শেয়ারবাজারে অস্থিরতা-এখনই সাবধানতা অবলম্বন জরুরি
টানা ছয় দিন এক টানা দরপতনের পর গতকাল দিনের প্রথম ভাগে সূচক কিছুটা বাড়লেও বাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত ছয় দিনে সূচক কমেছে ৩৯২ পয়েন্ট। আর গতকাল সকালে সূচক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে আবার কিছুটা কমে যায় এবং দিনের প্রথম ভাগে শেষ পর্যন্ত ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে সূচক দাঁড়ায় চার হাজার ৬৭৬ পয়েন্টে।
বাজারের এই ধরনের উত্থান-পতনে বিনিয়োগকারীরাও একধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। সক্রিয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। ফলে বাজারে যে ধরনের গতিময়তা থাকা দরকার ছিল, তা এখন দেখা যাচ্ছে না। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের এই উত্থান-পতনের পেছনে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মকানুন যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী পারিপার্শ্বিক ঘটনা এবং বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্তি্বক ধারণা। অন্যদিকে এসইসির নির্দেশনা মোতাবেক ২ শতাংশের কম শেয়ারধারী যেসব উদ্যোক্তা-পরিচালককে পদ ছেড়ে দিতে হবে, তাঁদের হাতে থাকা বিপুলসংখ্যক শেয়ার একযোগে ছেড়ে দিলে বাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। আবার হুজুগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতাও বাজারকে অস্থির করছে বলে অনেকে মনে করছেন। এসব ক্ষেত্রে বাজারে যাতে বড় ধরনের ধস না নামে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিকে আরো যত্নবান হতে হবে।
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই যেমন ভয় পায়, আমাদের শেয়ারবাজার নিয়ে অনেকের মনেই সে ধরনের শঙ্কা কাজ করে। বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রথম অবস্থায়ই শেয়ারবাজারে যে ধরনের টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার রেশ এখনো কাটেনি। এতে বহু বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছিল। তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণও করা হয়নি। সে সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় না আনা গেলে এবং বাজার স্থিতিশীল করা না গেলে সরকারকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে। আমাদের ধারণা, বর্তমান সরকার এই ভবিষ্যদ্বাণীটিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে শেয়ারবাজারের যেকোনো অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেবে। এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শেয়ার কেলেঙ্কারির যোগসূত্র নিয়ে জনমনে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতেও সরকারকে এ ব্যাপারে আরো যত্নবান হতে হবে। অবশ্য ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণের সুদ মওকুফসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আসন্ন বাজেটেও শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।
No comments