যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষাই কি এর উদ্দেশ্য?-জামায়াতের হরতাল

বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতিতে হরতাল নতুন ঘটনা না হলেও মৌলবাদী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর আহ্বানে একটি বিভাগীয় শহরে হরতাল পালন বিরল ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হবে। জামায়াতের সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলামের জামিন বাতিল হওয়ায় দলটি বুধবার বন্দরনগর চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতাল পালন করে।


হরতাল পালনকারীরা হরতালকে রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে দাবি করলেও এটি যে তারা জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয় না, বুধবারের ঘটনা তারই প্রমাণ। হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা কেবল যানবাহন চলাচলে বাধা দেননি, তাঁরা হাতবোমা ছুড়ে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতেও সচেষ্ট ছিলেন। পুলিশ হাতবোমাসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া পিকেটিংয়ের অভিযোগে জামায়াতের আরও ২১ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে জামায়াতে ইসলামী হরতাল পালন করে আসছিল। এই প্রথম তারা এককভাবে হরতাল ডেকে কেবল সরকারের পাশাপাশি জনগণের বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। অনেকেরই দাবি, জামায়াতে ইসলামী দলীয় সাংসদের জামিন না হওয়ার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের রক্ষা করতেই এই হরতাল পালন করেছে। যেদিন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার শুরু হয়, সেদিনও তারা চট্টগ্রামে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
জামায়াতে ইসলামী এই হরতাল পালন করে কী বার্তা দিতে চেয়েছে? প্রথম বার্তা হলো, এটি প্রমাণ করা যে তারা এককভাবেই হরতাল পালন করতে পারে। দ্বিতীয় বার্তা হলো, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে নিজেদের আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দুই দলের মধ্যে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে বলেও পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে।
জামিন দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণ আদালতের ব্যাপার। নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হলে জামায়াতে ইসলামীর উচিত ছিল উচ্চ আদালতে যাওয়া। এর আগে ছয়জন সাংসদের জামিন বাতিল হওয়ার পর ১৮ দলের নেতারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। সেই মামলায় জামায়াতের অভিযুক্ত তিন নেতার কেউই আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। এক মামলায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জামায়াতের নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন, আরেক মামলায় আইনপ্রক্রিয়া শেষ না হতেই চট্টগ্রামবাসীর ওপর একটি বাড়তি হরতাল চাপিয়ে দিয়েছে। এই স্ববিরোধিতা কেন?
আমরা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাব এ কারণে যে তারা জামায়াতে ইসলামীর এই অযৌক্তিক হরতালকে সমর্থন জানায়নি। কোনো অবস্থাতেই হরতাল ও অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং তা যাতে কোনোভাবেই জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না করে। বিচার বা জামিনের বিষয়টি যেমন আদালতের এখতিয়ার, আইনি প্রক্রিয়াতেই এর প্রতিকার চাইতে হবে, জনগণের ওপর হরতাল চাপিয়ে দিয়ে নয়।

No comments

Powered by Blogger.