বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-জেনেশুনে নয় বিষপান by আরাফাত শাহরিয়ার
ঘরে-বাইরে, অফিসে-আড্ডায় সিগারেট না হলে যেন চলেই না! নিশ্চিন্তে মনে সিগারেট ফুঁকছেন, কিন্তু মনে একটুও ভাবনা আসছে না, এতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মস্তিষ্কে শুরু হয়ে যায় সিগারেট সেবনের প্রতিক্রিয়া। ধূমপানের কারণে হতে পারে ভয়াল সব ব্যাধি, জানার পরও নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেই বুঝি সিগারেটে সুখটান।
জেনেশুনে বিষপান ছাড়া একে আর কী বলা যেতে পারে!
তামাকজাতদ্রব্য হিসেবে বিড়ি বা সিগারেটের চল সবচেয়ে বেশি। পানের সঙ্গে জর্দাও কম যায় না। এটিও অনেক ক্ষতিকর। স্মরণাতীতকাল থেকেই মানুষ তামাক নামক এ নেশার বস্তুটিকে গ্রহণ করে আসছে। কখনো শ্রমের ক্লান্তি ভুলতে, কখনো আনন্দের আতিশয্যে সে এই বস্তুটি গ্রহণ করেছে। করতে করতে ভুলেই গেছে বস্তুটি তার শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, ধূমপানের ফলে বহুগুণ বেড়ে যায় ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। ফুসফুসে বাসা বাঁধে নানা রোগ। যেমন- ব্রঙ্কাইটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়, কমিয়ে দেয় ফুসফুসের কার্যক্ষমতা। ধূমপানে বাড়ে মানবদেহের উচ্চরক্তচাপ ও মস্তিষ্কের স্ট্রোকের আশঙ্কা। রক্তনালির বিভিন্ন রোগও দেখা দিতে পারে ধূমপানের কারণে। এ রকম কত রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ যে ধূমপান, তার ইয়ত্তা নেই।
বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যুর হার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ বছরের বেশি বয়েসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। আর এই তামাকের কারণে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছে ১২ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০১২ উপলক্ষে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবছর ৩১ মে সারা বিশ্বে পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য 'স্টপ টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফারেন্স' অর্থাৎ 'তামাক কম্পানির হস্তক্ষেপ বন্ধ করো'। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকপণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্কের হার খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বক্তারা জানান, 'তামাকের ওপর কর বাড়ালে এর ব্যবহার কমবে, বাঁচবে অসংখ্য জীবন।'
সিগারেটের শুরুটা হয় আগুনে, শেষ ছাইয়ে। এটি একজনকে পেয়ে বসলে তাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়, অথচ অনেকে তা টেরও পান না। নেশার অন্ধকার জগতের 'গেটপাস'ও এই সিগারেট। অনেক দেশে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইন করে প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনসমাগমে, বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে এবং প্লেনে ধূমপান করা যাবে না। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানার বিষয়ে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরই দেখা যায় প্রকাশ্যে ধূমপান করতে। আর ধূমপান প্রতিরোধে এ আইন যথেষ্ট নয়। দরকার আরো কঠোর আইন, সেই সঙ্গে তার প্রয়োগ। তবে তামাকমুক্ত বিশ্ব গড়তে আইন যথেষ্ট নয়, একই সঙ্গে দরকার গণসচেতনতা।
আরাফাত শাহরিয়ার
No comments