সত্যের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা আত্মঘাতী by লুৎফর রহমান রনো
একটি গণতান্ত্রিক সরকার, যারা দাবি করে এ দেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ব্রত তাদের। অথচ তারা সত্যকে সহ্য করতে পারছে না- এ কথা মেনে নিতে কষ্ট হয়। তাহলে কোন গোপন গোষ্ঠী সত্যকে অস্বীকার করতে চাইছে? সাংবাদিক সমাজের গলা চেপে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে?
সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন যদি স্রেফ সন্ত্রাসী কাণ্ড বা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ঘটে থাকে, তাহলে এর প্রতিকার করার দায়িত্ব সরকারের এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতার চিত্র এমনই করুণ যে সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এ বিষয়ে। আর যখন সাংবাদিকরা তাঁদের দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন সরকার সম্পর্কে উঁকি-ঝুঁকি দেওয়া প্রশ্নগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর সিপাহিদের নির্দেশ দেন, 'ধরো, মারো, পেটাও সাংবাদিকদের, সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না!' তখন রাষ্ট্রের চাল-চরিত্র সম্পর্কে সন্দেহ ও শঙ্কা জাগে বিবেকবান মানুষের। আমরা দেখেছি অতীতে এবং এ সরকারের সময়ও, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটানেওয়ালা পুলিশ অফিসারের পদোন্নতি হয়েছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্র-চরিত্র বা রাজনৈতিক নোংরা সংস্কৃতির প্রতিহিংসাপরায়ণতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে ধরে নেওয়া হয়েছে তা 'স্বাভাবিক' ঘটনা। কিন্তু যারা বিরোধী দলের কর্মী নয়, বোমাবাজি, পাথর ছোড়া, পাবলিকের জানমালের ক্ষতি করা যাদের কাজ নয়, কাঁধে তাদের ক্যামেরা, দায়িত্ব পালনে অবিচল- তাদের ওপর পুলিশের দলবদ্ধ আক্রমণ ও নৃশংসভাবে পেটানো কেন? এর জবাব আমাদের কাছে নেই। আমরা শুধু পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে অবলোকনের চেষ্টা করছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মোটেও মন্দ নয়। বরং চমৎকারই বলা যায়। যখন হিলারি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি উদাহরণীয় আদর্শ দেশ। আমরা তাতে দ্বিমত করি না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতা ব্যতিরেকে আমাদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি আজকের পর্যায়ে আসত না। আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যে খুঁতগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্রও মিথ্যা নেই। বলেছে, 'বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হত্যা-নির্যাতন।' এর বিরুদ্ধে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের একজনও অন্তত এ কথার প্রতিবাদ আজ করবে না। আরো উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে, 'বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, সাংবাদিক নির্যাতন...ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে অশুভ ছায়া ফেলেছে।'
আমরা ঘৃণা করি আমেরিকার বাণিজ্যিক আগ্রাসন, ঘৃণা করি তার শক্তিমদমত্ত যুদ্ধংদেহী চরিত্র, মধ্যপ্রাচ্য ও পৃথিবীজুড়ে তাদের অমানবিক বাণিজ্যনীতি-পররাষ্ট্রনীতি বা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধনীতি- সবই। কিন্তু অস্বীকার করতে পারছি না, আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির স্পষ্ট অবিকল বিবরণ। কারণ আমি ও আমার সহকর্মীরা নিরাপদ নয়। আতঙ্কের মধ্যে দিন-রাত কাটে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিকরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময়। তা নয় শুধু বেতন হালাল করতে। সত্যের টানে, সত্যোদ্ঘাটনের নেশায়। এ এক মহান ব্রত, দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিত সাংবাদিক সমাজ। অথচ সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে পারল না আমাদের সরকার বা তার সাজানো-গোছানো আইন রক্ষাকারী একাধিক সংস্থার লোকজন। এ সরকারের তিন বছর সময়কালের মধ্যে ১৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক নির্যাতিত ও আহত হয়েছেন পুলিশ ও সন্ত্রাসী দ্বারা। সর্বশেষ খবর হলো সোমবার বিডিনিউজের অফিস ভবনে সন্ত্রাসীরা ঢুকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সাংবাদিক রিফাত নেওয়াজ, সালাউদ্দিন ওয়াহিদ ও অন্যদের। কী আর বলা যায়! দেশের অবস্থা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পতিত হয়েছে, তা দেশের মানুষ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একাধিকবার আশ্বাস সত্ত্বেও সাংবাদিকদের প্রতি সুনজর সৃষ্টি করা গেল না বা সাগর-রুনির হত্যাকারী গ্রেপ্তারও হলো না। তাই সরকারের প্রতি কোনো আবেদন-নিবেদন নয়। সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে- এ আশা করতেই পারি। আমাদের প্রত্যাশা ও আশা-ভরসা এ দেশের সাধারণ মানুষ। নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্ষমতাসীন শ্রেণী ছাড়া একজন মানুষও নিরাপদ নয়। কারণ খুনি ধরা পড়ে না, বিচার পায় না নির্যাতিতরা। পুরো দেশটাই যেন পুলিশ ও সন্ত্রাসীর হাতে জিম্মি। এসবের মধ্যে, এ অন্ধকার অনিশ্চয়তার আকাশে এক ফোঁটা আলো যদি জ্বলে থাকে, তবে তা সাংবাদিক সমাজের দেশসেবার বদৌলতে। আজ যদি সব গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অন্ধকারে ডুবে যাবে দেশ-সমাজ-উন্নয়ন-গণতন্ত্র- সব কিছুই। তাই দেশবাসীর প্রতি আমাদের সাদর বার্তা, আপনারা সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মোটেও মন্দ নয়। বরং চমৎকারই বলা যায়। যখন হিলারি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি উদাহরণীয় আদর্শ দেশ। আমরা তাতে দ্বিমত করি না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতা ব্যতিরেকে আমাদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি আজকের পর্যায়ে আসত না। আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যে খুঁতগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্রও মিথ্যা নেই। বলেছে, 'বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হত্যা-নির্যাতন।' এর বিরুদ্ধে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের একজনও অন্তত এ কথার প্রতিবাদ আজ করবে না। আরো উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে, 'বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, সাংবাদিক নির্যাতন...ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে অশুভ ছায়া ফেলেছে।'
আমরা ঘৃণা করি আমেরিকার বাণিজ্যিক আগ্রাসন, ঘৃণা করি তার শক্তিমদমত্ত যুদ্ধংদেহী চরিত্র, মধ্যপ্রাচ্য ও পৃথিবীজুড়ে তাদের অমানবিক বাণিজ্যনীতি-পররাষ্ট্রনীতি বা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধনীতি- সবই। কিন্তু অস্বীকার করতে পারছি না, আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির স্পষ্ট অবিকল বিবরণ। কারণ আমি ও আমার সহকর্মীরা নিরাপদ নয়। আতঙ্কের মধ্যে দিন-রাত কাটে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিকরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময়। তা নয় শুধু বেতন হালাল করতে। সত্যের টানে, সত্যোদ্ঘাটনের নেশায়। এ এক মহান ব্রত, দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিত সাংবাদিক সমাজ। অথচ সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে পারল না আমাদের সরকার বা তার সাজানো-গোছানো আইন রক্ষাকারী একাধিক সংস্থার লোকজন। এ সরকারের তিন বছর সময়কালের মধ্যে ১৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক নির্যাতিত ও আহত হয়েছেন পুলিশ ও সন্ত্রাসী দ্বারা। সর্বশেষ খবর হলো সোমবার বিডিনিউজের অফিস ভবনে সন্ত্রাসীরা ঢুকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সাংবাদিক রিফাত নেওয়াজ, সালাউদ্দিন ওয়াহিদ ও অন্যদের। কী আর বলা যায়! দেশের অবস্থা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পতিত হয়েছে, তা দেশের মানুষ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একাধিকবার আশ্বাস সত্ত্বেও সাংবাদিকদের প্রতি সুনজর সৃষ্টি করা গেল না বা সাগর-রুনির হত্যাকারী গ্রেপ্তারও হলো না। তাই সরকারের প্রতি কোনো আবেদন-নিবেদন নয়। সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে- এ আশা করতেই পারি। আমাদের প্রত্যাশা ও আশা-ভরসা এ দেশের সাধারণ মানুষ। নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্ষমতাসীন শ্রেণী ছাড়া একজন মানুষও নিরাপদ নয়। কারণ খুনি ধরা পড়ে না, বিচার পায় না নির্যাতিতরা। পুরো দেশটাই যেন পুলিশ ও সন্ত্রাসীর হাতে জিম্মি। এসবের মধ্যে, এ অন্ধকার অনিশ্চয়তার আকাশে এক ফোঁটা আলো যদি জ্বলে থাকে, তবে তা সাংবাদিক সমাজের দেশসেবার বদৌলতে। আজ যদি সব গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অন্ধকারে ডুবে যাবে দেশ-সমাজ-উন্নয়ন-গণতন্ত্র- সব কিছুই। তাই দেশবাসীর প্রতি আমাদের সাদর বার্তা, আপনারা সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ান।
লেখক : সাংবাদিক
No comments