স্বপ্নের পদ্মা সেতু-স্বার্থান্ধদের ঠেকাতে হবে
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু স্বপ্নের সেতু হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। দীর্ঘকালের অপেক্ষার পর অবশেষে এবার সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সবাই আশ্বস্ত হয়েছেন। নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণ, তদারকি ও অন্যান্য কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
বিশাল নির্মাণযজ্ঞের প্রস্তুতিপর্বও শুরু হয়েছে। কয়েকটি স্তরের এই নির্মাণযজ্ঞে প্রচুর মানুষের সংশ্লিষ্টতা থাকবে। নদী-তীরবর্তী নির্মাণ এলাকা থেকে বসতি সরিয়ে নেওয়া থেকে নদীশাসন পর্যন্ত কাজের প্রক্রিয়াগুলো জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এ কাজগুলো জনসংশ্লিষ্টও বটে। যে কোনো নির্মাণ কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে বসতি সরিয়ে নেওয়া, কৃষিজমি ও বাস্তুভিটা অধিগ্রহণ অত্যন্ত নাজুক কাজ। সাধারণভাবে আশা করা হয়, সরকার এ কাজগুলো যথেষ্ট সতর্কতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করবে। অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ যথাসময়ে পরিশোধ করবে। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাদের পুনর্বাসনের দিকে সরকারের বিশেষ মনোযোগ থাকবে। ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকার নির্মাণ ব্যয়ের খুব সামান্য অংশই ক্ষতিপূরণে ব্যয় হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সন্তুষ্টি একটি বড় প্রসঙ্গ। কেননা, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অসন্তোষ একটি বৃহৎ ও প্রয়োজনীয় নির্মাণকাজকেও ব্যাহত করতে পারে। সবার আশা, পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার উদ্ভব ঘটবে না। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। কয়েকটি পর্যায়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অনেক দূর অগ্রসরও হয়েছে। আর এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়েই সক্রিয় হয়ে উঠেছে মুনাফালোভী-স্বার্থান্ধ মহলগুলো। ক্ষতিগ্রস্তরা যথানিয়মে ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর নির্মাণ এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠা এ মহলটি অনিয়ম করে বেশি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে কৃষি জমিকে রাতারাতি বাস্তুভিটায় পরিণত করে তুলছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বাড়িঘর তোলা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে ওঠা এসব কৃত্রিম আবাসিক এলাকার লক্ষ্য একটাই, অধিগ্রহণের সুযোগ নিয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। আর এ কাজে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও অধিগ্রহণের দায়িত্বে থাকা অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। জমির মালিকের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ক্ষতিপূরণের আশায়। অতীতে যমুনায় সেতু নির্মাণের সময়ও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। নদীর চরে রাতারাতি বসতি গড়ে তুলে স্বার্থান্ধ মহল ক্ষতিপূরণের বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। রাজধানীতে বিভিন্ন নির্মাণকাজে এমন দেখা যায়। নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর আগে পরিচালিত জরিপ অনুসারে কাজ করলে সহজেই বসতি, কৃষিজমি ও পতিত জমি চিহ্নিত করা সম্ভব। সেটি না করে যদি রাতারাতি গজিয়ে ওঠা বাড়িঘর অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তবে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে, নিয়মানুসারে প্রক্রিয়াটি চললে স্বার্থান্ধরা উৎসাহিত হবে না। আমরা আশা করি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। শুধু অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেই নয়, নির্মাণ প্রক্রিয়ার সবগুলো স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে এবং নিখুঁত একটি সেতু জনগণকে উপহার দিতে পারলে তা হবে মানুষের স্বস্তির কারণ। পদ্মা সেতু প্রকৃত অর্থেই স্বপ্ন পূরণের সেতু হয়ে উঠুক_ এটিই প্রত্যাশিত।
No comments