এতটুকু বাসার স্বপ্ন-সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি

গালভরা নাম, বাহারি বিজ্ঞাপন, লোভনীয় অফার ইত্যাদি নানা বাহানায় এতটুকু বাসার স্বপ্নে বিভোর ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে আবাসন কোম্পানিগুলোর জুড়ি মেলা ভার। কিছু রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ঠকান, দিনের পর দিন ঘুরিয়ে পথে বসান_ এও কালক্রমে বিজ্ঞাপনের বিষয় হয়ে উঠেছে।


পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়_ নিজেদের অপকর্ম, প্রতারণা আর অপরাধ বিষয়ে তারা যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। ক্রেতাদের আস্থা যে কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে তাও তাদের জানা। কিন্তু থেমে নেই ব্যবসা এবং প্রতারণাও। প্রতিনিয়ত বাহারি বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্রেতা আকর্ষণের অন্যতম সূত্র লোভ। যেনতেন প্রকারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে। আর কে না চায় উন্নত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নগরের স্থায়ী বাসিন্দা হতে? কর্মক্ষেত্র হিসেবে একবার যারা ঢাকা শহরকে পেয়েছেন তাদের মধ্য থেকে খুব কম মানুষই এ শহর ছেড়ে যেতে চান। আর শহরে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে সর্বস্ব পণ করতেও পিছপা হন না তারা। ক্রেতারা জানেন, তারা যে জমি কেনার জন্য অগ্রিম দিলেন তা এখনও কৃষিজমি কিংবা জলাভূমি, তবু কিস্তির টাকা দিয়ে চলেছেন চোখ বুজে। ক্রেতারা জানেন, যে প্লটের জন্য তিনি টাকা দিচ্ছেন তা এখনও বরাদ্দ হয়নি তার নামে, তবু তিনি প্রচণ্ড আশাবাদী। প্রতিবছর বাড়ছে বাসা ভাড়া, লাগামহীন বাসা ভাড়ার খপ্পর থেকে বের হতে চাকরিজীবী-ব্যবসায়ীরা জুয়াখেলার মতো করে প্লট ও ফ্ল্যাটে বুকিং দিচ্ছেন। সাধারণের এ মনোভাবের পেছনে আছে টিকে থাকার বাসনা আর রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীদের আকাঙ্ক্ষার পেছনে আছে মানুষের স্বপ্ন ও আশাকে কাজে লাগিয়ে লাগামহীন মুনাফা করা। কার্যত এই লেনদেনে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি নেই। বহু মানুষের রক্ত পানি করা টাকা গচ্চা গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আসে না। রিয়েল স্টেট কোম্পানিগুলো অবৈধভাবে কোনো নির্মাণযজ্ঞ চালু করলে দ্রুত উদ্যোগ আসে না সরকারের দায়িত্বশীল দফতরগুলো থেকে। বাড়ি ভাড়া, ফ্ল্যাট বা প্লটের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। উন্নত দেশগুলোতে সরকারের উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়ার বহু উদ্যোগ থাকলেও বাংলাদেশে তেমন উদাহরণ সামান্য। এই সুযোগে গড়ে উঠছে বহু প্রতারক কোম্পানি। প্রতারকদের তালিকাভুক্ত হতে চলেছে পিংক সিটি প্রকল্পও। গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর এখন তাদের দেখা মিলছে না। পিংক সিটির মালিকানা নিয়ে দুই কোম্পানির বিরোধের মধ্যে কার্যত ক্রেতাদের আশার সমাধি ঘটতে চলেছে। এ সংক্রান্ত খবরে এটি স্পষ্ট যে, পিংক সিটির ক্রেতাদের প্লট ও বাড়ির মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পিংক সিটি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা কার্যত চোখের আড়ালে চলে গেছেন। সামনে এসেছে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, জমি তাদের। সে জমির ওপর অবৈধ পন্থায় প্রকল্প তৈরি করেছে পিংক সিটি। দুই কোম্পানির ঠেলাঠেলি কবে নিষ্পত্তি হবে তা কেউ বলতে পারে না। ক্রেতারা মনে করেন, এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। ক্রেতারা সর্বস্ব বাজি রেখে যে আশার স্বপ্ন বুনেছেন তা এভাবে শেষ হতে পারে না। তাই সরকারের উচিত এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। ক্রেতাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই হতে পারে। মালিকে মালিকে যুদ্ধের খেসারত কেন সাধারণ নাগরিকদের বহন করতে হবে। এ সমস্যার পাশাপাশি অন্য আবাসন প্রকল্পগুলোতে এ ধরনের সমস্যা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার দায়িত্বও সরকারের ওপর বর্তায়।
 

No comments

Powered by Blogger.