বিমানবালাদের পোশাক কী হবে? by আনোয়ারা সৈয়দ হক
আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক বেসরকারি বিমান সংস্থা অভ্যন্তরীণ বিমান চালু করেছে; এবং তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিমানবালাদের পোশাক ঠিক করেছে। এই পোশাক ঠিক করাটা একটা সাধারণ ব্যাপার নয়, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সাধারণ। এই পোশাকের ওপরই একটি দেশের নিজস্ব জাতীয় পরিচয় নির্ভর করে।
আমাদের দেশের মেয়েদের জাতীয় পোশাক কী? আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের মেয়েদের জাতীয় পোশাক হচ্ছে শাড়ি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের ব্যক্তিত্বহীন মহিলারা, যাদের বয়স ৫০-এর কোঠায়, তারা সবাই সালোয়ার-কামিজে নিজেদের আচ্ছাদন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। এই পরিবর্তন খুব সহজেই এ দেশে চালু হয়েছে। কারণ ব্যক্তিত্বহীন মহিলারা প্রায়ই নকলনবিস হন। তাঁরা টেলিভিশনে ক্রমাগত হিন্দি সিনেমা দেখতে দেখতে নিজেদের অজান্তেই হিন্দি কালচারের ভক্ত হয়ে পড়েছেন বহু বছর ধরে। তাঁদের এই বিভ্রান্তি থেকে কেউ তাঁদের রক্ষা করে, এমন শক্তি এ দেশের কারো হাতে নেই। যেহেতু বুড়ো মহিলাদের সালোয়ার পরতে একটু ইতস্তত লাগে, সেহেতু তাঁরা হঠাৎ করে ধর্মভক্ত হয়ে পড়েছেন। শাড়ি পরলে তাঁদের পেট অনাবৃত থাকে এবং এতে নাকি ধর্ম পালনে বাধা সৃষ্টি হয় এবং আব্রুর প্রশ্ন আসে_এসব অজুহাতে তাঁরা ক্রমাগতভাবে পরে চলেছেন বাহারি সব সালোয়ার-কামিজ। আর যে পেট ঢাকার জন্য এত আয়োজন, সেই পেট যাতে কোমরের ওপর দিয়ে দেখা যায়, সে জন্য দুই দিকের কামিজ পেট পর্যন্ত চিরে রেখেছেন। অর্থাৎ নারী আত্মপ্রবঞ্চনায় সবার ওপরে স্থান করে নিতে পারদর্শী।
এত সব কথা বলার জন্য আমরা বসিনি। যে জন্য বসেছি, সেটা হলো_বিমানবালাদের পোশাক। বেসরকারি বিমানবালাদের পোশাক কী হবে, তা সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা প্রথম থেকেই খুব জরুরি। কারণ এ দেশে শুধু আমরাই অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ করি না; বহু বিদেশিও ভ্রমণ করেন। একটি বিমান কম্পানিকে দেখছি, তারা তাদের বিমানবালাদের পোশাক রাতারাতি পাল্টে ফেলেছে; দেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ারও হয়তো চেষ্টা করেনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা যেমন দেশ-বিদেশের কোনো অনুষ্ঠানে অন্য কোনো পোশাক পরে যান না, তেমনি দেশের জাতীয় ঐতিহ্য শাড়িকে বাতিল করে হঠাৎ তাদের বিদেশি পোশাক পরিয়ে বিমানবালাদের গ্ল্যামারাস করে তোলার প্রচেষ্টাকে আমরা নিন্দার চোখে দেখি। বিশেষ করে বিশ্বে যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার চেষ্টা চলছে, যেখানে বিমানবালাদের চাকরির বয়স বাড়ানো হয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে বিমানবালাদের এভাবে শারীরিক দিক দিয়ে ঝলমলে করে তোলার প্রচেষ্টা খুবই খারাপ।
এই বিমান কম্পানিটি খুব চতুরতার সঙ্গে প্রথমে তাদের আকাশে উড্ডীন বিমানবালাদের পোশাক পাল্টে দেখল, কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় কি না। বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যই আছে, কিন্তু সেটা তারা হয়তো কানে তোলে না। তারপর এখন দেখছি, তারা হঠাৎ করে গ্রাউন্ড বিমানবালাদের জার্সি পরিয়ে প্যাসেঞ্জার ডিল করতে লাগিয়ে দিয়েছে। এই মনোভাব কতখানি বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজ দেশকে, নিজ দেশের বিমানবালাদের জাতীয় পোশাকে আবৃত করার গুরুত্ব যে কতখানি, তা তাদের খেয়াল হয় না। আমরা ক্ষুদ্র দেশ বলেই নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিমানের বিমানবালাদের পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা থেকে বিরত থেকে বরং এসব বেসরকারি বিমান সংস্থা সঠিকভাবে টাইম শিডিউল বজায় রাখলে তাদের প্যাসেঞ্জারের কখনো অভাব হবে না। কিন্তু কখনো বা কোনো দিনও এসব বিমান সময়মাফিক চলে না; নিজেদের ইচ্ছামতো চলে। আর তাই নিজেদের গাফিলতি ঢেকে রাখতে তারা অন্যভাবে পুরুষ প্যাসেঞ্জার ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা খুবই লজ্জার কথা।
দেশের একজন সাধারণ নাগরিকেরও দায়িত্ব আছে নিজ দেশকে সবার সামনে, বিশেষ করে বিদেশের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার। দেশের নাগরিকরা এ কাজটি না করলে বাইরের কোনো দেশ এসে কাজটি করে দিয়ে যাবে না। দেশের মানুষের মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে রাখাটাও বড় বড় কম্পানির নিজ নিজ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এগুলো কেউ কাউকে শেখাতে পারে না; এগুলো উপলব্ধির ব্যাপার। বিমান কম্পানিগুলোকে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন নিজ দেশের সভ্যতা এবং কৃষ্টিকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। নইলে আমাদের দেশটি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির গহ্বরে তলিয়ে যাবে। তাদের বিমানবালারা অফ-ডিউটি আওয়ারে নেংটি পরে ঘুরে বেড়াক, সেটা তাদের রুচি এবং ইচ্ছার ব্যাপার। কিন্তু ডিউটি আওয়ারে যেন তাঁরা নিজ দেশের কথাটা একবার ভাবেন। বিমানবালারা হয়তো নিজেরাও জানেন না, শাড়ি পরিহিত অবস্থায় তাদের কতটা সুন্দর দেখায়! বিদেশিরা কিভাবে এই পোশাকটিকে প্রশংসা করে এবং পোশাকটি পরার ধরন দেখে বিস্মিত হয়, এ ব্যাপারে তাদের হয়তো ধারণাও নেই। এ রকম একটি জাতীয় পোশাক শুধু পুরুষ বসদের কথায় এবং বেশি পয়সার লোভে বিসর্জন দেওয়াটা কি ঠিক? মেয়েদেরই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। নিজ দেশের সংস্কৃতিকে এভাবে বিসর্জন দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
এত সব কথা বলার জন্য আমরা বসিনি। যে জন্য বসেছি, সেটা হলো_বিমানবালাদের পোশাক। বেসরকারি বিমানবালাদের পোশাক কী হবে, তা সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা প্রথম থেকেই খুব জরুরি। কারণ এ দেশে শুধু আমরাই অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ করি না; বহু বিদেশিও ভ্রমণ করেন। একটি বিমান কম্পানিকে দেখছি, তারা তাদের বিমানবালাদের পোশাক রাতারাতি পাল্টে ফেলেছে; দেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ারও হয়তো চেষ্টা করেনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা যেমন দেশ-বিদেশের কোনো অনুষ্ঠানে অন্য কোনো পোশাক পরে যান না, তেমনি দেশের জাতীয় ঐতিহ্য শাড়িকে বাতিল করে হঠাৎ তাদের বিদেশি পোশাক পরিয়ে বিমানবালাদের গ্ল্যামারাস করে তোলার প্রচেষ্টাকে আমরা নিন্দার চোখে দেখি। বিশেষ করে বিশ্বে যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার চেষ্টা চলছে, যেখানে বিমানবালাদের চাকরির বয়স বাড়ানো হয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে বিমানবালাদের এভাবে শারীরিক দিক দিয়ে ঝলমলে করে তোলার প্রচেষ্টা খুবই খারাপ।
এই বিমান কম্পানিটি খুব চতুরতার সঙ্গে প্রথমে তাদের আকাশে উড্ডীন বিমানবালাদের পোশাক পাল্টে দেখল, কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় কি না। বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যই আছে, কিন্তু সেটা তারা হয়তো কানে তোলে না। তারপর এখন দেখছি, তারা হঠাৎ করে গ্রাউন্ড বিমানবালাদের জার্সি পরিয়ে প্যাসেঞ্জার ডিল করতে লাগিয়ে দিয়েছে। এই মনোভাব কতখানি বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজ দেশকে, নিজ দেশের বিমানবালাদের জাতীয় পোশাকে আবৃত করার গুরুত্ব যে কতখানি, তা তাদের খেয়াল হয় না। আমরা ক্ষুদ্র দেশ বলেই নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিমানের বিমানবালাদের পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা থেকে বিরত থেকে বরং এসব বেসরকারি বিমান সংস্থা সঠিকভাবে টাইম শিডিউল বজায় রাখলে তাদের প্যাসেঞ্জারের কখনো অভাব হবে না। কিন্তু কখনো বা কোনো দিনও এসব বিমান সময়মাফিক চলে না; নিজেদের ইচ্ছামতো চলে। আর তাই নিজেদের গাফিলতি ঢেকে রাখতে তারা অন্যভাবে পুরুষ প্যাসেঞ্জার ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা খুবই লজ্জার কথা।
দেশের একজন সাধারণ নাগরিকেরও দায়িত্ব আছে নিজ দেশকে সবার সামনে, বিশেষ করে বিদেশের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার। দেশের নাগরিকরা এ কাজটি না করলে বাইরের কোনো দেশ এসে কাজটি করে দিয়ে যাবে না। দেশের মানুষের মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে রাখাটাও বড় বড় কম্পানির নিজ নিজ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এগুলো কেউ কাউকে শেখাতে পারে না; এগুলো উপলব্ধির ব্যাপার। বিমান কম্পানিগুলোকে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন নিজ দেশের সভ্যতা এবং কৃষ্টিকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। নইলে আমাদের দেশটি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির গহ্বরে তলিয়ে যাবে। তাদের বিমানবালারা অফ-ডিউটি আওয়ারে নেংটি পরে ঘুরে বেড়াক, সেটা তাদের রুচি এবং ইচ্ছার ব্যাপার। কিন্তু ডিউটি আওয়ারে যেন তাঁরা নিজ দেশের কথাটা একবার ভাবেন। বিমানবালারা হয়তো নিজেরাও জানেন না, শাড়ি পরিহিত অবস্থায় তাদের কতটা সুন্দর দেখায়! বিদেশিরা কিভাবে এই পোশাকটিকে প্রশংসা করে এবং পোশাকটি পরার ধরন দেখে বিস্মিত হয়, এ ব্যাপারে তাদের হয়তো ধারণাও নেই। এ রকম একটি জাতীয় পোশাক শুধু পুরুষ বসদের কথায় এবং বেশি পয়সার লোভে বিসর্জন দেওয়াটা কি ঠিক? মেয়েদেরই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। নিজ দেশের সংস্কৃতিকে এভাবে বিসর্জন দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
No comments