রুমানা মঞ্জুর-এ দৃষ্টিহীনতা খুলুক অন্যদের দৃষ্টি

কবি বলেছিলেন, 'অন্ধজনে দেহো আলো/মৃতজনে দেহো প্রাণ'। এই সুমহান আকুতি সত্ত্বেও এ সত্য তো আমাদের জানা যে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে চক্ষুদান করে অপরের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য থাকলেও অন্যের জীবনে আলো জ্বালাবার সাধ্য বহু মানুষের নেই। আর মৃতজনে প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা তো কারও নেই।


তবে কারণে-অকারণে প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের আছে। দৃষ্টি জোগাবার সীমিত সাধ্য মানুষ অর্জন করেছে বটে, কিন্তু দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা তার অনেক। রুমানা মঞ্জুরের স্বামীও স্ত্রীর ওপর হামলা করেছেন। তাকে ক্ষতবিক্ষত করে চোখে আঘাত করে নিজের নৃশংসতা, অমানবিকতা ও হৃদয়হীনতার স্বাক্ষর এঁকে দিয়েছেন। তার আক্রমণে আহত রুমানা উন্নততর চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে রুমানার। চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অভাবিত কোনো ঘটনা না ঘটলে অন্ধ হয়েই থাকতে হবে রুমানাকে। অন্ধ, দৃষ্টিহীন মানুষের কান্না কেমন? দৃষ্টিহীন চোখে অশ্রুপাত করে রুমানা বলছেন, তিনি দেশে ফিরেছিলেন ছোট কন্যাকে দেখার জন্য। দেখতে পেলেন না ভালোভাবে। শুধু কন্যাকেই যে দেখতে পেলেন না তা নয়, এখন তার দৃষ্টি এই সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখতে পাবে না। একজন শিক্ষকের মূল্যবান পাঠ থেকে বঞ্চিত হবে অনাগত শিক্ষার্থীরাও। জীবনে অনেক সম্ভাবনা ও আশার সমাধিও হবে দৃষ্টিহীন চোখের জলে। রুমানার নির্যাতিত হওয়ার ঘটনায় সকলে স্তম্ভিত হয়েছেন। উচ্চশিক্ষিত পরিবারে নির্যাতনের এমন নৃশংসতায় শিউরে উঠেছেন। কিন্তু এমন নৃশংসতার পরও কি সমাজে সেই প্রত্যাশিত সচেতনতা আসবে? আবারও কি কোনো রুমানাকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে না? আমরা মনে করি, রুমানার দৃষ্টিহীন চোখ সকলের চোখের দৃষ্টি খুলে দিক। নির্যাতন বন্ধে সকলে সচেতন হয়ে উঠুক। আর রুমানা মঞ্জুরের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার জন্য চিকিৎসকদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি, নির্যাতক স্বামীটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
 

No comments

Powered by Blogger.