সাঙ্গু হতে পারে মা মাছের নতুন প্রজননক্ষেত্র

গত সোমবার বান্দরবানের রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈউসাই মার্মা সাঙ্গু নদীপথে তাঁর বাড়ি পানতলাপাড়া যাওয়ার পথে একটি মৃগেল মাছ কিনেন জেলেদের কাছ থেকে। প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের মাছটির পেট থেকে তখন ডিম বের হচ্ছিল।


শৈউসাই মার্মা মৃগেলটি নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন সাংবাদিক একই নৌকা দিয়ে উজানে যাচ্ছিলেন। তাঁরা এটিকে মা মাছ হিসেবে শনাক্ত করে বলেন, অন্তত মে-জুন দুই মাস এসব মা মাছ ধরা বন্ধ রাখলে সাঙ্গু নদীতে রুই, কাতলা জাতের মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে। এ কথা শুনে অনুতপ্ত হন শৈউসাই।
জেলেরা জানান, ওই দিন তাঁরা এ ধরনের আরও দুটি বড় মাছ পেয়েছেন সাঙ্গু নদীতে। একটি প্রায় ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ এবং অন্যটি সাত কেজি ওজনের কালবাউশ। এ দুটি মাছেরও পেটভর্তি ডিম ছিল। কিন্তু এসব মা মাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কোনো চিন্তা নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি উদ্যোগ থাকলে সাঙ্গুও হতে পারে হালদার মতো মা মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননক্ষেত্র। এতে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের জন্য মিঠাপানির মাছের আরেকটি বড় মজুদ গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, অপেক্ষাকৃত সরু সাঙ্গু নদীতে সারা বছরই পানির প্রবাহ সমান থাকে না। পানি কমে গেলে রুই-কাতলার মতো বড় মাছ সব সময় বিচরণ করতে পারে না। তবে নদীর বিভিন্ন বাঁকে বড় বড় পাথুরে গর্ত আছে। স্থানীয় ভাষায় এসব গর্তের নাম কুম। এসব কুমেই বড় মাছগুলো অবস্থান করে। থানচি থেকে দোহাজারী পর্যন্ত পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে আসার সময় নদীর দুই পাড়ে এ ধরনের অসংখ্য কুমের সৃষ্টি হয়েছে। শুকনো মৌসুমে নদীর পানি একেবারে কমে গেলেও এসব কুমে মা মাছগুলো থেকে যায়। পরে বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে নদীতে বিচরণ করে।
তা ছাড়া থানচির কাছাকাছি এলাকায় ‘পদ্ম’ নামের একটি গভীর জায়গা আছে সাঙ্গু নদীতে। প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ এ জায়গায় জেলেরা মাছ ধরে না। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, এখানেও কিছু বড় মাছ থাকে, যেগুলো সাধারণত মে-জুন মাসে নদীতে ডিম ছাড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় সাঙ্গু নদীর মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে আসত। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং পথে পথে মা মাছ ধরা পড়ায় সেসব মা মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তবে সাঙ্গুর গভীর বাঁকগুলোতে এখনো কিছু মা মাছ বসবাস করে। সেগুলো নদীতে ডিম ছাড়ে। এতে বেশির ভাগ ডিম নষ্ট হলেও কিছু পোনা ফুটে। ফলে সাঙ্গুর মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে না।’
তিনি জানান, এসব ডিম ফুটে পোনা বের হতে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সাঙ্গুর পানি সাগরে যেতে প্রায় তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। ফলে ডিম সাগরে পড়ার আগেই পোনা বের হয়ে যায়। এসব পোনা সাঙ্গুতেই থেকে যায়। মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, সরকারি উদ্যোগ থাকলে সাঙ্গু নদেও হালদার মতো মা মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এতে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের জন্য মিঠা পানির মাছের আরেকটি বড় মজুদ গড়ে তোলা যেতে পারে।
রুমা উপজেলার তিন ইউনিয়নের মধ্যেই সাঙ্গু নদের পাথুরে এলাকার অবস্থান। এগুলো হচ্ছে গ্যালেঙ্গা, রুমা সদর ও রেমাক্রি প্রাংসু। এ তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈউসাই মার্মা, শৈবং মার্মা ও মেছতারাম ত্রিপুরা প্রথম আলোকে জানান, সরকার উদ্যোগ নিলে তাঁরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় সাঙ্গু নদের মা মাছ ধরা বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.