ভোটার তালিকা-হালনাগাদের কাজ হোক ত্রুটিমুক্ত
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে নির্বাচন কমিশন এবং এর কাজ শুরু হবে আগস্টে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছিল তা দেশ-বিদেশে বহুলাংশে ত্রুটিমুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এতে ভুয়া ভোটারের অস্তিত্ব কার্যত ছিল না।
২০১০ সালেও উল্লেখযোগ্য নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। নাম তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি বহুমুখী ব্যবহারের জন্য ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রও প্রদান করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও পাসপোর্টের জন্য আবেদনসহ নানাবিধ কাজে এর ব্যবহার অনেকটা বাধ্যতামূলক রয়েছে। কিন্তু পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার পর অনেকেই দেখতে পান যে, তাতে এক বা একাধিক ভুল রয়েছে এবং এর কোনো কোনোটি গুরুতর। এর ফলে নাগরিক বিড়ম্বনা এমনকি হয়রানি-ভোগান্তির ঘটনা ঘটেছে ও ঘটে চলেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় এ বিষয়টির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ প্রদান করা হবে, এটা প্রত্যাশিত। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হলেও নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের যেতে হবে প্রতিটি বাড়িতে এবং বলা যায়, প্রায় নতুন একটি তালিকাই তৈরি করা হচ্ছে। শুধু ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের তথ্যই সংগ্রহ করা হবে না, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদেরও তালিকায় অন্তস্নর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ পদক্ষেপ বহুল প্রত্যাশিত এবং তার বাস্তবায়ন হলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ-তরুণীকে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরও ভোট প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে না। একইভাবে প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে মতপার্থক্য অনাকাঙ্ক্ষিত। উভয়পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা ব্যতিরেকে এ লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। পার্শ্ববর্তীদের দেশের কোনো নাগরিক যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে এবং পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমানের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শুধু আমাদের দেশেই সমস্যা সৃষ্টি করছে না, প্রবাসেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো ঘটনা অনেকে ঘটিয়ে চলেছে। ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এতে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের সক্রিয় সহায়তা প্রয়োজন হয়। জনসচেতনতা সৃষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ। গত মার্চ মাসে দেশে লোকগণনার কাজ হয়েছে। দীর্ঘ প্রস্তুতির পরও এ কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে এবং জাতীয় সংসদে প্রদত্ত সাম্প্রতিক বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী তা স্বীকারও করেছেন। ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজে এ ধরনের অদক্ষতা কাম্য নয়। তালিকা প্রণয়ন ও পরিচয়পত্র প্রদানের মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সরকারকে এটা ভুললে চলবে না যে, ভুল-ভ্রান্তির মাত্রা বেশি হলে শেষ বিচারে সব দায় বর্তাবে তাদের ওপরেই। ২০০৬-০৭ সালের জন্য নির্ধারিত নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এমএ আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছিল তাতে এক কোটি ২০ লাখের বেশি ভুয়া ভোটার রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এনডিআই অভিমত প্রদান করে এবং এর পেছনে ছিল তাদের দীর্ঘ অনুসন্ধান। এর দায়দায়িত্ব কিন্তু শেষ পর্যন্ত বর্তায় সে সময়ে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট সরকারের ওপরই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার নিশ্চয়ই এ অভিজ্ঞতা বিস্মৃত হবে না।
No comments