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। ইসলাম ধর্মসংক্রান্ত যত বই বাড়িতে ছিল, সব তিনি পড়ে ফেলেছিলেন। এ জন্য জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তাঁর মধ্যে কোনো মিথ্যাচার, ভণ্ডামি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। অত্যন্ত আকর্ষণীয় চেহারা ও অদ্ভুত সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই তরুণী অতি অল্প সময়ের মধ্যে বহুজনের আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন। তখন যুদ্ধের সময় বাজারে ভালো কাপড় পাওয়া যেত না। রেশনের দোকানে দেওয়া কন্ট্রোলের মোটা শাড়ি নারীরা পরতে চাইতেন না। জাহানারা ইমাম এবং তাঁর মা কন্ট্রোলের মোটা শাড়ির পাড়ে ব্লকপ্রিন্ট করিয়ে সেই শাড়ি পরে লাইব্রেরিতে, মিটিংয়ে গিয়ে নারীদের কন্ট্রোলের মোটা শাড়ি পরতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। চরিত্রের তেজস্বিতা, বিবেকের সচেতনতা, দূরদর্শিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের সাহসিকতার অঙ্কুর এই সময়েই তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।
রংপুর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি কলকাতায় লেডিব্রেবোন কলেজে ভর্তি হন। তাঁর জীবন যত এগিয়েছে, তিনি তত বাহুল্য বর্জন করতে শিখেছেন। তিনি সাদা শাড়ি পরতে শুরু করেন। এমনকি জাহানারা ইমামের বিয়ে হয়েছিল চিরাচরিত বেনারসি শাড়ির পরিবর্তে সাদা সালোয়ার-কামিজ আর রজনীগন্ধা ফুলের অলংকার পরে।
জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তিনি ছিলেন মুক্ত ও পরিশীলিত মনের মানুষ। তাই জাহানারা ইমামের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল স্বামীর ঘর থেকেই। বিয়ের পর তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যান। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ষাটের দশকে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতেন তিনি। কিন্তু কোথাও তাঁর কোনো উগ্রতা ছিল না। হালকা রঙের শাড়ি পরতেন। গয়না পরতেন না।
সংসারজীবনে জাহানারা ইমাম স্বামী এবং দুই ছেলে রুমী ও জামীকে নিয়ে ছিলেন পরিপূর্ণ সুখী। কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি হারালেন প্রাণপ্রিয় ছেলে রুমী আর প্রিয়তম স্বামী শরীফ ইমামকে। নিদারুণ শোকের হাহাকার জাহানারা ইমামকে বিপর্যস্ত করলেও নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। তাই হূদয়কে পাথর করে দুঃখের নিবিড় অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনেন বিন্দু বিন্দু মুক্তোর দানার মতো অভিজ্ঞতার সব নির্যাস। রচিত হয় অমর গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। ব্যক্তিগত শোক-স্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সবার টুকরো টুকরো অগণিত দুঃখবোধের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। তাঁর আপনজনের গৌরবগাথা যুক্ত হয়ে যায় জাতির হাজারো বীরগাথার সঙ্গে। রুমী অলক্ষে হয়ে যায় সবার আদরের ভাই, সজ্জন ব্যক্তি শরীফ ইমাম প্রতীক হয়ে পড়েন রাশভারী স্নেহপ্রবণ পিতার।
একাত্তরের দিনগুলি ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। ষাটের দশকে অনুবাদগ্রন্থ দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু হয় নদীর তীরে ফুলের মেলা, তেপান্তরের ছোট্ট শহর ও নগরী দিয়ে। মাঝখানে তিনি আর লেখালেখি না করলেও শেষ জীবনে এসে অনেক বই লিখেছেন। গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি, অন্যজীবন, নিঃসঙ্গ পাইন, বীরশ্রেষ্ঠ, এ নয় মধুর খেলা, নাটকের অবসান, ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, বিদায় দে মা ঘুরে আসি ইত্যাদি।
আজ ২৬ জুন শহীদজননী জাহানারা ইমামের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। শহীদজননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শহীদজননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
No comments