সামাজিক প্রতিরোধ ও আইনের প্রয়োগই সমাধান-মাদকের বিস্তার
মাদক সমস্যা পুরোনো ব্যাধির মতো বেড়েই চলেছে। দেশে এখন মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। এক লাখেরও বেশি মানুষ মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত এবং বছরে প্রায় ৫০ হাজার মাদক-বিক্রেতা গ্রেপ্তার হয়। অথচ সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকবল মাত্র এক হাজার ২৭৭ জন।
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর সংবাদে প্রকাশিত এসব তথ্য মাদক নিয়ন্ত্রণে আরও সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরে।
মাদক-বিক্রেতাদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কটি চোর-পুলিশ খেলার নিয়মেই চলছে। মাঝেমধ্যে মাদকের আখড়া উচ্ছেদ হয়, বিক্রেতাদের হাজতে পাঠানো হয়, কিন্তু অচিরেই নতুন জায়গায় নতুন মানুষ মাদক ব্যবসার জাল নিয়ে বসে। বহু ক্ষেত্রেই মাদক ব্যবসার বখরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পেয়ে থাকেন। দেশের অনেক রাঘব বোয়ালও এসবের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের মাদকাসক্তদের মধ্যে ফেনসিডিল ও গাঁজাসেবীরাই বেশি। এ দুটো মাদকই চোরাইপথে ভারত থেকে আসে। সীমান্তে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, হেরোইন-কোকেইন ও ইয়াবার মতো মারাত্মক নেশাদ্রব্য আসে আকাশপথে। বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এরও নিবারণ সম্ভব।
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মূলত শহরাঞ্চলেই মাদকের প্রসার বেশি। এ তথ্য থেকে অনুমান করা যায়, নাগরিক-জীবনের বিচ্ছিন্নতা, মানসিক চাপ, বিনোদনের অভাব ও নিঃসঙ্গতা থেকেই শহুরে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মাদকের প্রতি আকর্ষণ জন্মে। বেকারত্বজনিত হতাশাও মাদকাসক্তি বাড়ায়। দীর্ঘ মেয়াদে নগরের জীবনকে আনন্দময় ও মেলামেশার উপযোগী করা এবং বেকারত্ব দূর করার মাধ্যমে মাদকের বিস্তার কিছুটা কমতে পারে।
প্রতিরোধের পাশাপাশি তাই প্রতিকারের দিকে নজর দিতে হবে। তারুণ্যকে মাদকমুক্ত করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎও মাদকের গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তরুণদের মধ্যে আশা-জাগানো, ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িত করার সামাজিক আন্দোলন তাই দরকার। এই কাজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সরকারের করণীয়ই এ ব্যাপারে প্রধান। বন্ধু-পরিজন ও পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্নরাই মাদকের খপ্পরে আগে পড়ে। পরিবারের অভিভাবকদের উচিত, শৈশব শাসনের বদলে তাদের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করা।
তবে সবার আগে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গডফাদারদেরও চিহ্নিত করতে হবে, বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মাদক-বিক্রেতাদের এই পথ থেকে সরিয়ে আনার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত শিশুদের জন্য সংশোধনের মাধ্যমে আশ্রয় ও পড়ালেখার ব্যবস্থা করা যায়। যারা মাদকের পথ ছাড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত বাড়াতে হবে। দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণের বড় পথ হলো, সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সর্বনাশা পণ্যটির প্রাপ্তি কঠিন করে তোলা।
No comments