কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫ বাংলাদেশি by মোহাম্মদ কায়কোবাদ
বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্ররা ১৫ বছর ধরে প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো মর্যাদাকর প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। ১৯৯৮ সালে ২২তম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরের প্রায় ৫০তলা হোটেল ম্যারিয়ট মার্কিসে অনুষ্ঠিত ৫৪ দলের সেই প্রতিযোগিতায় সুমন, সৈকত, সুষমের দল তিনটি সমস্যার সমাধান করে ২৪তম স্থান দখল করেছিল।
যে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই এমনকি হাজার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল তালিকায় নাম লেখাতে পারে না, সেই দেশের ছাত্ররা অপেক্ষাকৃত নবীন এবং আধুনিকতম প্রযুক্তির বিভাগের ছাত্র হয়ে সারা পৃথিবীতে ২৪তম স্থান দখল করা অবশ্যই প্রশংসনীয় অর্জন।
তারপর অত্যুৎসাহী জাকারিয়া স্বপনের উদ্যোগে প্রশিকা ও ডেইলি স্টার পত্রিকা প্রথম জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে হোটেল শেরাটনে, যার প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেই অনুষ্ঠানে সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমাদের ছাত্ররা, বিশেষ করে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই অংশ নিয়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা গর্বের সঙ্গে এই মর্যাদাকর প্রতিযোগিতায় ওড়াচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই মর্যাদাকর আসরে আমাদের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে তারা হলো নর্থসাউথ, এআইইউবি, ঢাকা, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এই প্রথম রাজধানীর বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এই সুপার লীগে তাদের স্থান করে নিল। অভিনন্দন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড, দাবা অলিম্পিয়াডসহ নানা উন্নয়ন অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এযাবৎ বড়জোর শ-তিনেক বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে, যার ছয়টিই বাংলাদেশের। শুধু তা-ই নয়, অরল্যান্ডোতে অনুষ্ঠিত ২০০০ সালের ৬০টি দলের প্রতিযোগিতায় এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, বার্কলের মতো নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে মুস্তাক, পাপ্পানা, ফেরদৌসের দল একাদশ স্থান দখল করেছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ছাত্রদের সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে প্রত্যেককে এক লাখ টাকার নগদ পুরস্কার দিয়েছিলেন। প্রতিবছর ৮০-৯০টি দেশের ছাত্ররা এই মর্যাদাকর প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্যায়ে অংশ নিলেও ফাইনালে বড়জোর ৩০-৩৫টি দেশ। তবে ১৫ বছর ধরে প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে একটি দল থাকেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত দেশের জন্য এর থেকে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে?
২০০৯ সালের সেই প্রতিযোগিতায় আইসিপিসি চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রানারআপ হয়েছিল। ২০০৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় আমাদের আরেকটি গর্বের বিষয় রয়েছে, তা হলো, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহরিয়ার মঞ্জুর সম্মানিত বিচারক হিসেবে কাজ করে আসছেন। সেই থেকে বাংলাদেশের তরুণ শাহরিয়ার মঞ্জুর সারা পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের লেখা প্রোগ্রাম যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে যাচাই করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রোগ্রামাররা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতাসমূহে সমস্যাপ্রণেতা ও বিচারক হিসেবে কাজ করে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করেছেন। এমনকি ভারতেরও আগে বাংলাদেশের মাটিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হক ১৯৯৭ সালে প্রথম আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছেন। সুতরাং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবেও আমাদের সুখ্যাতি রয়েছে।
এবার ১১০ দলের প্রতিযোগিতায় ৩০-৩৫টি দেশের ছাত্ররা প্রতিনিধিত্ব করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের রয়েছে দুটি দল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দলে রয়েছে মীর ওয়াসি আহমেদ, মো. এনজাম হোসেন ও এফ এ রেজাউর রহমান চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলে প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছে ফরহাদ আহমেদ, বাকের মো. আনাছ এবং মো. মাকসুদ হোসেন, কোচ হিসেবে শহিদুল ইসলাম ও মো. রুহুল আমীন। ৮৮টি দেশের দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের আট হাজার দল থেকে বাছাই করে যে ১১০টি দল ফাইনালে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাতে আমাদের দুটি দল রয়েছে। এবার অবশ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী আমাদের প্রাক্তন ছাত্র মুশফিকুর রউফ ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দলের কোচ হিসেবে অংশ নেবে। এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়, আমাদের সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে স্টনিব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ও এ রকম সুযোগ পেয়েছিল। বাংলাদেশকে ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে প্রতিনিধিত্ব করা ইকরাম মাহমুদের হাত ধরে এবার আসছে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া। এর সঙ্গে ঢাকা সাইটের পরিচালক অধ্যাপক হক, আগামী বছরের পরিচালক অধ্যাপক আখতার হোসেন এবং প্রতিযোগিতায় উৎসাহী আরও দুজন মিলে বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫, যা এযাবৎ সর্বোচ্চ।
প্রোগ্রামিং ফিল্ডে অর্জিত স্বীকৃতির সুবাদেই কিছুদিন আগে গুগল কোম্পানিতে বুয়েটের স্নাতক মঞ্জুরুর রহমান, তানায়েম মুহাম্মদ মুসা, মাশুক ও শাহরিয়ার রউফ গুগল কোম্পানিতে যোগদান করেছে। শাহরিয়ার রউফের ভাই মুশফিকুর রউফ বুয়েটের পক্ষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুবার অংশ নিয়েছে। শাহরিয়ার রউফও দুবার করেছে। আমি জানি না কোনো পিতামাতার দুজন সন্তান সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছে কি না। তবে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ শিরিন আক্তার ও বুয়েটের অধ্যাপক আবদুর রউফের দুই সন্তান তা করেছে। সুতরাং এসিএম প্রোগ্রামিং ঘিরে আমাদের নানা ধরনের সফলতা। একবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিকে ঘিরে অন্যান্য প্রযুক্তিরও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে বাস্তবায়িত করতে চাই বিশ্বমানের দক্ষতাসম্পন্ন কম্পিউটার প্রকৌশলী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যা ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে তৈরি করতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটাতে হবে।
এই প্রতিযোগিতায় ভারতের ছাত্ররা যাতে ভালো করতে পারে তার জন্য উরৎবপঃও কোম্পানির তরুণ উদ্যোক্তা ভালো ফলাফলের জন্য নানা ধরনের আকর্ষণীয় পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া কম্পিউটার প্রতিযোগিতা আয়োজনে তারা উদার চিত্তে স্পনসরের ভূমিকা পালন করছে। তাদের এ উদ্যোগের ফলাফলও ভারত পেতে শুরু করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আমাদের তরুণদের নানাভাবে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতায় বলীয়ান হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়ার এখনই সময়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট, মে ২০১২
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
তারপর অত্যুৎসাহী জাকারিয়া স্বপনের উদ্যোগে প্রশিকা ও ডেইলি স্টার পত্রিকা প্রথম জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে হোটেল শেরাটনে, যার প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেই অনুষ্ঠানে সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমাদের ছাত্ররা, বিশেষ করে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই অংশ নিয়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা গর্বের সঙ্গে এই মর্যাদাকর প্রতিযোগিতায় ওড়াচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই মর্যাদাকর আসরে আমাদের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে তারা হলো নর্থসাউথ, এআইইউবি, ঢাকা, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এই প্রথম রাজধানীর বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এই সুপার লীগে তাদের স্থান করে নিল। অভিনন্দন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড, দাবা অলিম্পিয়াডসহ নানা উন্নয়ন অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এযাবৎ বড়জোর শ-তিনেক বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে, যার ছয়টিই বাংলাদেশের। শুধু তা-ই নয়, অরল্যান্ডোতে অনুষ্ঠিত ২০০০ সালের ৬০টি দলের প্রতিযোগিতায় এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, বার্কলের মতো নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে মুস্তাক, পাপ্পানা, ফেরদৌসের দল একাদশ স্থান দখল করেছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ছাত্রদের সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে প্রত্যেককে এক লাখ টাকার নগদ পুরস্কার দিয়েছিলেন। প্রতিবছর ৮০-৯০টি দেশের ছাত্ররা এই মর্যাদাকর প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্যায়ে অংশ নিলেও ফাইনালে বড়জোর ৩০-৩৫টি দেশ। তবে ১৫ বছর ধরে প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে একটি দল থাকেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত দেশের জন্য এর থেকে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে?
২০০৯ সালের সেই প্রতিযোগিতায় আইসিপিসি চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রানারআপ হয়েছিল। ২০০৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় আমাদের আরেকটি গর্বের বিষয় রয়েছে, তা হলো, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহরিয়ার মঞ্জুর সম্মানিত বিচারক হিসেবে কাজ করে আসছেন। সেই থেকে বাংলাদেশের তরুণ শাহরিয়ার মঞ্জুর সারা পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের লেখা প্রোগ্রাম যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে যাচাই করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রোগ্রামাররা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতাসমূহে সমস্যাপ্রণেতা ও বিচারক হিসেবে কাজ করে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করেছেন। এমনকি ভারতেরও আগে বাংলাদেশের মাটিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হক ১৯৯৭ সালে প্রথম আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছেন। সুতরাং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবেও আমাদের সুখ্যাতি রয়েছে।
এবার ১১০ দলের প্রতিযোগিতায় ৩০-৩৫টি দেশের ছাত্ররা প্রতিনিধিত্ব করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের রয়েছে দুটি দল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দলে রয়েছে মীর ওয়াসি আহমেদ, মো. এনজাম হোসেন ও এফ এ রেজাউর রহমান চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলে প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছে ফরহাদ আহমেদ, বাকের মো. আনাছ এবং মো. মাকসুদ হোসেন, কোচ হিসেবে শহিদুল ইসলাম ও মো. রুহুল আমীন। ৮৮টি দেশের দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের আট হাজার দল থেকে বাছাই করে যে ১১০টি দল ফাইনালে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাতে আমাদের দুটি দল রয়েছে। এবার অবশ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী আমাদের প্রাক্তন ছাত্র মুশফিকুর রউফ ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দলের কোচ হিসেবে অংশ নেবে। এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়, আমাদের সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে স্টনিব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ও এ রকম সুযোগ পেয়েছিল। বাংলাদেশকে ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে প্রতিনিধিত্ব করা ইকরাম মাহমুদের হাত ধরে এবার আসছে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া। এর সঙ্গে ঢাকা সাইটের পরিচালক অধ্যাপক হক, আগামী বছরের পরিচালক অধ্যাপক আখতার হোসেন এবং প্রতিযোগিতায় উৎসাহী আরও দুজন মিলে বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫, যা এযাবৎ সর্বোচ্চ।
প্রোগ্রামিং ফিল্ডে অর্জিত স্বীকৃতির সুবাদেই কিছুদিন আগে গুগল কোম্পানিতে বুয়েটের স্নাতক মঞ্জুরুর রহমান, তানায়েম মুহাম্মদ মুসা, মাশুক ও শাহরিয়ার রউফ গুগল কোম্পানিতে যোগদান করেছে। শাহরিয়ার রউফের ভাই মুশফিকুর রউফ বুয়েটের পক্ষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুবার অংশ নিয়েছে। শাহরিয়ার রউফও দুবার করেছে। আমি জানি না কোনো পিতামাতার দুজন সন্তান সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছে কি না। তবে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ শিরিন আক্তার ও বুয়েটের অধ্যাপক আবদুর রউফের দুই সন্তান তা করেছে। সুতরাং এসিএম প্রোগ্রামিং ঘিরে আমাদের নানা ধরনের সফলতা। একবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিকে ঘিরে অন্যান্য প্রযুক্তিরও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে বাস্তবায়িত করতে চাই বিশ্বমানের দক্ষতাসম্পন্ন কম্পিউটার প্রকৌশলী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যা ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে তৈরি করতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটাতে হবে।
এই প্রতিযোগিতায় ভারতের ছাত্ররা যাতে ভালো করতে পারে তার জন্য উরৎবপঃও কোম্পানির তরুণ উদ্যোক্তা ভালো ফলাফলের জন্য নানা ধরনের আকর্ষণীয় পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া কম্পিউটার প্রতিযোগিতা আয়োজনে তারা উদার চিত্তে স্পনসরের ভূমিকা পালন করছে। তাদের এ উদ্যোগের ফলাফলও ভারত পেতে শুরু করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আমাদের তরুণদের নানাভাবে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতায় বলীয়ান হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়ার এখনই সময়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট, মে ২০১২
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
No comments