বাজেট-বাস্তবায়নেই সাফল্য by মামুন রশীদ
বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, তা দেখে বেশ খুশি হতেন। তার চেয়েও বেশি খুশি হতেন, জাতির অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে মূল ইস্যুগুলোতে ব্যাপক ঐকমত্য দেখে।
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এবারের বাজেটে অধিকাংশ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুই স্থান পেয়েছে। এ নিয়ে আমাদের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক আমলা, থিঙ্কট্যাঙ্ক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা অনেক দিন ধরেই সরব আলোচনা করছেন। তার সঙ্গে এবার অবশ্য অনেকটা বিলেতের ছায়া সরকারের মতো যোগ হয়েছে বিরোধী দলের বাজেট প্রস্তাবনাও। সেখানেও দেখা দিয়েছে জাতির মূল সমস্যাগুলো সমাধানের প্রশ্নে অনেকটা ঐকমত্য।
দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী সংসদে আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। এতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।
সরকার অবশ্য আগেই নতুন অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া আগামী ৩০ জুন সমাপ্য বর্তমান অর্থবছরের এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট সংশোধন করে এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকায় করা হয়। এতে এডিপি বা উন্নয়ন ব্যয়ের আকার ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আমরা জানি, নতুন বাজেটে গাড়ি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, সিগারেট, সিরামিক টাইলস, টেবিলওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, সিরামিক পণ্য, ওভেন ও নিট কাপড় এবং প্লাস্টিকের দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর এবং বিদেশযাত্রার টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে সার, কীটনাশক, ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রধান খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি, প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি স্যান্ডেল, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, সৃজনশীল বই, গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারী শিল্পকে উৎসাহিত করতে তিনি রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, মোটরসাইকেল ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতির উৎপাদনকারী এবং এগুলোর কাঁচামালের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহার করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি কর আয় বাড়াতে দেশের পুঁজিবাজারের ওপর যথেষ্ট তথ্য ও নজর রাখার পাশাপাশি শেয়ার ট্রেডিং থেকে প্রাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের আয়ের ওপর কর ধার্য করেছেন। তা ছাড়া অত্যন্ত সৃজনশীল ও কৌশলীভাবে আরও বেশ কিছু খাতের ওপর কর নির্ধারণের মাধ্যমে কর খাত সম্প্রসারণের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদার কাজ করার বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এ ব্যাপারে বাজেটে ভর্তুকিসহ তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে এবং দেশে দুর্নীতির প্রকোপ কমাতে এই সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বিত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যেই উপজেলা তথা গ্রামপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে কালো টাকার মালিকেরা এ ধরনের অর্থ আর পুঁজিবাজারে বা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করে বিনা প্রশ্নে পার পাবেন না। তবে ভৌত অবকাঠামো অর্থায়ন ফান্ডে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ, সেতু এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি নীতি-সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নতুন অর্থবছরের জন্য ছয় দশমিক সাত শতাংশে প্রাক্কলন এবং আগামী ২০১৩ সাল নাগাদ আট শতাংশে ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেছেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মতোই নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে জিডিপির পাঁচ শতাংশ। এই ঘাটতির দুই শতাংশ বৈদেশিক ঋণ-অর্থায়ন নিয়ে এবং বাকি তিন শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটানো হবে।
অর্থমন্ত্রী এবার বাজেটের সঙ্গে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের পথ নকশা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নয় হাজার ৪২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় সুনির্দিষ্ট করে দেখিয়েছেন। মূলত বেসরকারি প্রকল্পগুলো থেকেই বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
তবে এ বাজেটের চ্যালেঞ্জও অনেক। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি সমস্যা দূরীকরণ, বিনিয়োগে গতি ফিরিয়ে আনা, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান হারে প্রবেশমান শ্রমশক্তির জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আয় ও মানববৈষম্য ঘোচানো।
নতুন বাজেটকে বেশ ভালো মনে হলেও এটি একই সঙ্গে উচ্চাভিলাষীও বটে। এতে উন্নয়ন ব্যয় বা এডিপি প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং মোট ব্যয় ২১ শতাংশ বেড়েছে। সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকেই এই বাজেট দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এত বড় ব্যয়সংবলিত বাজেট বাস্তবায়ন করা কি সম্ভব? যদি এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে এটি বাস্তবায়নের প্রধান পদক্ষেপটা নেবেন কে? কারণ বাজেট বাস্তবায়নের সামর্থ্যের জন্য একদিকে সক্ষমতা, অন্যদিকে একসঙ্গে কাজ করাও অপরিহার্য। প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়ন প্রশাসন এবং জনগণ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা। জনপ্রশাসনের সামগ্রিক দক্ষতা ও সামর্থ্যের বিষয়টিও এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের উল্লিখিত একটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে। বইটি হলো, ল্যারি বসিডি এবং রামচরণ লিখিত এক্সিকিউশন: দি ডিসিপ্লিন অব গেটিং থিংস ডান। বইটির শিরোনামই যেন বাংলাদেশের আজকের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য বলে মনে হয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কথা অত্যন্ত সুন্দর বলেছেন যে ‘আমরা দারিদ্র্য মুক্তির ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী’। এ ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখতে হবে যে দারিদ্র্য বিতরণ করা সম্ভব নয়। বিতরণ করতে হবে বর্ধিত বা সংবর্ধিত সম্পদ। তার জন্য দক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অর্থনীতিতে সম্পদ সৃষ্টির পথকে প্রণোদিত করতে হবে। বিকাশের পথকে করতে হবে কণ্টকমুক্ত।
মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী সংসদে আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। এতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।
সরকার অবশ্য আগেই নতুন অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া আগামী ৩০ জুন সমাপ্য বর্তমান অর্থবছরের এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট সংশোধন করে এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকায় করা হয়। এতে এডিপি বা উন্নয়ন ব্যয়ের আকার ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আমরা জানি, নতুন বাজেটে গাড়ি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, সিগারেট, সিরামিক টাইলস, টেবিলওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, সিরামিক পণ্য, ওভেন ও নিট কাপড় এবং প্লাস্টিকের দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর এবং বিদেশযাত্রার টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে সার, কীটনাশক, ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রধান খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি, প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি স্যান্ডেল, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, সৃজনশীল বই, গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারী শিল্পকে উৎসাহিত করতে তিনি রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, মোটরসাইকেল ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতির উৎপাদনকারী এবং এগুলোর কাঁচামালের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহার করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি কর আয় বাড়াতে দেশের পুঁজিবাজারের ওপর যথেষ্ট তথ্য ও নজর রাখার পাশাপাশি শেয়ার ট্রেডিং থেকে প্রাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের আয়ের ওপর কর ধার্য করেছেন। তা ছাড়া অত্যন্ত সৃজনশীল ও কৌশলীভাবে আরও বেশ কিছু খাতের ওপর কর নির্ধারণের মাধ্যমে কর খাত সম্প্রসারণের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদার কাজ করার বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এ ব্যাপারে বাজেটে ভর্তুকিসহ তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে এবং দেশে দুর্নীতির প্রকোপ কমাতে এই সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বিত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যেই উপজেলা তথা গ্রামপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে কালো টাকার মালিকেরা এ ধরনের অর্থ আর পুঁজিবাজারে বা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করে বিনা প্রশ্নে পার পাবেন না। তবে ভৌত অবকাঠামো অর্থায়ন ফান্ডে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ, সেতু এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি নীতি-সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নতুন অর্থবছরের জন্য ছয় দশমিক সাত শতাংশে প্রাক্কলন এবং আগামী ২০১৩ সাল নাগাদ আট শতাংশে ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেছেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মতোই নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে জিডিপির পাঁচ শতাংশ। এই ঘাটতির দুই শতাংশ বৈদেশিক ঋণ-অর্থায়ন নিয়ে এবং বাকি তিন শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটানো হবে।
অর্থমন্ত্রী এবার বাজেটের সঙ্গে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের পথ নকশা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নয় হাজার ৪২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় সুনির্দিষ্ট করে দেখিয়েছেন। মূলত বেসরকারি প্রকল্পগুলো থেকেই বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
তবে এ বাজেটের চ্যালেঞ্জও অনেক। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি সমস্যা দূরীকরণ, বিনিয়োগে গতি ফিরিয়ে আনা, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান হারে প্রবেশমান শ্রমশক্তির জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আয় ও মানববৈষম্য ঘোচানো।
নতুন বাজেটকে বেশ ভালো মনে হলেও এটি একই সঙ্গে উচ্চাভিলাষীও বটে। এতে উন্নয়ন ব্যয় বা এডিপি প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং মোট ব্যয় ২১ শতাংশ বেড়েছে। সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকেই এই বাজেট দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এত বড় ব্যয়সংবলিত বাজেট বাস্তবায়ন করা কি সম্ভব? যদি এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে এটি বাস্তবায়নের প্রধান পদক্ষেপটা নেবেন কে? কারণ বাজেট বাস্তবায়নের সামর্থ্যের জন্য একদিকে সক্ষমতা, অন্যদিকে একসঙ্গে কাজ করাও অপরিহার্য। প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়ন প্রশাসন এবং জনগণ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা। জনপ্রশাসনের সামগ্রিক দক্ষতা ও সামর্থ্যের বিষয়টিও এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের উল্লিখিত একটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে। বইটি হলো, ল্যারি বসিডি এবং রামচরণ লিখিত এক্সিকিউশন: দি ডিসিপ্লিন অব গেটিং থিংস ডান। বইটির শিরোনামই যেন বাংলাদেশের আজকের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য বলে মনে হয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কথা অত্যন্ত সুন্দর বলেছেন যে ‘আমরা দারিদ্র্য মুক্তির ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী’। এ ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখতে হবে যে দারিদ্র্য বিতরণ করা সম্ভব নয়। বিতরণ করতে হবে বর্ধিত বা সংবর্ধিত সম্পদ। তার জন্য দক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অর্থনীতিতে সম্পদ সৃষ্টির পথকে প্রণোদিত করতে হবে। বিকাশের পথকে করতে হবে কণ্টকমুক্ত।
মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
No comments