এক বছর পরও বিপদ কাটেনি, কার্যকর হয়নি সুপারিশ-পাহাড়ে মৃত্যুফাঁদ

২০০৮ সালের বর্ষায় চট্টগ্রামে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল ১২৮ জন মানবসন্তানের। ঠিক গত বছর আবারও ভূমিধসে মারা গিয়েছিল ১৭ জন। এ বছর সেই পাহাড়ের নিচে আবার বসতি তৈরি হচ্ছে। এই মৃত্যুফাঁদ তৈরির আয়োজন ঠেকানোর কেউ নেই। কী বিচিত্র আমাদের প্রশাসন!


২০০৮ সালের ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে পাহাড়ের নিচে ও ওপরে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করা ৬০ হাজার মানুষকে দুই মাসের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। চার বছর গত হলেও কোনো ফল ফলেনি। এ রকম অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো জানাচ্ছে চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে ফের মৃত্যুর হাতছানির কথা। আমরা শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন।
আশা করা হয়েছিল, এত এত মানুষের করুণ মৃত্যু, শত শত পরিবারের বিপর্যয় এবং জাতীয় শোকের পটভূমিতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ হবে, দোষী ব্যক্তিদের আইনানুগ শাস্তি হবে এবং একটি কার্যকর পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণীত হবে। সে সময় পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ১০৮টি মামলা করেছিল। সেগুলোরও নিষ্পত্তি হয়নি। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোও বাস্তবায়িত হয়নি। যে ছয়টি সরকারি সংস্থাকে সে সময় ওই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছিল, তার মধ্যে পড়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম রেলওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ। এর মধ্যে মুখ্যভাবে চিহ্নিত করা যায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে। এর পরও গত বছর পাহাড়ধসে মানুষ মারা গেল কেবল এসব সংস্থার অবহেলার জন্য। এগুলোকে তাই দুর্ঘটনা বলার উপায় নেই।
এদের ওপর ভরসা করার অর্থ দাঁড়াল, শেয়ালের কাছে মুরগি গচ্ছিত রাখা। আজও যখন পাহাড়ের গায়ে ও নিচে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ অনন্যোপায় হয়ে মৃত্যুফাঁদে বসবাস করছে, তখন এ ছাড়া আর কী বলা যায়? এসব মানুষ না হয় উপায়হীন, কিন্তু সরকার-প্রশাসনের হাত-পা বেঁধে রেখেছে কে? রেলওয়ের জমি, অথচ সেখানে ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছে অন্য লোক! প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া এটা কীভাবে সম্ভব?

No comments

Powered by Blogger.