জাপানি দেশপ্রেম by জাহিরুল ইসলাম
আমাদের বন্ধুদেশ জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। অবাক করা বিষয় হলো সেই দেশটিই এখন আমেরিকা এবং চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশের সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সাহায্যদাতা।
শুধু কি তাই? জাতিসংঘের মোট বার্ষিক বাজেটের শতকরা ১২.৫৩ ভাগ অর্থ সরবরাহকারী। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানের অর্থনীতি মূলত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল সেই ষাটের দশকে। এত অল্প সময়ের মধ্যে দেশটি কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তা নিয়ে ভাবতে গেলে বিস্মিতই হতে হয়। তাই অর্থনীতিবিদরা ওই সময়টাকে 'মিরাকল' হিসেবে আখ্যায়িত করা ছাড়া সম্ভবত যুতসই আর কোনো শব্দ খুঁজে পাননি।
সন্দেহ নেই ওই ঘুরে দাঁড়ানো যতটা না অলৌকিক তার চেয়ে বেশি ছিল জাপানিদের পরিশ্রম এবং দেশপ্রেমের ফলাফল। পরিশ্রম করে জাপানিরা তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তাদের অর্থনীতি। আর তার সঙ্গে ঘটেছিল দেশপ্রেমের সমন্বয়। দেশের প্রতি তাদের অপরিসীম ভালোবাসা শুধু সমৃদ্ধিই দেয়নি, সুখও দিয়েছে। বিশ্বশান্তি সূচকেও জাপানের অবস্থান তিন নম্বরে। তাই দেশপ্রেমের জন্য জাপানিরা অনুকরণীয় আদর্শ।
জাপানের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী আর তাদের দেশপ্রেম আগের মতোই এখনও অটুট রয়েছে। গত মার্চে ইতিহাসের ভয়াবহতম ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপান আবার ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে বিপর্যয়ের ফলে দেশটি মুখোমুখি হয় ত্রিমুখী সংকটের। শিল্প কারখানাগুলোতে দেখা দেয় বিদ্যুৎ সংকট। ব্যাহত হয় শিল্প উৎপাদন। কিন্তু শিল্প খাতই তো জাপানের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বছরে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা প্রয়োজন। বিদ্যুতের অভাবে অর্থনীতির মূল হাতিয়ার শিল্প খাত দুর্দশায় ভুগবে আর দেশপ্রেমিক জাপানিরা চুপচাপ বসে থাকবে তা কি হয়! সত্যিই তারা কেউ চুপ করে বসে থাকেনি। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এই গরমের মধ্যেও এসি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ৪১টি প্রদেশের নাগরিকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বপ্রণোদিত হয়ে এবং এ ঘোষণা ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে দেশপ্রেমের অনন্য নজির আরেকবার উপস্থাপন করল জাপানিরা।
স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা আমাদের অর্থনীতিকে তেমন বড়সড় একটা রূপ দিতে পারিনি শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে না পারার কারণে। বিদ্যুৎ সংকট শিল্প খাত পিছিয়ে পড়ার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সংকটের ফলে আমাদের কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হয়। আর লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা তো সারা বছরই সইতে হয়। প্রতিদিন আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় করি কিংবা অতিরিক্ত ব্যবহার করি, তা না করলে আমাদের ঘাটতি অনেকখানি মিটে যেত। শিল্প কারখানাগুলোতেও উৎপাদন বাড়ত। লোডশেডিংও কমানো যেতে পারত।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য মাস কয়েক আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি এনার্জি সেভিং বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এই এনার্জি সেভিং বাল্ব দিয়ে লাভ কী, যদি আমরা তা সময়মতো বন্ধ না করি? অথবা বাল্ব এনার্জি সেভিং হলেও যদি আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করি? দিন-রাত অপ্রয়োজনে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখার কিংবা বিপণি বিতানগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাল্ব জ্বালানোর উদাহরণ তো খোদ ঢাকা শহরেই অনেক রয়েছে। বিলাসিতা প্রমাণ করার জন্য অকারণে এসির ব্যবহারও চোখে পড়ে অহরহ।
দেশপ্রেমের অনন্য নজির উপস্থাপন করেই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। বিদ্যুতের অপচয় ও অতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করতে পারলে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী রূপ দেওয়া সম্ভব। দেশের জন্য কি আমরা এটুকু করতে পারি না? আমরা কি খুব প্রয়োজন ছাড়া এসি ব্যবহার না করতে কিংবা দরকার শেষ হলে বৈদ্যুতিক বাল্বগুলো নিভিয়ে দিতে পারি না? আমরা কি পারি না জাপানিদের দেশপ্রেমের অনুকরণ করতে?
zahirul.du@gmail.com
সন্দেহ নেই ওই ঘুরে দাঁড়ানো যতটা না অলৌকিক তার চেয়ে বেশি ছিল জাপানিদের পরিশ্রম এবং দেশপ্রেমের ফলাফল। পরিশ্রম করে জাপানিরা তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তাদের অর্থনীতি। আর তার সঙ্গে ঘটেছিল দেশপ্রেমের সমন্বয়। দেশের প্রতি তাদের অপরিসীম ভালোবাসা শুধু সমৃদ্ধিই দেয়নি, সুখও দিয়েছে। বিশ্বশান্তি সূচকেও জাপানের অবস্থান তিন নম্বরে। তাই দেশপ্রেমের জন্য জাপানিরা অনুকরণীয় আদর্শ।
জাপানের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী আর তাদের দেশপ্রেম আগের মতোই এখনও অটুট রয়েছে। গত মার্চে ইতিহাসের ভয়াবহতম ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপান আবার ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে বিপর্যয়ের ফলে দেশটি মুখোমুখি হয় ত্রিমুখী সংকটের। শিল্প কারখানাগুলোতে দেখা দেয় বিদ্যুৎ সংকট। ব্যাহত হয় শিল্প উৎপাদন। কিন্তু শিল্প খাতই তো জাপানের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বছরে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা প্রয়োজন। বিদ্যুতের অভাবে অর্থনীতির মূল হাতিয়ার শিল্প খাত দুর্দশায় ভুগবে আর দেশপ্রেমিক জাপানিরা চুপচাপ বসে থাকবে তা কি হয়! সত্যিই তারা কেউ চুপ করে বসে থাকেনি। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এই গরমের মধ্যেও এসি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ৪১টি প্রদেশের নাগরিকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বপ্রণোদিত হয়ে এবং এ ঘোষণা ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে দেশপ্রেমের অনন্য নজির আরেকবার উপস্থাপন করল জাপানিরা।
স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা আমাদের অর্থনীতিকে তেমন বড়সড় একটা রূপ দিতে পারিনি শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে না পারার কারণে। বিদ্যুৎ সংকট শিল্প খাত পিছিয়ে পড়ার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সংকটের ফলে আমাদের কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হয়। আর লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা তো সারা বছরই সইতে হয়। প্রতিদিন আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় করি কিংবা অতিরিক্ত ব্যবহার করি, তা না করলে আমাদের ঘাটতি অনেকখানি মিটে যেত। শিল্প কারখানাগুলোতেও উৎপাদন বাড়ত। লোডশেডিংও কমানো যেতে পারত।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য মাস কয়েক আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি এনার্জি সেভিং বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এই এনার্জি সেভিং বাল্ব দিয়ে লাভ কী, যদি আমরা তা সময়মতো বন্ধ না করি? অথবা বাল্ব এনার্জি সেভিং হলেও যদি আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করি? দিন-রাত অপ্রয়োজনে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখার কিংবা বিপণি বিতানগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাল্ব জ্বালানোর উদাহরণ তো খোদ ঢাকা শহরেই অনেক রয়েছে। বিলাসিতা প্রমাণ করার জন্য অকারণে এসির ব্যবহারও চোখে পড়ে অহরহ।
দেশপ্রেমের অনন্য নজির উপস্থাপন করেই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। বিদ্যুতের অপচয় ও অতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করতে পারলে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী রূপ দেওয়া সম্ভব। দেশের জন্য কি আমরা এটুকু করতে পারি না? আমরা কি খুব প্রয়োজন ছাড়া এসি ব্যবহার না করতে কিংবা দরকার শেষ হলে বৈদ্যুতিক বাল্বগুলো নিভিয়ে দিতে পারি না? আমরা কি পারি না জাপানিদের দেশপ্রেমের অনুকরণ করতে?
zahirul.du@gmail.com
No comments