সদরঘাট কালীবাড়ি মোড়-পুরো সড়কই যেন বাজার by নিয়াজ তুহিন

‘বিকেল থেকে রাত নয়টার পর পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল সড়কের প্রায় অর্ধেক দখল করে বসে মাছ-তরকারির বাজার। এমনকি মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়ার গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত থাকে না। এ ছাড়া সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় মাদকসেবীদের উৎপাত।’


সদরঘাট কালীবাড়ি মোড় এলাকায় বাজারের কারণে জনদুর্ভোগের চিত্র এভাবেই তুলে ধরলেন স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল হোসেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, চট্টগ্রাম সিটি কলেজের মোড় থেকে সদরঘাট কালীবাড়ি হয়ে শাহাজাহান হোটেল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল প্রায় চারটা থেকে রাস্তার ওপর বাজার বসে। রাত নয়টা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ দখল করে চলে বেচাকেনা। এতে ব্যস্ততম এই সড়কে যানজট লেগে থাকে। স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ছুটির পর যানজট অসহনীয় হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি করে সড়কের ওপর তরি-তরকারি ও ফলমূল কেনাবেচা চলছে। মাছ বিক্রেতারা রাস্তার এক পাশ দখল করে ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষিতে ব্যস্ত। রিকশা, অটোরিকশা, কার ইত্যাদি চলছে থেমে থেমে। গা-ঘেঁষে গাড়ি চলাচল করার সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও কারও কোনো বিকার নেই। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের মূল ফটকেও জো নেই গাড়ি দাঁড়ানোর। চারপাশে গাঁজার উৎকট গন্ধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে সদরঘাট এলাকার সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১০ সালে সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু ফুটপাতসহ সড়ক দখল করে বাজার বসার কারণে এটি আবার সংকুচিত হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি দৈনিক চাঁদার ভিত্তিতে এসব বাজার বসার অনুমতি দেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলার সাহস পান না।
সবজি বিক্রেতা আবু বক্কর বলেন, দৈনিক ২০ টাকা কমিশনের ভিত্তিতে পণ্য নিয়ে বাজারে বসার অনুমতি পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোনো দোকানের সামনে বসার ক্ষেত্রে দোকান মালিকদেরও টাকা দিতে হয়। আর এই বাড়তি টাকা আদায় করা হয় ক্রেতাদের কাছ থেকে।
এ সম্পর্কে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘হাতের নাগালে বাজার বসায় এলাকাবাসীর কিছুটা সুবিধা হয়েছে। তবে এতে যানজটসহ নানাভাবে জনদুর্ভোগও সৃষ্টি হয়েছে। তাই সড়কের ওপর বাজার না বসানোর ব্যাপারে বাজার কমিটির সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর বাজার উচ্ছেদের জন্য পুলিশ প্রশাসন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন (চউক) কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
সূত্র জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে ফল বিক্রেতাদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় বাজারটি উচ্ছেদ করা হয়। কিছুদিন পর বাজারটি আবার বসে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মেমন হাসপাতালের পক্ষ থেকে একাধিকবার চউক বরাবর অভিযোগ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
চউক এর সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বাজারটি উচ্ছেদের জন্য কোতোয়ালী থানাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল। শিগগিরই পুলিশের সহায়তায় এটি উচ্ছেদ করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.